ভারতে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ মিলিয়নের বেশি, রিপোর্ট দিল আইসিএমআর

- আপডেট : ১২ জুন ২০২৩, সোমবার
- / 14
বিশেষ প্রতিবেদন: ডায়াবেটিস একধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। ডায়াবেটিস হল শরীরের এমন একটি গুরুতর অবস্থা, যখন আমাদের শরীর নিজে থেকে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা তৈরি হওয়া ইনসুলিন দক্ষতার সঙ্গে (কার্যকরভাবে) ব্যবহার করতে পারে না। এর ফলে রক্তে শর্করার বা গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস অশনাক্ত থাকলে বা চিকিৎসা না হলে কিডনি, লিভার, চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সঙ্গে শরীরের ত্বক নষ্ট হয়ে যায়, চুল পড়ে যায়। শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও ক্ষতির শিকার হতে পারে।
ভারতে প্রায় ৮০০, ২৪ কোটির বেশি মানুষ ডায়াবেটিসের শিকার! আইসিএমআর-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০০ মিলিয়ন অর্থাৎ সংখ্যাটি হচ্ছে ৮০০, ২৪ কোটি ৪৫ লক্ষ ৫০ হাজার। যা সত্যিই মারাত্মক।
দেশের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি গোয়াতে। ভারতে মোট জনসংখ্যার ১১ .৪ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভুগছে এবং ১৫.৩ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে। গোয়া (২৬.০৪%), পদুচেরি (২৬.০৩%) এবং কেরলে (২৫.০৫%) ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। যেখানে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং বিহার হল সবচেয়ে কম প্রকোপ সহ রাজ্য। কেরল, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, পঞ্জাব এবং চণ্ডীগড়ে উচ্চ প্রভাব লক্ষণীয়।
সাধারণত চার ধরনের ডায়াবেটিসের কথা জানা যায়। টাইপ-১, টাইপ-২, জেস্টেশনাল এবং অন্যান্য। টাইপ-১ মানে হল, যেভাবেই হোক, যাঁদের শরীরে ইনসুলিন নষ্ট হয়ে গেছে, তাঁদের যদি আলাদা করে ইনসুলিন দেওয়া না হয়, তাহলে তাঁরা মারা যেতে পারেন। আমরা যখন বাইরের নানা ধরনের খাবার খাই, ফাস্ট ফুড খাই, তখন শরীরে একধরনের পরিবর্তন আসে। দেখা যায়, শরীরে ইনসুলিন আছে, কিন্তু সেটা কাজ করতে পারছে না। তখন আমরা যে খাবারই খাই, সেটার গ্লুকোজ জমে যায়। এটা টাইপ-২ ডায়াবেটিস।
আইসিএমআর-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৩৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১৫. ৩ শতাংশ প্রিডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ৩১৫ মিলিয়নের বেশি লোকের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে।
ভারতে ২০১৯-এ ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০ মিলিয়ন, সেখানে ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১ মিলিয়নে।
মূলত এই গবেষণাটি আইসিএমআর(ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ-ইন্ডিয়া) ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের মিলিত যোগসাজশে ১৫ বছর ধরে গবেষণার ফল।
মাদ্রাজ ডায়াবেটিস রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (এমডিআরএফ) সভাপতি ডা. আরএম অঞ্জনা জানিয়েছেন, এটা স্পষ্ট যে দেশে মেটাবলিক হেলথ রিপোর্ট কার্ড দেখে এটি বোঝা যায়, দেশে সংক্রামিত নয় এমন রোগের সংখ্যা লক্ষণীয় ভাবে বৃদ্ধি হয়েছে। ক্রমশই ভারতে এই অসংক্রামক রোগের সংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা আগামীদিনে বিপদের ঘণ্টি বাজাচ্ছে। অসংক্রামক রোগের মধ্যে রয়েছে হাইপারটেনশন, স্থূলতা, পেটের মেদ বৃদ্ধি, হাইপার কোলেস্টরল প্রভৃতি।
২০০৮ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে ২০২০’র ১৭ ডিসেম্বর, এর মধ্যে আইসিএমআর-এর গবেষণায় মোট ১,১৩,০৪৩ জন (৭৯, ৫০৬ গ্রামীণ এলাকা থেকে এবং ৩৩, ৫৩৭ জন শহরাঞ্চল থেকে) অংশগ্রহণ করেছিলেন। গবেষণায়ন উঠে এসেছে প্রিডায়াবেটিস ছাড়াও অসংক্রামক রোগ গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি। রাজ্যে, ডায়াবেটিসের সঙ্গে প্রি-ডায়াবেটিসের অনুপাত ছিল ১-এর কম। গবেষকরা বলছেন, ভারতে ডায়াবেটিসের মতো সংক্রামিত নয়, এই ধরনের রোগের সংখ্যা বাড়ছে। যদিও ডায়াবেটিস একটি মহামারি তবুও উন্নত দেশগুলিতে স্থিতিশীল থাকলেও অন্যান্য রাজ্যে এটি লক্ষণীয় আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গবেষক, বর্ষীয়ান লেখক ডক্টর ভি মোহনের মতে, ভারতের রাজ্যসরকারগুলি, যারা প্রাথমিকভাবে তাদের নিজ নিজ অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের দায়িত্বে রয়েছে, তারা রাজ্যভিত্তিক অসংক্রামিত রোগের বিস্তারিত একটি তালিকা প্রস্তুত করতে পারে।
এই ধরনের তালিকা প্রস্তুত থাকলে, আগামীদিনে রাজ্যগুলি ডায়াবেটিস-সহ সংক্রামিত নয় এমন রোগগুলির সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবে।