জেনেভা, ১২ জানুয়ারি: বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান রুখতে নির্বিচারে মানুষ খুন করা হয়েছে। যার মধ্যে বহু শিশুও ছিল। বুধবার প্রকাশিত সংঘের রিপোর্টে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে ১২৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ওই সময়ের নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিগত সরকার ও শাসক দল আওয়ামী লীগকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে।
রাষ্ট্রসংঘ বলছে, ওই সময়ে ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। বেশির ভাগই মিলিটারি রাইফেল ও মেটাল প্যালেটস লোড করা শটগানে নিহত হয়েছেন। এই ধরনের শটগান সাধারণত বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে থাকে। এ সময় আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ওই প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের প্রাক্তন সরকার, তার আওয়ামী লীগ দল এবং বাংলাদেশি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা মিলিত ভাবে বিক্ষোভকারী ও অন্যান্য অসামরিক নাগরিকদের উপর ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছিল। পুলিশ ও র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ১১ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে প্রায় ১২-১৩ শতাংশ শিশু বলে জানা গেছে। পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী শিশুদের টার্গেট করে হত্যা করেছে, ইচ্ছাকৃতভাবে পঙ্গু করেছে। বিশেষ করে শুরুর দিকে বিক্ষোভের সম্মুখসারিতে থাকা মহিলাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা মারাত্মকভাবে আক্রমণ করেছে। কয়েকটি ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে।
রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, ‘এই নৃশংস প্রতিক্রিয়া ছিল বিগত সরকারের একটি পরিকল্পিত এবং সমন্বিত কৌশল, যা জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল। তুর্ক আরও বলেন, ‘বিক্ষোভ দমন করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মিলিত ভাবে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেফতার ও আটক এবং নির্যাতন চালিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেছি তা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ডের এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর এবং যা আন্তর্জাতিক অপরাধ। এর বিচার হওয়া উচিত কারণ এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য।’ বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রসংঘের প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি অন্তর্বর্তী সরকারে কর্মরত সব ব্যক্তি এবং কোটি কোটি নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে এমন একটি দেশে রূপান্তরিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেখানে সব মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।’