২৫ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বহু মসজিদ-মাদ্রাসা জিহাদি কার্যকলাপের ঘাঁটি হয়ে উঠেছে:  হিমন্ত

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৫ অগাস্ট ২০২২, শুক্রবার
  • / 6

বিশেষ প্রতিবেদক: এখন ইউপি-র যোগী আদিত্যনাথ এবং ‘নয়া গেরুয়াপন্থী’ অসমের হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মধ্যে প্রবল প্রতিযোগিতা চলছে। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কে কত বেশি ঘৃণা-বিদ্বেষের আবহাওয়া তৈরি করতে পারেন এবং কে আইনের তোয়াক্কা না করে মুসলিমদের উপর সর্বাধিক নির্যাতন চালাতে পারেন! এ সম্পর্কে নানা খবর ও প্রতিবেদন ইতিমধ্যেই মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে।

এ বিষয়ে সর্বশেষ খবর হচ্ছে, দিসপুরে গদ্দিনসীন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘অসম জিহাদি কার্যকলাপের এক উত্তপ্ত ঘাঁটি হয়ে উঠেছে।’ তাঁর এই বক্তব্য সারা ভারতে প্রায় সমস্ত মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসী মডিউলের সঙ্গে যোগ রয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের আল-কায়দার। তিনি এও বলেন, এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মূলহোতা হচ্ছে কিছু বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের একটি কোর টিম বা গুরুত্বপূর্ণ দল অসমে ঢুকে পড়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আনসারুল ইসলামের ছ’জন বাংলাদেশি অসমে প্রবেশ করেছে। আর বরপেটায় প্রথম সন্ত্রাসী মডিউলের খবর পাওয়ার পরই একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি পাঁচজনের সন্ধান চলছে। বিস্তারিত কোনও বিবরণ না দিয়ে হিমন্ত বলেন, গত চারমাসে অসমে পাঁচটি সন্ত্রাসী মডিউলকে বিনষ্ট করা হয়েছে।

গ্রেফতারি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত দুই ভিন্নমুখী তথ্য দিয়েছেন। একটিতে তিনি বলেছেন, প্রায় ডজনখানেক লোককে গত কয়েক সপ্তাহে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবার বলেছেন, এখনও পর্যন্ত মাত্র একজন বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। বরপেটায় একটি স্থানীয় মসজিদে ইমাম হিসেবে কাজ করা এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর নাম মুহাম্মদ সুমন। অভিযোগ, তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অংশ ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত পিএফআই বা পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, পিএফআই (মুসলিম) তরুণদের মগজ ধোলাই করছে।

উল্লেখ্য, পিএফআইকে ভারত সরকার নিষিদ্ধ করেনি। যদিও অনেকেই পিএফআই-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তবে মিডিয়াতে পিএফআই-এর ওয়েবসাইট থেকে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশের মধ্যে রয়েছে জাতীয় সংহতি, সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সামাজিক সমন্বয়।

হিমন্ত আরও বলেছেন, রাজ্যের বাইরে থেকে আসা ইমামরা বিভিন্ন মাদ্রাসা ও মসজিদে তরুণদের জিহাদি মন্ত্রে দীক্ষিত করছেন। অসমে যে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ চলছে, তার হোতা আলফা, বরো বা ডিমা হাসো প্রভৃতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কার্যকলাপ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ এবং জিহাদি কার্যকলাপের মধ্যে বিরাট পার্থক্য। জিহাদি কার্যকলাপ মৌলবাদ প্রচারে উদ্বুদ্ধ করে। যা চূড়ান্ত ধাপে গিয়ে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের রূপ নেয়।’

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দেশ থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপকে জিহাদি কার্যকলাপের তুলনায় অপেক্ষাকৃত গুরুত্বহীন বলে বর্ণনা করায় অনেকে অবাক হয়েছেন। কারণ, আলফা ও অন্য সংগঠনগুলির বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের মাধ্যমে ‘স্বাধীন অসম রাষ্ট্র’ গঠন করতে চায়। আর এই ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলিকে রোখার জন্য ভারতের বহু শত দেশপ্রেমিক সেনা-জওয়ান প্রাণ বলিদান দিয়েছেন। কাজেই তাদেরকে অপেক্ষাকৃত ভালো বলায় অনেকে বলছেন এই ধরনের পার্থক্য করা হিমন্তের বিশেষ মনোভাবকে প্রকাশ করে।

হিমন্ত আরও বলেছেন, বাংলাদেশিরা কোভিড লকডাউনের সুযোগে অসমে কয়েকটি ক্যাম্পও করেছিল। সেখানে তারা কুটির শিল্প ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। তরুণদের চরমপন্থার দিকে প্ররোচিত করে। হিমন্ত আরও বলেন, আমরা মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমামদের দিকে এবার থেকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখব।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বহু মসজিদ-মাদ্রাসা জিহাদি কার্যকলাপের ঘাঁটি হয়ে উঠেছে:  হিমন্ত

আপডেট : ৫ অগাস্ট ২০২২, শুক্রবার

বিশেষ প্রতিবেদক: এখন ইউপি-র যোগী আদিত্যনাথ এবং ‘নয়া গেরুয়াপন্থী’ অসমের হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মধ্যে প্রবল প্রতিযোগিতা চলছে। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কে কত বেশি ঘৃণা-বিদ্বেষের আবহাওয়া তৈরি করতে পারেন এবং কে আইনের তোয়াক্কা না করে মুসলিমদের উপর সর্বাধিক নির্যাতন চালাতে পারেন! এ সম্পর্কে নানা খবর ও প্রতিবেদন ইতিমধ্যেই মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে।

এ বিষয়ে সর্বশেষ খবর হচ্ছে, দিসপুরে গদ্দিনসীন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘অসম জিহাদি কার্যকলাপের এক উত্তপ্ত ঘাঁটি হয়ে উঠেছে।’ তাঁর এই বক্তব্য সারা ভারতে প্রায় সমস্ত মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসী মডিউলের সঙ্গে যোগ রয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের আল-কায়দার। তিনি এও বলেন, এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মূলহোতা হচ্ছে কিছু বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের একটি কোর টিম বা গুরুত্বপূর্ণ দল অসমে ঢুকে পড়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আনসারুল ইসলামের ছ’জন বাংলাদেশি অসমে প্রবেশ করেছে। আর বরপেটায় প্রথম সন্ত্রাসী মডিউলের খবর পাওয়ার পরই একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি পাঁচজনের সন্ধান চলছে। বিস্তারিত কোনও বিবরণ না দিয়ে হিমন্ত বলেন, গত চারমাসে অসমে পাঁচটি সন্ত্রাসী মডিউলকে বিনষ্ট করা হয়েছে।

গ্রেফতারি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত দুই ভিন্নমুখী তথ্য দিয়েছেন। একটিতে তিনি বলেছেন, প্রায় ডজনখানেক লোককে গত কয়েক সপ্তাহে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবার বলেছেন, এখনও পর্যন্ত মাত্র একজন বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। বরপেটায় একটি স্থানীয় মসজিদে ইমাম হিসেবে কাজ করা এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর নাম মুহাম্মদ সুমন। অভিযোগ, তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অংশ ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত পিএফআই বা পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, পিএফআই (মুসলিম) তরুণদের মগজ ধোলাই করছে।

উল্লেখ্য, পিএফআইকে ভারত সরকার নিষিদ্ধ করেনি। যদিও অনেকেই পিএফআই-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তবে মিডিয়াতে পিএফআই-এর ওয়েবসাইট থেকে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশের মধ্যে রয়েছে জাতীয় সংহতি, সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সামাজিক সমন্বয়।

হিমন্ত আরও বলেছেন, রাজ্যের বাইরে থেকে আসা ইমামরা বিভিন্ন মাদ্রাসা ও মসজিদে তরুণদের জিহাদি মন্ত্রে দীক্ষিত করছেন। অসমে যে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ চলছে, তার হোতা আলফা, বরো বা ডিমা হাসো প্রভৃতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কার্যকলাপ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ এবং জিহাদি কার্যকলাপের মধ্যে বিরাট পার্থক্য। জিহাদি কার্যকলাপ মৌলবাদ প্রচারে উদ্বুদ্ধ করে। যা চূড়ান্ত ধাপে গিয়ে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের রূপ নেয়।’

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দেশ থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপকে জিহাদি কার্যকলাপের তুলনায় অপেক্ষাকৃত গুরুত্বহীন বলে বর্ণনা করায় অনেকে অবাক হয়েছেন। কারণ, আলফা ও অন্য সংগঠনগুলির বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের মাধ্যমে ‘স্বাধীন অসম রাষ্ট্র’ গঠন করতে চায়। আর এই ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলিকে রোখার জন্য ভারতের বহু শত দেশপ্রেমিক সেনা-জওয়ান প্রাণ বলিদান দিয়েছেন। কাজেই তাদেরকে অপেক্ষাকৃত ভালো বলায় অনেকে বলছেন এই ধরনের পার্থক্য করা হিমন্তের বিশেষ মনোভাবকে প্রকাশ করে।

হিমন্ত আরও বলেছেন, বাংলাদেশিরা কোভিড লকডাউনের সুযোগে অসমে কয়েকটি ক্যাম্পও করেছিল। সেখানে তারা কুটির শিল্প ও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। তরুণদের চরমপন্থার দিকে প্ররোচিত করে। হিমন্ত আরও বলেন, আমরা মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমামদের দিকে এবার থেকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখব।