বিশেষ প্রতিবেদক: একটা আশঙ্কা ছিলই। হাসিনা পরবর্তী প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে ভাষার জন্য আবেগ এবং আয়োজন কি একই থাকবে? অথচ এই ভাষাই বাংলাদেশের বুনিয়াদ রচনা করেছিল। অন্য কথায়, বাংলাদেশ জন্মের পিছনে বাংলা ভাষাই ছিল প্রধান কারিগর। নয়া শাসকরা এই ভাষা দিবসকে কীভাবে দেখবেন আর কীভাবে বা একুশের উদ্যাপন হবে সে-সম্পর্কে জানার জন্য এপার বাংলার অনেকেরই ছিল আগ্রহ। অবশ্য ৫০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকেই বাংলাদেশে ভাষা শহিদ দিবস পালিত হয়েছে। তারপর থেকে এতে কোনও ছেদ পড়েনি। খালেদা জিয়ার আমলেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে সাড়ম্বরে। শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা সব জেলার গ্রামে এবং শহরে।
তা কেমন হল শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্যাপন? ঢাকা থেকে এক সাংবাদিক বন্ধু জানালেন, প্রতি বছর যে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়, এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আর হবেই বা কেন? একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষার জন্য লড়তে গিয়ে যাঁরা প্রাণ কুরবানি দিয়েছিলেন, তা জাতি ভোলেনি। তিনি আরও বললেন, সে-সময় আওয়ামি লিগ কিন্তু ভাষা আ¨োলন করেনি, করেছিল বাংলার ছাত্র-জনতা, সাধারণ মানুষ। তাঁর কথায়, সেই ধারা এবারও অব্যাহত রয়েছে। আর যেই ক্ষমতায় আসুক, মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান তাদের সারাদেশে মর্যাদার সঙ্গে পালন করতেই হবে।
ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে ভোররাত ১২টার আগেই রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফুল হাতে জড়ো হন হাজারও মানুষ। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তি ও বিশিষ্ট নাগরিকরা। শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সাংস্কূতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাত ১২টা ১২ মিনিটে আসেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সেইসময় মাইক্রোফোনে বেজে ওঠে সেই পরিচিত ঐতিহাসিক গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’।
শুক্রবার বাংলাদেশজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান হয়েছে গান, আবৃত্তি ও আলোচনাসভার মাধ্যমে। গতকাল বৃহস্পতিবারই মুহাম্মদ ইউনূস বিশিষ্টদের একুশে-র পদক প্রদান করেছিলেন।
রাত ১২টার পর শহিদ মিনারে ছাত্র ও জনতা মর্যাদার সঙ্গে পালন করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ ছাড়া মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও বিকাশে ভূমিকা রাখায় এবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদক পেয়েছেন ভাষাবিজ্ঞানী ও ভাষা গবেষক অধ্যাপক আবুল মনসুর মুহাম্মদ আবু মুসা। রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দ দাশের রচনাবলির অনুবাদ এবং বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিকীকরণ ও প্রসারে ভূমিকা রাখার জন্য ব্রিটিশ কবি জোসেফ ডেভিড উইন্টারকেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক দেওয়া হয়। পদক তুলে দেন মুহাম্মদ ইউনূস। এ ছাড়া একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি প্রদানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় আর একটি পদক পেয়েছে প্যারিসের বাংলাদেশ দূতাবাস।
এ দিন বাংলাদেশের সবক’টি সংবাদপত্র ভাষা দিবসের উপর বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের সব টেলিভিশন চ্যানেলে ভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছে নানা অনুষ্ঠান ও টকশো।
শুধুমাত্র চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠান মঞ্চে আওয়ামি লিগের নেতৃবৃন্দের প্রশংসা করায় শ্রোতা-দর্শকরা আপত্তি করে।
এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলাদেশে আর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় দেখা যায় আওয়ামি লিগের নেতাকর্মীরা উপস্থিতি তো বটেই, তাদের সাংßৃñতিক সংগঠনগুলি প্রতি বছর যে অনুষ্ঠানগুলি করত, এ বছর তা দেখা যায়নি।