১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দীর্ঘকালের সম্প্রীতিতে ছেদ, ত্রিপুরার গ্রামে জনজাতি মুসলিম সংঘর্ষ, জখম ২২

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, সোমবার
  • / 20

বিশেষ প্রতিবেদক:  দীর্ঘকাল ধরে মুসলিম ও জনজাতির লোকেরা পাশাপাশি একসঙ্গে সম্প্রীতির আবহাওয়ায় শান্তিতে বসবাস করে আসছিলেন। বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় সেই সম্প্রীতিকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। জমি সংক্রান্ত বিবাদকে কেন্দ্র করে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে উদয়পুর মহকুমার কিলা হানাধীন রাইয়াবাড়ি সংলগ্ন এলাকা। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে চার পুলিশ সহ গুরুতর জখম ও আহত ২২। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া বেশ কয়েকটি মুসলিমদের বাড়ি ঘর ভেঙে বা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। চার পুলিশ কর্মী ছাড়াও উভয়পক্ষের ১৮ জন মহিলা ও পুরুষ রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

 

সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমিতে দীর্ঘকাল ধরে পাশাপাশি বসবাস করে আসছেন জনজাতির মানুষ ও মুসলিমরা। কিল্লা থানার রায়বাড়ি এলাকায় কখনওই জায়গা-জমি নিয়ে বা অন্য কোনও কারণে সাম্প্রদায়িক বিবাদ ছিল না। ২০১৮ সালে আগে পর্যন্ত পূর্ব গোকুলপুর আম পঞ্চায়েত ও রাইয়াবাড়ি এডিসি ভিলেজের সংযোগস্থলে একটি জমি ছিল সরকারি সংস্থা জেএফএমসি-র তত্ত্বাবধানে। সেই কমিটিতে মুসলিম ও উপজাতি প্রতিনিধিরা সম্মিলিতভাবে মেম্বার ছিলেন। কিন্তু রাজ্যে বিজেপি শাসন ক্ষমতায় আসার পর সেই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়।

 

এরপর উভয়গোষ্ঠীর লোকেরা জমিটি তাদের নিজেদের বলে দাবি করছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিজেপির জনজাতি সেলের নেতা রামপদ জমাতিয়া বিধায়ক হওয়ার পর বেশ কয়েক দফায় জনজাতির লোকদের জমি দখলে উসকানি দিয়েছেন। এছাড়া তিনিই নাকি উত্তেজনা সৃষ্টিতে মদদ দিয়েছেন। লক্ষ্য কমিটি দখল করে সেখান থেকে মুসলিমদের উচ্ছেদ করা। আপাতত বিধায়কের লক্ষ্য মুসলিম ও জনজাতির লোকদের মধ্যে এক্য নষ্ট করে বিভাজন গড়ে তোলা।

 

আগে কয়েক দফায় পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাসে বিবাদ প্রশমিত হলেও কোনওভাবেই তার স্থায়ী সমাধান হচ্ছিল না। অভিযোগ, মন্ত্রী এবং শাসকদলের হস্তক্ষেপে প্রশাসনও এই বিতর্কের মীমাংসা না করে সময় নষ্ট করছিল। এই অচলাবস্থার মধ্যেই রবিবার দুপুরে পুনরায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় কিছু মানুষের অভিযোগ, বিজেপির যুব মোর্চার দুই নেতা ধারাল অস্ত্রশস্ত্র, গুলতি নিয়ে হামলা চালায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের বাড়িঘরে।

 

রক্তাক্ত হন মহিলা সহ প্রায় দশজন। অপরদিকে মুসলিমদের পালটা আক্রমণে ৮ জন উপজাতি মহিলা পুরুষ জখম হন। উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছালেও দীর্ঘ সময় পুলিশের দেখা মেলেনি। বেশ খানিকক্ষণ পর ছুটে আসেন কিল্লা থানার ওসি-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। উত্তেজিত জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। অফিসার সহ ৪ জন পুলিশকর্মী জখম হন। গোমতি জেলা হাসপাতালে আহত ও জখমদের চিকিৎসা চলছে। কয়েকজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাদের জিবিপি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে গোটা এলাকায় থমথমে পরিবেশ। মোতায়েন করা হয়েছে আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশ। দীর্ঘকাল ধরে শান্তিতে বসবাস করে আসা জনজাতি ও মুসলিমদের মধ্যে বিরোধ বাঁধানোর পেছনে উঠে আসছে রাজ্যের মন্ত্রী রামপদ জমাতিয়া এবং স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীদের নাম।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

দীর্ঘকালের সম্প্রীতিতে ছেদ, ত্রিপুরার গ্রামে জনজাতি মুসলিম সংঘর্ষ, জখম ২২

আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, সোমবার

বিশেষ প্রতিবেদক:  দীর্ঘকাল ধরে মুসলিম ও জনজাতির লোকেরা পাশাপাশি একসঙ্গে সম্প্রীতির আবহাওয়ায় শান্তিতে বসবাস করে আসছিলেন। বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় সেই সম্প্রীতিকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। জমি সংক্রান্ত বিবাদকে কেন্দ্র করে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে উদয়পুর মহকুমার কিলা হানাধীন রাইয়াবাড়ি সংলগ্ন এলাকা। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে চার পুলিশ সহ গুরুতর জখম ও আহত ২২। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া বেশ কয়েকটি মুসলিমদের বাড়ি ঘর ভেঙে বা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। চার পুলিশ কর্মী ছাড়াও উভয়পক্ষের ১৮ জন মহিলা ও পুরুষ রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

 

সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমিতে দীর্ঘকাল ধরে পাশাপাশি বসবাস করে আসছেন জনজাতির মানুষ ও মুসলিমরা। কিল্লা থানার রায়বাড়ি এলাকায় কখনওই জায়গা-জমি নিয়ে বা অন্য কোনও কারণে সাম্প্রদায়িক বিবাদ ছিল না। ২০১৮ সালে আগে পর্যন্ত পূর্ব গোকুলপুর আম পঞ্চায়েত ও রাইয়াবাড়ি এডিসি ভিলেজের সংযোগস্থলে একটি জমি ছিল সরকারি সংস্থা জেএফএমসি-র তত্ত্বাবধানে। সেই কমিটিতে মুসলিম ও উপজাতি প্রতিনিধিরা সম্মিলিতভাবে মেম্বার ছিলেন। কিন্তু রাজ্যে বিজেপি শাসন ক্ষমতায় আসার পর সেই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়।

 

এরপর উভয়গোষ্ঠীর লোকেরা জমিটি তাদের নিজেদের বলে দাবি করছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিজেপির জনজাতি সেলের নেতা রামপদ জমাতিয়া বিধায়ক হওয়ার পর বেশ কয়েক দফায় জনজাতির লোকদের জমি দখলে উসকানি দিয়েছেন। এছাড়া তিনিই নাকি উত্তেজনা সৃষ্টিতে মদদ দিয়েছেন। লক্ষ্য কমিটি দখল করে সেখান থেকে মুসলিমদের উচ্ছেদ করা। আপাতত বিধায়কের লক্ষ্য মুসলিম ও জনজাতির লোকদের মধ্যে এক্য নষ্ট করে বিভাজন গড়ে তোলা।

 

আগে কয়েক দফায় পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাসে বিবাদ প্রশমিত হলেও কোনওভাবেই তার স্থায়ী সমাধান হচ্ছিল না। অভিযোগ, মন্ত্রী এবং শাসকদলের হস্তক্ষেপে প্রশাসনও এই বিতর্কের মীমাংসা না করে সময় নষ্ট করছিল। এই অচলাবস্থার মধ্যেই রবিবার দুপুরে পুনরায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় কিছু মানুষের অভিযোগ, বিজেপির যুব মোর্চার দুই নেতা ধারাল অস্ত্রশস্ত্র, গুলতি নিয়ে হামলা চালায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের বাড়িঘরে।

 

রক্তাক্ত হন মহিলা সহ প্রায় দশজন। অপরদিকে মুসলিমদের পালটা আক্রমণে ৮ জন উপজাতি মহিলা পুরুষ জখম হন। উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছালেও দীর্ঘ সময় পুলিশের দেখা মেলেনি। বেশ খানিকক্ষণ পর ছুটে আসেন কিল্লা থানার ওসি-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। উত্তেজিত জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। অফিসার সহ ৪ জন পুলিশকর্মী জখম হন। গোমতি জেলা হাসপাতালে আহত ও জখমদের চিকিৎসা চলছে। কয়েকজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাদের জিবিপি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে গোটা এলাকায় থমথমে পরিবেশ। মোতায়েন করা হয়েছে আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশ। দীর্ঘকাল ধরে শান্তিতে বসবাস করে আসা জনজাতি ও মুসলিমদের মধ্যে বিরোধ বাঁধানোর পেছনে উঠে আসছে রাজ্যের মন্ত্রী রামপদ জমাতিয়া এবং স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীদের নাম।