রোযা রেখেও আপৎকালীন পরিস্থিতি সামলান মুসলিম স্বাস্থ্যকর্মীরা

- আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪, বুধবার
- / 6
বিশ্বজিৎ ঘোষ: একে তো ইমারজেন্সি পরিষেবা, তার উপর ডিউটি আওয়ার্স শেষ হয়ে গেলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্তব্য ছেড়ে চলে যাওয়া যায় না। তবুও এরই মধ্যে আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দিয়ে রোযা পালন করছেন এই স্বাস্থ্যকর্মীরা। আর, এই পবিত্র রমযান মাসে তাঁদের বার্তা, সকলের সহযোগিতা থাকলে আরও ভালোভাবে এগিয়ে চলতে পারবে এই রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা।
ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরিতে ডিউটি করেন আফতাব উদ্দিন মল্লিক। হাওড়ার বাসিন্দা এই স্বাস্থ্যকর্মীর কথায়, ‘বাড়িতে থাকলে যেভাবে রোযা পালন করা যায়, নামায পড়তে সুবিধা হয়, হাসপাতালে থাকলে সেভাবে হয় না, একটু অসুবিধা হয়। তবুও করে নিতে হয়, দুটোই করতে হবে, কারণ দুটোই কর্তব্য।’ মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ফিজিয়োলজি ডিপার্টমেন্টে ডিউটি করেন মহম্মদ মোদাসসার হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে ডিউটি করতে হবে। নাইট ডিউটিও করতে হয়। রোযার মধ্যেও নাইট ডিউটি রয়েছে। তখন সেহরির জন্য খাবার নিয়ে যাব। রোযার মধ্যেও কষ্ট করে আমরা পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছি।’ কোচবিহার এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে ডিউটি করেন কলকাতার বাসিন্দা হাবিবুল রহমান শেখ। তাঁর কথায়, ‘রোযা তো আমাদের পালন করতেই হবে। এটা আমাদের ফরজ। স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমরা অন ডিউটিতে এটা পালন করছি, তাতে আমাদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে না এই রাজ্য সরকারের অধীনে।’
রমযান মাসে মুসলিম সরকারি কর্মীদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের নির্দেশ রয়েছে বিকাল সাড়ে তিনটেয় ছুটি দেওয়ার জন্য। এই ছুটির বিষয়ে আফতাব উদ্দিন মল্লিক বলেন, ‘হাসপাতালের জেনারেল ডিউটিতে যারা রয়েছেন তাঁদের জন্য ছুটিটা অবশ্যই সুবিধাজনক। কাছাকাছি বাড়ি হলে বাড়িতে গিয়ে তাঁরা আরামের সঙ্গে ইফতার করতে পারেন। কিন্তু যারা ইমার্জেন্সি ডিউটিতে থাকেন, শিফটিং ডিউটিতে থাকেন, তাঁদের কাছে উপায় নেই, সরকার চেষ্টা করেছে তবে এই রকম ডিউটির কারণে এই সময় ছুটি নেওয়ার উপায় নেই। আমাকে তো পরিষেবাটা দিতে হবে।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় পরিস্থিতি এমন হতেই পারে যে ডিউটি আওয়ার্স শেষ হয়ে গেলেও ইমারজেন্সির কারণে ডিউটি ছেড়ে, কর্তব্য ফেলে চলে যাওয়া যায় না।’
হাবিবুল রহমান শেখ বলেন, ‘আমাদের ডিপার্টমেন্ট তো ফাঁকা রাখা যায় না, ২৪x৭ পরিষেবা প্রদান চলতে থাকে। এই সময় অল্টারনেট করে আমরা ডিউটি করি। যেমন, আমাদের কেউ যদি মর্নিং ডিউটি করে নেন, তা হলে বিকাল তিনটে সাড়ে তিনটের মধ্যে তাঁর ছুটি হয়ে যাচ্ছে। তখন ডিউটি থেকে ফিরে গিয়ে তিনি ইফতার করতে পারছেন। আবার যদি আমাদের কেউ ইভনিং ডিউটি করেন, বিকাল তিনটে থেকে শুরু হয় ইভনিং ডিউটি। তিনটে থেকে পাঁচটা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ডিউটি করে ১৫-২০ মিনিটের জন্য ইফতার করে নিয়ে আবার ডিউটিতে জয়েন করেন তিনি।
ইফতারের জন্য যথেষ্ট সহযোগিতা করেন আমাদের সহকর্মীরা।’ তিনি বলেন, ‘আসলে কোনও স্বাস্থ্যকর্মীর ক্ষেত্রে ফিক্সড ডিউটি আওয়ার্স হয় না যে বিকাল সাড়ে তিনটের সময়েই আমরা ডিউটি থেকে বের হতে পারব। পরিস্থিতি এমন দেখা দিতে পারে যেখানে ডিউটি আওয়ার্স শেষ হয়ে গেলেও ডিউটি ছেড়ে চলে যাওয়া যায় না।’
রোযা পালনের পাশাপাশি পবিত্র এই রমযান মাসে সকলের প্রতি কোন বার্তা দিচ্ছেন এই স্বাস্থ্যকর্মীরা? আফতাব উদ্দিন মল্লিকের কথায়, ‘ইমারজেন্সি সার্ভিস যারা দিয়ে থাকেন, সাধ্যমতো তাঁরা চেষ্টা করেন। অনেক সময় হয় কী আমাদের হাতে অনেক কিছু থাকে না, যেগুলি আমাদের সীমাবদ্ধতার বাইরে। তখন কিছুটা সমস্যা হয়ে যায়। এই রকম অবস্থায় হয়তো স্মুদলি দিতে পারলাম না পরিষেবা। তখন হয়তো রোগী, বাড়ির লোকরা বিরক্ত হন। আমাদের অনুরোধ, আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যেও হয়তো কিছু ভুল থাকতে পারে। এটা হয়তো সংখ্যায় খুবই কম। তবুও ভুল যাতে না থাকে তার জন্যেও অনুরোধ রাখছি। রোগী কিংবা তার বাড়ির লোক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা, দুই তরফেই যেন দুই তরফের প্রতি সহযোগিতা করেন, তা হলে পরিষেবাটা আরও ভালোভাবে চলতে পারবে।’ হাবিবুল রহমান শেখ বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে বুঝতে হবে যে, আমরা যারা স্বাস্থ্যকর্মী আছি, আমরা রুলস-রেগুলেশন্স মেনে সব সময় কাজ করি। আমরা যেমন মানবিক হয়ে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি, তেমনই অন্যদের দিক থেকেও মানবিক হতে হবে। স্বাস্থ্যতে যথেষ্ট উন্নয়ন করেছে রাজ্য সরকার। এই উন্নয়নের সুবিধা যাতে সকলে নিতে পারেন, তার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর।’