২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিরীহ মানুষকে মারছে, বিএসএফকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকতে দেবেন না, কোচবিহারের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ মমতার

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২২, বৃহস্পতিবার
  • / 3

নিজস্ব প্রতিনিধি: সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে ফের কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তাতেই হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে কোচবিহারের পুলিশ সুপারকে সরাসরি নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএসএফ যাতে সীমান্তের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকতে না পারে, সে দিকে লক্ষ্য রাখুন। বিএসএফ জওয়ানরা গ্রামে ঢুকে নিরীহ মানুষকে খুন করছে। আর বাংলাদেশের দিকে মৃতদেহ ছুঁড়ে ফেলেছে। বিএসএফকে কিছুতেই গ্রামে ঢোকার অনুমতি দেওয়া যাবে না।’

মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের নির্দেশের পরে সীমান্ত এলাকায় পুলিশ ও বিএসএফের মধ্যে এক্তিয়ার নিয়ে জোর সংঘাত বাঁধতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তবে রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘রাজ্যের সাধারণ মানুষের প্রাণ রক্ষার দায়িত্ব অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রীর কাঁধে। বিএসএফ যে সব সময়ে অপরাধী কিংবা দুষ্কৃতীদের নিশানা করে তা নয়। বহু নিরীহ মানুষও তাঁদের অত্যাচারের শিকার হন। রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষকে বাঁচাতেই এমন নির্দেশ দিতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।’

গত বছর পুজোর আগে আচমকাই দেশের তিন রাজ্য পঞ্জাব, অসম ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তরক্ষায় প্রহরারত বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এক ধাক্কায় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অভিযান চালানোর সীমানা ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

তাঁর অভিযোগ ছিল, রাজ্যের অনুমতি ছাড়াই বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে বড় আঘাত। মূলত রাজ্যের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতেই এই ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন তিনি। এমনকী গত বছরের নভেম্বরে রাজ্য বিধানসভাতেও বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধির বিরুদ্ধে বিশেষ প্রস্তাব পাশ হয়েছিল।

এদিন নবান্ন সভাঘরে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে বিভিন্ন জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জেলাশাসক ও পুলিস সুপারদের কাছে তথ্য-তালাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। কোচবিহারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ নেওয়ার সময়েই জেলার পুলিশ সুপারকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঢুকতে না দেওয়ার নির্দেশ দেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।

বিএসএফের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় গরুপাচার বিরোধী অভিযানের নাম করে গ্রামে ঢুকে সাধারণ মানুষকে গুলি করে খুন করে দেহ অন্য জায়গায় ছুঁড়ে ফেলছে বিএসএফ। আমি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এমন বহু ঘটনা দেখেছি। কীভাবে মৃতদেহ গায়েব করা হয়, তা নিজের চোখে দেখেছি।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

নিরীহ মানুষকে মারছে, বিএসএফকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকতে দেবেন না, কোচবিহারের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ মমতার

আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২২, বৃহস্পতিবার

নিজস্ব প্রতিনিধি: সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে ফের কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তাতেই হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে কোচবিহারের পুলিশ সুপারকে সরাসরি নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএসএফ যাতে সীমান্তের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকতে না পারে, সে দিকে লক্ষ্য রাখুন। বিএসএফ জওয়ানরা গ্রামে ঢুকে নিরীহ মানুষকে খুন করছে। আর বাংলাদেশের দিকে মৃতদেহ ছুঁড়ে ফেলেছে। বিএসএফকে কিছুতেই গ্রামে ঢোকার অনুমতি দেওয়া যাবে না।’

মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের নির্দেশের পরে সীমান্ত এলাকায় পুলিশ ও বিএসএফের মধ্যে এক্তিয়ার নিয়ে জোর সংঘাত বাঁধতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তবে রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘রাজ্যের সাধারণ মানুষের প্রাণ রক্ষার দায়িত্ব অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রীর কাঁধে। বিএসএফ যে সব সময়ে অপরাধী কিংবা দুষ্কৃতীদের নিশানা করে তা নয়। বহু নিরীহ মানুষও তাঁদের অত্যাচারের শিকার হন। রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষকে বাঁচাতেই এমন নির্দেশ দিতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।’

গত বছর পুজোর আগে আচমকাই দেশের তিন রাজ্য পঞ্জাব, অসম ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তরক্ষায় প্রহরারত বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এক ধাক্কায় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অভিযান চালানোর সীমানা ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

তাঁর অভিযোগ ছিল, রাজ্যের অনুমতি ছাড়াই বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে বড় আঘাত। মূলত রাজ্যের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতেই এই ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন তিনি। এমনকী গত বছরের নভেম্বরে রাজ্য বিধানসভাতেও বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধির বিরুদ্ধে বিশেষ প্রস্তাব পাশ হয়েছিল।

এদিন নবান্ন সভাঘরে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে বিভিন্ন জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জেলাশাসক ও পুলিস সুপারদের কাছে তথ্য-তালাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। কোচবিহারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ নেওয়ার সময়েই জেলার পুলিশ সুপারকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঢুকতে না দেওয়ার নির্দেশ দেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।

বিএসএফের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় গরুপাচার বিরোধী অভিযানের নাম করে গ্রামে ঢুকে সাধারণ মানুষকে গুলি করে খুন করে দেহ অন্য জায়গায় ছুঁড়ে ফেলছে বিএসএফ। আমি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এমন বহু ঘটনা দেখেছি। কীভাবে মৃতদেহ গায়েব করা হয়, তা নিজের চোখে দেখেছি।