উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন এই ঘরোয়া মশলাগুলি

- আপডেট : ১৯ অগাস্ট ২০২৩, শনিবার
- / 13
পুবের কলম প্রতিবেদক: বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। উচ্চরক্ত চাপের প্রধান কারণ হল অতিমাত্রায় অ্যালকোহল সেবন, নুন বেশি পরিমাণে খাওয়া, দুশ্চিন্তা, ঘুমের অভাব প্রভৃতি। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গেলে যেমন আমাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন করা দরকার, তেমনি যখন তখন ইচ্ছামতো ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস বদলানো প্রয়োজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ। সারা বিশ্বে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। কারও ব্লাড প্রেসার রিডিং যদি ১৪০/৯০ বা এর চেয়েও বেশি হয়, তখন বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে। অন্যদিকে রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশেপাশে থাকে, তাহলে তাকে লো ব্লাড প্রেসার হিসেবে ধরা হয়। সাধারণ ঘরোয়া উপায়ে উচ্চ রক্তচাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব, এমনই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। উচ্চ রক্তচাপ কমানোর সামগ্রীগুলি আছে আপনার রান্নাঘরে মধ্যেই। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই উপকরণগুলির সম্পর্কে-
আদা: আদা একটি বহুমুখী মশলা৷ আদায় একাধিক ভেষজ গুণ রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সঙ্গে রক্ত প্রবাহকে স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তনালীর চারিপাশে থাকা পেশি মজবুত করতে সাহায্য করে। সেই কারণেই আদার ব্যবহার আমাদের দেশ তথা এশিয়া মহাদেশে সেই প্রাচীনকাল চলে আসছে।
দারুচিনি: এটি একটি দারুচিনি গাছের ছাল থেকে প্রাপ্ত স্বাদযুক্ত মশলা। প্রাচীনকাল থেকে দারুচিনি হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন উপসর্গের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷ এটি উচ্চ রক্তচাপও কমায়। এটি রক্তনালীগুলিকে শিথিল এবং প্রসারিত করে বলে মনে করা হয়।
মেথি- রান্নাঘরের বিভিন্ন প্রাকৃতিক ভেষজ ও মশলা শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে। তেমনই এক উপাদান হল মেথি। সবার রান্নাঘরেই থাকে মেথি। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে মেথি রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল কমাতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ কোলেস্টেরল হৃদরোগের রোগের জন্য দুটি সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ।
আজওয়াইন (জোয়ান): আজওয়াইনকে থাইম নামেও ডাকা হয়৷ এটি একটি ভারতীয় মশলা৷ যা ভারতের সব জায়গায় পাওয়া যায়। এতে রোসমারিনিক অ্যাসিড নামে একটি স্বাদযুক্ত যৌগ রয়েছে৷ এই যৌগ অনেক উপকারিত হিসাবে পরিচিত৷ প্রদাহ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস, রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি এবং রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে।
পার্সলে: পার্সলে আমেরিকান, ইউরোপীয় এবং মধ্য প্রাচ্যের খাবারের একটি বিখ্যাত ওষুধি। এতে রয়েছে বিভিন্ন যৌগ৷ যেমন ভিটামিন সি এবং ক্যারোটিনয়েড৷ এগুলি আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
এলাচ: এলাচ একটি জনপ্রিয় মশলা৷ বিশেষ করে এর স্বাদের জন্য। এই মিষ্টি মশলায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট৷ যা প্রাকৃতিক ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার হিসেবে কাজ করে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
লবঙ্গ- লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমতে পারে। টানা কয়েক দিন লবঙ্গ চিবোনোর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে সহজে পার্থক্য ধরা যাবে।
তেজপাতা- তেজপাতা যে শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় তা-ই নয়, এর ভেষজ নানা গুণ বিভিন্ন কাজে লাগে। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ও শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে তেজপাতার চা। তেজপাতায় আছে ভিটামিন ‘ই’ ও ‘সি’, রয়েছে ফলিক অ্যাসিড।
ধনে পাতা- ধনেপাতায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে ও প্রোটিন পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারি এই ধনেপাতা। এ সবজিটি অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সুস্থ রাখে মস্তিষ্কও। এমনকি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের জন্য ধনেপাতা অনেক বেশি কার্যকরী।
সরিষার বীজ-সরিষায় আছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ফলিক অ্যাসিড, নিয়াসিন ও থায়ামিন, যা শরীরে মেটাবলিজমের পরিমাণ বাড়িয়ে হজমে শক্তি জোগায়। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
জিরে-রান্নায় স্বাদ বাড়াতে এক চিমটে জিরেই যথেষ্ট। তবে শুধু রান্নায় মশলা হিসেবে নয়, এই জিরের রয়েছে আরও গুণ। শুধু মশলা হিসেবেই নয়, এই জিরের রয়েছে একাধিক পুষ্টিগুণ। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অনেকেরই রক্তচাপ বাড়তে থাকে। জিরে ভেজানো জল, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
রোজমেরি- বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় সুগন্ধি ও ঔষধি গাছের অন্যতম হল রোজমেরি। অ্যারোমাথেরাপিতে ব্যবহৃত হয় রোজমেরি। এর তৈরি চা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে, মানসিক চাপ কমাতে ও রোজমেরি তেল রক্তসংবহন বাড়াতে উপকারি।