১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নয়া ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে কলকাতায় বিশাল সমাবেশ 

আবুল খায়ের
  • আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 57

পুবের কলম প্রতিবেদক: বৃহস্পতিবার সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় আন্দোলনের  ডাক দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। এ দিন বেলা বাড়তেই কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় দেখা মেলে শ’য়ে শ’য়ে গাড়ি। কেউ বাস, কেউ ছোট গাড়ি করে সুদূর উত্তরবঙ্গ থেকে, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন কর্মী সমর্থকরা। এদিন গাড়িতে যাওয়ার সময় সকলের স্লোগান ছিল ‘ওয়াকফ আইন প্রত্যাহার করতে হবে’। এদিন সকাল থেকেই কলকাতার মৌলালির রামলীলা পার্কে ছিল হাজার হাজার মানুষের সমাগম। বেলা এগারোটার আগেই রামলীলা ময়দান চত্বরে সমর্থকদের ভিড়ে উপছে পড়ে। তবে মৌলালি, শিয়ালদহ, পার্ক সার্কাস ৪ নম্বর ব্রিজ থেকে রাজাবাজার, ধর্মতলা, মল্লিকবাজার-সহ একাধিক এলাকায় সংগঠনের সমর্থকদের ভিড়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে বিভিন্ন রাস্তা। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মিছিলে সিংহভাগ মানুষই ঠাসা ভিড়ের কারণে ভিতরে ঢুকতে পারেননি। সভা মঞ্চে অধীর আগ্রহে বিশিষ্টদের বক্তব্য শুনছিলেন। আর জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পতাকার সঙ্গে উড়ছিল ভারতের জাতীয় পতাকা।

এ দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্য জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, মেয়র পারিষদ আমিরউদ্দিন ববি, মাওলানা শফিক কাশেমি প্রমুখ। এদিনের সভায় মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি বলেন, এক কোটি মানুষের গণস্বাক্ষর করে প্রতিবাদপত্র পাঠানো হবে কেন্দ্রে কাছে।

এদিনের সভায় মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বিভিন্নভাবে মানুষকে হয়রানি করছে। ধর্মের উপর আঘাত তৈরি করা হচ্ছে। বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘দেশ বাঁচাও, সংবিধান বাঁচাও।’ তা না করে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। কেন্দ্র সরকারের  এই ‘খেলা ব্যর্থ হবে। সংবিধান নিয়ে ছিনিমিনি করা বন্ধ করতে হবে। ইসরায়েলের মত এ দেশেও মানুষের কাছ থেকে ভিটেমাটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ওয়াকফ সংশোধনী বিল এনে ‘ওয়াকফ জমি; কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কেন্দ্রের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হবে।’ কেন্দ্র সরকার স্বেচ্ছাচারিতা করছে। স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ না করলে আগামীতে আরও বৃহত্তর আন্দোলন হবে বলে জোর স্লোগান তোলেন তিনি। মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরির ঘোষণা, জেলায় জেলায় বিক্ষোভ মিছিল হবে। কলকাতা সহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান বিক্ষোভ হবে। কলকাতায় বড় মিছিলও হবে। আগামীতে ব্রিগেডে আরও বৃহত্তর জমায়েত হবে।

এ দিনের সভায় পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান বলেন, ওয়াকফ সম্পত্তি আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে তুলে দেব না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের  কথা উল্লেখ করে ইমরান বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন পশ্চিমবঙ্গে ওয়াকফ সম্পত্তিতে হাত  দিতে দেব না।  মুসলিম দেশগুলিতে ওয়াকফ বোর্ড নেই বলেও বিজেপি পার্লামেন্টে মিথ্যা কথা বলেছে। মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানোর কথা বলছে আরএসএস। এটা আমরা মানবো না। মুসলিমদের পরিচিতি রক্ষার জন্য ভারতে বহু ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। ওয়াকফ সম্পত্তি আল্লাহ’র। সেই সম্পত্তি ইমানদারদের হাতে রা’তে হবে।

দেশে জুলুমের ঘটনা প্রসঙ্গে মাওলানা শফিক কাশেমি বলেন, মানুষের উপর বা কোনও সম্প্রদায়ের উপর জুলুম হলে মানবো না। দিল্লির রামলীলায় গিয়ে আন্দোলনে নামবো। আমরা জুলুম করবো না, জুলুম সহ্যও করবো না। ইনসাফ নিয়ে হিন্দু-মুসলিম-শিখ- খ্রিস্টানদের নিয়ে একযোগে লড়াই চলবে।

এদিন শিখ সম্প্রদায়ের ইন্দ্রপ্রীতি সিং ওয়াকফ আইন ফিরিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে জোর আওয়াজ তোলেন। তিনি বলেন, হিন্দুস্তানে সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে থাকতে চায়। কিন্তু কেন্দ্রের সরকার বিভাজনের রাজনীতি করছে। দেশের মানুষকে  ‘খলিস্থান, পাকিস্তান বলে অপমান করা হচ্ছে। আমরা কৃষক বিলের বিরুদ্ধে এক জোট হয়ে জিতেছি। শিখরাও ওয়াকফ বিল মানে না। প্রয়োজন হলে ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে দিল্লি যাবো।

মেয়র পারিষদ আমিরউদ্দিন ববি বলেন, এই  দেশ আমাদের, আমরা আছি, থাকবো। এনআরসি, সিএএ  নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। সেই আইনও মানিনি। ওয়াকফ আইনও মানছি না। ‘মুসলিমদের কেউ নেই। আল্লাহ আছে।’ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে  জুলুমের উপর জুলুম চলছে।  বিজেপি সরকারের সেই অত্যাচার  রু’তে অমুসলিম ভায়েরাও সহযোগিতা করছেন। এই ভারতে ‘সংবিধান’ রয়েছে। সেই সংবিধানকে ধ্বংস করার চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে বিজেপি। আর বিজেপি অন্যায় করলে ভারতের মানুষ বসে থাকবে না। তা রুখতে কলকাতায় প্রতিবাদ, অবস্থান, মিছিল অব্যাহত থাকবে। এই ওয়াকফ বিল বাতিল করতে হবে।

ফাদার  বিশপ ড. সঞ্জীব বিজেপি সরকারের চক্রান্তের কথা উল্লে’ করে বলেন, দেশটা পুরোপুরি গেরুয়া করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। দেশের সব কিছু লুট চলছে। আমরা ভুল কাজ করবো না। ভুলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে আগামী দিনে লড়াই আরও বৃহত্তর হবে। এদিন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরির দোয়ার মাধ্যমে সভা ও  গণঅবস্থান সমাপ্ত হয়।

 

 

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

নয়া ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে কলকাতায় বিশাল সমাবেশ 

আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম প্রতিবেদক: বৃহস্পতিবার সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় আন্দোলনের  ডাক দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। এ দিন বেলা বাড়তেই কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় দেখা মেলে শ’য়ে শ’য়ে গাড়ি। কেউ বাস, কেউ ছোট গাড়ি করে সুদূর উত্তরবঙ্গ থেকে, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন কর্মী সমর্থকরা। এদিন গাড়িতে যাওয়ার সময় সকলের স্লোগান ছিল ‘ওয়াকফ আইন প্রত্যাহার করতে হবে’। এদিন সকাল থেকেই কলকাতার মৌলালির রামলীলা পার্কে ছিল হাজার হাজার মানুষের সমাগম। বেলা এগারোটার আগেই রামলীলা ময়দান চত্বরে সমর্থকদের ভিড়ে উপছে পড়ে। তবে মৌলালি, শিয়ালদহ, পার্ক সার্কাস ৪ নম্বর ব্রিজ থেকে রাজাবাজার, ধর্মতলা, মল্লিকবাজার-সহ একাধিক এলাকায় সংগঠনের সমর্থকদের ভিড়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে বিভিন্ন রাস্তা। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মিছিলে সিংহভাগ মানুষই ঠাসা ভিড়ের কারণে ভিতরে ঢুকতে পারেননি। সভা মঞ্চে অধীর আগ্রহে বিশিষ্টদের বক্তব্য শুনছিলেন। আর জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পতাকার সঙ্গে উড়ছিল ভারতের জাতীয় পতাকা।

এ দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্য জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, মেয়র পারিষদ আমিরউদ্দিন ববি, মাওলানা শফিক কাশেমি প্রমুখ। এদিনের সভায় মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি বলেন, এক কোটি মানুষের গণস্বাক্ষর করে প্রতিবাদপত্র পাঠানো হবে কেন্দ্রে কাছে।

এদিনের সভায় মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বিভিন্নভাবে মানুষকে হয়রানি করছে। ধর্মের উপর আঘাত তৈরি করা হচ্ছে। বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘দেশ বাঁচাও, সংবিধান বাঁচাও।’ তা না করে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। কেন্দ্র সরকারের  এই ‘খেলা ব্যর্থ হবে। সংবিধান নিয়ে ছিনিমিনি করা বন্ধ করতে হবে। ইসরায়েলের মত এ দেশেও মানুষের কাছ থেকে ভিটেমাটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ওয়াকফ সংশোধনী বিল এনে ‘ওয়াকফ জমি; কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কেন্দ্রের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হবে।’ কেন্দ্র সরকার স্বেচ্ছাচারিতা করছে। স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ না করলে আগামীতে আরও বৃহত্তর আন্দোলন হবে বলে জোর স্লোগান তোলেন তিনি। মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরির ঘোষণা, জেলায় জেলায় বিক্ষোভ মিছিল হবে। কলকাতা সহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান বিক্ষোভ হবে। কলকাতায় বড় মিছিলও হবে। আগামীতে ব্রিগেডে আরও বৃহত্তর জমায়েত হবে।

এ দিনের সভায় পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান বলেন, ওয়াকফ সম্পত্তি আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে তুলে দেব না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের  কথা উল্লেখ করে ইমরান বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন পশ্চিমবঙ্গে ওয়াকফ সম্পত্তিতে হাত  দিতে দেব না।  মুসলিম দেশগুলিতে ওয়াকফ বোর্ড নেই বলেও বিজেপি পার্লামেন্টে মিথ্যা কথা বলেছে। মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানোর কথা বলছে আরএসএস। এটা আমরা মানবো না। মুসলিমদের পরিচিতি রক্ষার জন্য ভারতে বহু ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। ওয়াকফ সম্পত্তি আল্লাহ’র। সেই সম্পত্তি ইমানদারদের হাতে রা’তে হবে।

দেশে জুলুমের ঘটনা প্রসঙ্গে মাওলানা শফিক কাশেমি বলেন, মানুষের উপর বা কোনও সম্প্রদায়ের উপর জুলুম হলে মানবো না। দিল্লির রামলীলায় গিয়ে আন্দোলনে নামবো। আমরা জুলুম করবো না, জুলুম সহ্যও করবো না। ইনসাফ নিয়ে হিন্দু-মুসলিম-শিখ- খ্রিস্টানদের নিয়ে একযোগে লড়াই চলবে।

এদিন শিখ সম্প্রদায়ের ইন্দ্রপ্রীতি সিং ওয়াকফ আইন ফিরিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে জোর আওয়াজ তোলেন। তিনি বলেন, হিন্দুস্তানে সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে থাকতে চায়। কিন্তু কেন্দ্রের সরকার বিভাজনের রাজনীতি করছে। দেশের মানুষকে  ‘খলিস্থান, পাকিস্তান বলে অপমান করা হচ্ছে। আমরা কৃষক বিলের বিরুদ্ধে এক জোট হয়ে জিতেছি। শিখরাও ওয়াকফ বিল মানে না। প্রয়োজন হলে ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে দিল্লি যাবো।

মেয়র পারিষদ আমিরউদ্দিন ববি বলেন, এই  দেশ আমাদের, আমরা আছি, থাকবো। এনআরসি, সিএএ  নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। সেই আইনও মানিনি। ওয়াকফ আইনও মানছি না। ‘মুসলিমদের কেউ নেই। আল্লাহ আছে।’ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে  জুলুমের উপর জুলুম চলছে।  বিজেপি সরকারের সেই অত্যাচার  রু’তে অমুসলিম ভায়েরাও সহযোগিতা করছেন। এই ভারতে ‘সংবিধান’ রয়েছে। সেই সংবিধানকে ধ্বংস করার চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে বিজেপি। আর বিজেপি অন্যায় করলে ভারতের মানুষ বসে থাকবে না। তা রুখতে কলকাতায় প্রতিবাদ, অবস্থান, মিছিল অব্যাহত থাকবে। এই ওয়াকফ বিল বাতিল করতে হবে।

ফাদার  বিশপ ড. সঞ্জীব বিজেপি সরকারের চক্রান্তের কথা উল্লে’ করে বলেন, দেশটা পুরোপুরি গেরুয়া করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। দেশের সব কিছু লুট চলছে। আমরা ভুল কাজ করবো না। ভুলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে আগামী দিনে লড়াই আরও বৃহত্তর হবে। এদিন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরির দোয়ার মাধ্যমে সভা ও  গণঅবস্থান সমাপ্ত হয়।