ব্যর্থতা স্বীকার করে প্রথম সামরিক রিপোর্ট প্রকাশ ইসরাইলের

- আপডেট : ১ মার্চ ২০২৫, শনিবার
- / 31
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ইসরাইলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলা প্রতিরোধে ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থতা’ স্বীকার করেছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ হামলায় শত শত ইসরাইলি নিহত হয় এবং গাজায় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা হয়, যা প্রায় দেড় বছর ধরে চলে। এতে কমপক্ষে ৪৮ হাজার ফিলিস্তিনি এবং কয়েকশ ইসরাইলি সেনা নিহত হন।
১৯ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রায় ৫ হাজার বন্দুকধারী ইসরায়েলে আক্রমণ করলে প্রায় ১ হাজার ২০০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ওই সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।কোনো নাটকীয়তা নেই। তবে সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্তগুলো দেখে এখনও অবাক লাগে যে, তারা কীভাবে হামাসের উদ্দেশ্যগুলো ভুলভাবে মূল্যায়ন করেছে এবং তাদের ক্ষমতাগুলোকে অবমূল্যায়ন করেছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, হামাসের আক্রমণের সময় তাদের ভুলগুলোর আনুষ্ঠানিক বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রথম তারা এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করল।
প্রতিবেদনে উপসংহারে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে’।
১৯ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রায় ৫ হাজার বন্দুকধারী ইসরায়েলে আক্রমণ করলে প্রায় ১ হাজার ২০০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ওই সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৭ অক্টোবর ছিল ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থতা’। ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) ব্যর্থ হয়েছে। ওই কর্মকর্তারা আরও জানান, সেনাবাহিনী শত্রুর সামরিক শক্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে পারেনি এবং নিজেদের জ্ঞানের ওপর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিল।
তদন্তে দেখা গেছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী ভুলবশত ধরে নিয়েছিল যে, ২০০৭ সালে গাজা দখল করা হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেয়ে গাজা শাসনেই বেশি মনোযোগী। ফলে তারা হামাসের সামরিক শক্তিকে ভুলভাবে মূল্যায়ন করে। ‘হামাস যুদ্ধ চায় না’ – এই ধারণাই সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের হামলা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাধা দেয়।
সেনা পরিকল্পনাকারীরা ধারণা করেছিল, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে হামাস সর্বোচ্চ আটটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে স্থল আক্রমণ চালাতে পারে। কিন্তু বাস্তবে হামাস ৬০টিরও বেশি পথ ব্যবহার করে।
হামাস এর আগেও তিনবার হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল, কিন্তু অজানা কারণে তা স্থগিত করে। ৭ অক্টোবরের কয়েক ঘণ্টা আগে কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা গেলেও তা উপেক্ষিত হয়।
তদন্তে বলা হয়েছে, হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ইয়াহিয়া সিনওয়ার ২০১৭ সাল থেকেই পরিকল্পনা করছিলেন। ছুটির দিনে সেনাবাহিনীর সতর্কতা শিথিল থাকায় হামাস সুযোগ নেয়। হাজার হাজার যোদ্ধা নিরাপত্তা বেড়া ভেঙে বা হ্যাং গ্লাইডারে ভেতরে ঢুকে নজরদারি ক্যামেরা বিকল করে, সীমান্তরক্ষীদের পরাজিত করে। প্রথম তিন ঘণ্টায় হামাস সীমান্তবর্তী এলাকা এবং একটি সঙ্গীত উৎসবে হামলা চালিয়ে ২৫১ জন ইসরাইলিকে আটক করে। প্রতিবেদনে সেনাবাহিনীর আত্মবিশ্বাস এবং অপর্যাপ্ত সতর্কতাকে দায়ী করা হলেও কোনো ব্যক্তিকে দায়ী করা হয়নি। তবে কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন।