পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হলেন আরএসএস ঘনিষ্ঠ মাজহার আসিফ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, ১৯৮৮-এর অধীনে তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু কর্তৃক অনুমোদিত এই ঘোষণাটি ভারত সরকারের ডেপুটি সেক্রেটারি শ্রেয়া ভরদ্বাজ একটি চিঠির মাধ্যমে মাজহার আসিফের নিয়োগে শিলমোহর দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের দিন থেকে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁকে এই পদে বহাল রাখার কথাও জানানো হয়েছে।
এছাড়া অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি। অনেক ছোট থেকেই আরএসএসের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন অধ্যাপক আসিফ। তাঁর নিয়োগে খুশির হাওয়া বইছে আরএসএসের অন্দরে। তারা জানিয়েছে, ছোট থেকেই পড়াশোনাতে গভীর মনযোগী ছিলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, মাজহার আসিফের শিক্ষাগত প্রেক্ষাপট এবং একাডেমিক কৃতিত্ব এছাড়া ভাষা, সাহিত্যে দক্ষতার কারণেই তাঁকে উপাচার্যের পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রফেসর আসিফের উপস্থিতির পর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগত মান আরও ভালো হবে বলে জানান তারা ।উপাচার্য হিসেবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম, একাডেমিক নীতি নির্ধারণ এবং ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া প্রচার করার ভূমিকা পালন করবেন।
অধ্যাপক আসিফ এদিন বলেন, শিক্ষা শুধু জ্ঞান আহরণ নয়, এটি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা এবং সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার একটি বিশেষ হাতিয়ার। জেএমআই পরিবার এদিন অধ্যাপক মাজহার আসিফকে স্বাগত জানিয়েছেন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ শাকিল ২২ মে, ২০২৪ থেকে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিগত ১ বছর ধরে পদটি শূন্যপ্রায় ছিল। জেএনইউ -এর ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অধ্যাপক মাজহারের জাতীয় শিক্ষা নীতির খসড়া কমিটির সদস্য এবং শিক্ষার জন্য জাতীয় মনিটরিং কমিটিতেও কাজ করেছেন। এছাড়া ন্যাক পিয়ার রিভিউ দলের অংশও ছিলেন।
একদিকে কিছুসংখ্যক মানুষ তাঁর নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্যদিকে বিজেপি ও আরএসএস যোগের ঘটনায় আসিফের নিয়োগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একাংশ। সমালোচকদের দাবি, আসিফের আরএসএস যোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ এবং প্রগতিশীল সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া জামিয়ার পড়ুয়াদের একাংশ তাঁর নিয়োগে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তার উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ধর্মনিরপেক্ষতায় আঘাত হানতে পারে।
কারণ সিএএ বিক্ষোভের সময় তিনি জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছিলেন। এমনকি সরকারের পক্ষে নানান ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) এবং ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস (এনআরসি) নিয়ে বিরোধীতা জামিয়াকে সামাজিক ন্যায়বিচারের ঐতিহ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। এবং সিএএ-এনআরসি সরকারের অন্যতম ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের সঙ্গে অধ্যাপক আসিফের যোগসূত্র নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে। এটি আরএসএস-সংশ্লিষ্ট একটি সংগঠন। মুসলিম সম্প্রদায়কে সংগঠনটিতে সদস্য করা ও সংযোগ স্থাপন করাই মূল উদ্দেশ্য।
অতীতে আমরা সংঘ পরিবারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। পরিস্থিতি বেগতিক দেখলে ফের ময়দানে নামব। জামিয়া মানুষদের দিশা দেখায়। আমরা ভয় পেলে চলবে না।