১৪ মে ২০২৫, বুধবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘরেতে অভাব, তবু বাংলা ক্রিকেটের নক্ষত্র হতে তৈরি আকবর

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৮ জানুয়ারী ২০২৩, শনিবার
  • / 20

বিশেষ প্রতিবেদনঃ ঠিকানা, কেয়ারঅফ ফুটপাথ। দারিদ্র নিত্যসঙ্গী। শোয়ার ঘর বলতে ৩ফুট বাই ৩ফুট একটি ছাউনি। বসার জায়গা নেই। মাথার ওপর স্থায়ী ছাদ বলতে কিচ্ছু নেই। খোলা বাসস্থানের পাশ দিয়ে লোকজনের নিত্যদিনের যাতায়াতে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমনোর জায়গা পর্যন্ত নেই। কিন্তু এমন এক অবস্থার মধ্যে থেকেও ভালো ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন মুহাম্মদ আকবরকে ছোট থেকেই জেদি করে তুলেছে। কিন্তু অভাবের সংসারে যেখানে দুবেলা দুমুঠো অন্নসংস্থান করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যায় সেখানে আকবরের ক্রিকেটার হওয়াটাই যে ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার তূল্য। কিন্তু তাতেও স্বপ্ন দেখে আকবরের মতো ক্রিকেটাররা। কলকাতার মল্লিক বাজারের আর্সেনালের পাশের ছোট্ট বস্তি থেকে উঠে আসা আকবর গলি বা পাড়া ক্রিকেট থেকে সরাসরি মহামেডান ক্লাবের অ্যাকাডেমিতে। ব্যাটিংটাই তাঁর প্রথম পছন্দ  হলেও ভালো অলরাউন্ডার হওয়ার ভাবনা তাঁর মাথায়।

 

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার, অথচ ভাত খাচ্ছেন কলাপাতায়

কথায় কথায় কিশোর আকবর জানায়,  ‘আমার স্বপ্ন শুধু ভালো ক্রিকেটার হওয়াই নয়, তার সঙ্গে বড় কিছু হতে চাই,  যাতে সংসারটার মুখে হাসি ফোটাতে পারি। ছোট ভাই ফুটবল খেলে। কিন্তু সংসারের এমন সামর্থ নেই যে দুজনকে একসঙ্গে খেলোয়াড় বানাবে।’ কিন্তু দমে যেতে নারাজ কিশোর আকবর। তাঁর কথায়,  ‘আমি আত্মবিশ্বাসী। কিছু একটা করবই। ক্রিকেট আমার ধ্যানজ্ঞান, সেটা দিয়েই নিজেকে উচ্চস্তরে নিয়ে যেতে চাই’।’

আরও পড়ুন: ফুটপাতের আকবর ক্রিকেটের ময়দানে

 

আরও পড়ুন: স্কুলের পাঠ্যসূচিতে বাবর, আওরঙ্গজেব ও আকবরকেও বাদ দেওয়ার সুপারিশ!

ঘরেতে অভাব, তবু বাংলা ক্রিকেটের নক্ষত্র হতে তৈরি আকবর

সকালে স্কুল সেখান থেকে দুপুরে অ্যকাডেমিতে কঠিন প্রশিক্ষণ, ফিরে এসে কিছু খাওয়া দাওয়া করেই টিউশন পড়তে চলে যাওয়া। ক্রিকেটার আকবরের এটাই এখন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আর আকবরের মায়ের কথায়, বীরভূম থেকে এখানে এসেছি। আমরা গরীব, ফুটপাথে থাকি। ছেলের স্বপ্ন বড় হবে, ক্রিকেটকেই আঁকড়ে রয়েছে। তাই শত কষ্ট সত্ত্বেও ওর স্বপ্নকে স্বার্থক করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। ছোটখাটো কাজ করে ছেলেকে ক্রিকেটার তৈরি হতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। সঙ্গে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনোও করাচ্ছি। জানি না কি হবে?

পার্কসার্কাসের এক বেসরকারি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মুহাম্মদ আকবরকে ক্রিকেটে আনার অন্যতম এক কারিগর প্রতিবেশি ব্যবসাদার জানালেন, ‘ছোট্ট থেকেই আকবরের মধ্যে ক্রিকেটের একটা আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছিল। আমরা চেয়েছিলাম ও কোনও ক্লাবে প্রবেশ করুক। মহমেডান ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগটা আমিই করিয়ে দিয়েছিলাম। মুস্তাক সিদ্দিকির সঙ্গে কথা বলে আমি ওকে মহামেডান ক্লাবে পাঠাই।’

আকবরকে হাতে ধরে ট্রেনিং করিয়েছেন  এক সময়ের ক্লাব ক্রিকেটে নাম করা সাগির আহমেদ। প্রিয় ছাত্র আকবরকে ফুটপাথেই ট্রেনিং দেন। ক্রিকেটের খুঁটিনাটি বুঝিয়ে দেন তিনি। আকবরকে বড় ক্রিকেটার হয়ে উঠতে দেখতে চান। বললেন, ‘ওর ইচ্ছেশক্তিতে আমি খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম। তাই আমি চেয়েছিলাম ও ক্লাবে ভর্তি হোক। শুধু ক্লাব নয়, তারপরেও কীভাবে ও নিজেকে ক্রিকেটের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে পারে, সেই পরামর্শও প্রতিদিন ওকে দিই। ওকে আমি টেকনিকের প্রতিটি খুঁটিনাটি বোঝাই, কীভাবে একটা বল এলে সেটা তিন সেকেন্ডের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে খেলতে হয়।’

অলরাউন্ডার তৈরি করতে চান নিজের প্রিয় আকবরকে।  বললেন, ‘এখন ক্রিকেট খেলতে গেলে অরলাউন্ডার হতে হয়। ওকে আমি সেটাই বোঝাই। ওর বোলিং স্টাইলটাও বেশ ভালো। ব্যাটিংয়ে ও স্টেপ আউটটা বেশ ভালো করে।’

টেনিস বলে হাতেখড়ি,  আর এবার পেশাদার ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে সিএবি লিগ, বাংলার ক্রিকেটে খেলাটাই মূল লক্ষ্য গলি ক্রিকেটের নতুন বাদশাহ মুহাম্মদ আকবরের।

Copyright © 2025 Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ঘরেতে অভাব, তবু বাংলা ক্রিকেটের নক্ষত্র হতে তৈরি আকবর

আপডেট : ২৮ জানুয়ারী ২০২৩, শনিবার

বিশেষ প্রতিবেদনঃ ঠিকানা, কেয়ারঅফ ফুটপাথ। দারিদ্র নিত্যসঙ্গী। শোয়ার ঘর বলতে ৩ফুট বাই ৩ফুট একটি ছাউনি। বসার জায়গা নেই। মাথার ওপর স্থায়ী ছাদ বলতে কিচ্ছু নেই। খোলা বাসস্থানের পাশ দিয়ে লোকজনের নিত্যদিনের যাতায়াতে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমনোর জায়গা পর্যন্ত নেই। কিন্তু এমন এক অবস্থার মধ্যে থেকেও ভালো ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন মুহাম্মদ আকবরকে ছোট থেকেই জেদি করে তুলেছে। কিন্তু অভাবের সংসারে যেখানে দুবেলা দুমুঠো অন্নসংস্থান করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যায় সেখানে আকবরের ক্রিকেটার হওয়াটাই যে ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার তূল্য। কিন্তু তাতেও স্বপ্ন দেখে আকবরের মতো ক্রিকেটাররা। কলকাতার মল্লিক বাজারের আর্সেনালের পাশের ছোট্ট বস্তি থেকে উঠে আসা আকবর গলি বা পাড়া ক্রিকেট থেকে সরাসরি মহামেডান ক্লাবের অ্যাকাডেমিতে। ব্যাটিংটাই তাঁর প্রথম পছন্দ  হলেও ভালো অলরাউন্ডার হওয়ার ভাবনা তাঁর মাথায়।

 

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার, অথচ ভাত খাচ্ছেন কলাপাতায়

কথায় কথায় কিশোর আকবর জানায়,  ‘আমার স্বপ্ন শুধু ভালো ক্রিকেটার হওয়াই নয়, তার সঙ্গে বড় কিছু হতে চাই,  যাতে সংসারটার মুখে হাসি ফোটাতে পারি। ছোট ভাই ফুটবল খেলে। কিন্তু সংসারের এমন সামর্থ নেই যে দুজনকে একসঙ্গে খেলোয়াড় বানাবে।’ কিন্তু দমে যেতে নারাজ কিশোর আকবর। তাঁর কথায়,  ‘আমি আত্মবিশ্বাসী। কিছু একটা করবই। ক্রিকেট আমার ধ্যানজ্ঞান, সেটা দিয়েই নিজেকে উচ্চস্তরে নিয়ে যেতে চাই’।’

আরও পড়ুন: ফুটপাতের আকবর ক্রিকেটের ময়দানে

 

আরও পড়ুন: স্কুলের পাঠ্যসূচিতে বাবর, আওরঙ্গজেব ও আকবরকেও বাদ দেওয়ার সুপারিশ!

ঘরেতে অভাব, তবু বাংলা ক্রিকেটের নক্ষত্র হতে তৈরি আকবর

সকালে স্কুল সেখান থেকে দুপুরে অ্যকাডেমিতে কঠিন প্রশিক্ষণ, ফিরে এসে কিছু খাওয়া দাওয়া করেই টিউশন পড়তে চলে যাওয়া। ক্রিকেটার আকবরের এটাই এখন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আর আকবরের মায়ের কথায়, বীরভূম থেকে এখানে এসেছি। আমরা গরীব, ফুটপাথে থাকি। ছেলের স্বপ্ন বড় হবে, ক্রিকেটকেই আঁকড়ে রয়েছে। তাই শত কষ্ট সত্ত্বেও ওর স্বপ্নকে স্বার্থক করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। ছোটখাটো কাজ করে ছেলেকে ক্রিকেটার তৈরি হতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। সঙ্গে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনোও করাচ্ছি। জানি না কি হবে?

পার্কসার্কাসের এক বেসরকারি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মুহাম্মদ আকবরকে ক্রিকেটে আনার অন্যতম এক কারিগর প্রতিবেশি ব্যবসাদার জানালেন, ‘ছোট্ট থেকেই আকবরের মধ্যে ক্রিকেটের একটা আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছিল। আমরা চেয়েছিলাম ও কোনও ক্লাবে প্রবেশ করুক। মহমেডান ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগটা আমিই করিয়ে দিয়েছিলাম। মুস্তাক সিদ্দিকির সঙ্গে কথা বলে আমি ওকে মহামেডান ক্লাবে পাঠাই।’

আকবরকে হাতে ধরে ট্রেনিং করিয়েছেন  এক সময়ের ক্লাব ক্রিকেটে নাম করা সাগির আহমেদ। প্রিয় ছাত্র আকবরকে ফুটপাথেই ট্রেনিং দেন। ক্রিকেটের খুঁটিনাটি বুঝিয়ে দেন তিনি। আকবরকে বড় ক্রিকেটার হয়ে উঠতে দেখতে চান। বললেন, ‘ওর ইচ্ছেশক্তিতে আমি খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম। তাই আমি চেয়েছিলাম ও ক্লাবে ভর্তি হোক। শুধু ক্লাব নয়, তারপরেও কীভাবে ও নিজেকে ক্রিকেটের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে পারে, সেই পরামর্শও প্রতিদিন ওকে দিই। ওকে আমি টেকনিকের প্রতিটি খুঁটিনাটি বোঝাই, কীভাবে একটা বল এলে সেটা তিন সেকেন্ডের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে খেলতে হয়।’

অলরাউন্ডার তৈরি করতে চান নিজের প্রিয় আকবরকে।  বললেন, ‘এখন ক্রিকেট খেলতে গেলে অরলাউন্ডার হতে হয়। ওকে আমি সেটাই বোঝাই। ওর বোলিং স্টাইলটাও বেশ ভালো। ব্যাটিংয়ে ও স্টেপ আউটটা বেশ ভালো করে।’

টেনিস বলে হাতেখড়ি,  আর এবার পেশাদার ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে সিএবি লিগ, বাংলার ক্রিকেটে খেলাটাই মূল লক্ষ্য গলি ক্রিকেটের নতুন বাদশাহ মুহাম্মদ আকবরের।