গরুর মাংস বহন করার সন্দেহে নাসিমকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৩
ইমামা খাতুন
- আপডেট :
১০ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার
- / 6
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: গরুর মাংস নিয়ে যাচ্ছে, সন্দেহে গত মঙ্গলবার সিওয়ানের হাসানপুরের বাসিন্দা নাসিম কুরেশিকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। তাঁকে তড়িঘড়ি সিওয়ানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু বুধবার সকালে ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাসিম কুরেশি (৫৬)-র মৃত্যু হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিওয়ান জেলার হাসানপুর গ্রামের বাসিন্দা নাসিম কুরেশি এবং তার ভাইপো ফিরোজ আহমেদ কুরেশি তাঁদের কিছু পরিচিতজনের সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়েছিলেন। পাটনার থেকে প্রায় ১১০ কিমি. উত্তর-পশ্চিমে জোগিয়া গ্রামের কাছে কয়েকজন তাঁদের থামায় বলে জানান ফিরোজ কুরেশি।
ফিরোজ দাবি করেন, তিনি জোগিয়া গ্রামে প্রবেশ করলে সরপঞ্চ ও কয়েকজন লোক তাকে ও তার চাচাকে বাধা দেয়। তার কথায়, ‘তারা আমাদের মোপেড থামিয়ে দেয় এবং সরপঞ্চ অভিযোগ করেন যে আমরা গরুর মাংস নিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি আমাদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন। কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসি। এরপর নাসিমকে হাতের কাছে পেয়ে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করে উত্তেজিত জনতা।
ফিরোজ দাবি করেন, তিনি আবার ঘটনাস্থলে ফিরে এসে তার চাচা (নাসিম)-কে জনতা মারধর করতে দেখেন, এরপর তিনি রসুলপুর থানায় খবর দেন। ফিরোজ আরও বলেন, ‘আমি থানায় যাওয়ার সময় দেখি আমার চাচাকে পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু যখন থানায় পৌঁছালাম, তিনি সেখানে ছিলেন না। সেখানে উপস্থিত লোকজন, যার মধ্যে একজন নিজেকে রসুলপুরের মুখিয়া (পঞ্চায়েত প্রধান) বলে দাবি করেছেন, বলেছেন যে আমার চাচা অসুস্থ বোধ করছেন এবং তাকে সিওয়ানের দারোন্ডায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ফিরোজ জানতে পারেন যে, তাঁর চাচা নাসিম কুরেশিকে সিওয়ানের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে চিকিৎসার জন্য পাটনা মেডিকেল কলেজে রেফার করেন। তবে পাটনায় নিয়ে যাওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। নাসিমের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ তুলেছেন, পুলিশ অভিযুক্তদের রক্ষার চেষ্টা করছে।
ছাপড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) গৌরব মঙ্গলা বলেছেন, ‘আমরা এটিকে মব লিঞ্চিং মামলা হিসেবে বিবেচনা করছি। এফআইআর-এ নাম থাকা সরপঞ্চ সহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার সময় নাসিম গরুর মাংস নিয়ে যাচ্ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ধারা ৩০২ (খুন), ৩৪ (সাধারণ অভিপ্রায়ে একাধিক ব্যক্তি দ্বারা কাজ করা) এবং ৩৭৯ (চুরি) এর অধীনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করেছে।
এই ঘটনায়, স্থানীয় সরপঞ্চ (প্রধান) সুশীল সিং এবং অন্য দু’জন রবি শাহ এবং উজ্জ্বল শর্মাকে মব লিঞ্চিংয়ের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিহতের ভাগ্না ফিরোজ আহমেদ কুরেশির অভিযোগে পুলিশ আরও দু’জনকে খুঁজছে, যাদের নামে এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে।