আসিফ রেজা আনসারী: স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি একদিকে যেমন আপসহীন সংগ্রামী ছিলেন, তেমনি দেশের বহুত্ববাদ রক্ষার বিষয়ে ছিলেন সমান সচেতন। যদিও স্বাধীন দেশ নেতাজির দেখা হয়নি। তবে এতবছর পরেও সাধারণ মানুষের মনে নেতাজি সম্পর্কে আবেগ কাজ করে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল ফরওয়ার্ড ব্লকের তরফে নেতাজির জন্মদিনকে মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়। সরকারিভাবেও যাতে সসম্মানে পালন করা হয়, সেই আর্জি রয়েছে। দেখা যাচ্ছে এই বছরও নেতাজির জন্মদিনে ছুটি দেয়নি কেন্দ্র সরকার। এই বিষয়টাকে মোটেও ভালো চোখে দেখছে না বামেরা। শুধু তাই নয়, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসও সমালোচনা করছে কেন্দ্রের।
নেতাজির জন্মজয়ন্তী নিয়ে রাজ্য বামফ্রন্টের সভাপতি বিমান বসু সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া বিবৃতিতে বলেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদী নেতা দেশপ্রেমিক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৯তম জন্মদিন ২৩ জানুয়ারি ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসাবে পালন করা হবে। প্রতি বছর এই দিন বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে ‘দেশপ্রেম দিবস’ পালন করা হয়। কেন্দ্রীয় নেতাজি জয়ন্তী কমিটি এই কর্মসূচিতে বামফ্রন্টের সব শরিকদল-সহ সাধারণ মানুষকে অংশগ্রহণ করতে অনুরোধ করছে। তিনি আরও জানান, দেশপ্রেম দিবসে সকাল সাড়ে ১১টায় কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে নেতাজি মূর্তিতে মাল্যদান, কথায়-গানে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হবে। অন্যদিকে নেতাজির দল ফরওয়ার্ড ব্লকের পক্ষেও দলের প্রধান অফিসের সামনে নেতাজির বই ও জীবন নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী থাকবে। দেশের মধ্যে বিভেদ রোধে নেতাজির আদর্শ তুলে ধরবে বামেরা।
অন্যদিকে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নেতাজি হিন্দু-মুসলিম সবাইকে নিয়ে চলতেন। আর বিজেপি সব সজায়গাতেই সাম্প্রদায়িকীকরণ করেছে। নেতাজির নীতি ও আদর্শকে বড় ভয় করে গেরুয়াপন্থীরা। সেই কারণেই ছুটি ঘোষণা করতে ভয় করছে। রাজ্য সরকারও নেতাজিকে সম্মান জানাতে অনেক দেরি করেছে বলেও অভিযোগ করেন নরেন চট্টোপাধ্যায়।
এ দিকে রাজ্য কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি ও সাবেক সাংসদ অধাপক প্রদীপ ভট্টাচার্য তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নেতাজি এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি সমস্ত সম্প্রদায়কে একত্রিত করার ক্ষমতা রাখতেন। বহুত্ববাদী ভারতের ভাবনা ও আত্মাকে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে সবাইকে নিয়ে চলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনেক। তাই তাঁর জন্মদিনকে জাতীয় ছুটি হিসাবে ঘোষণা হওয়া দরকার। বর্তমান সময়ে নেতাজির ভাবনা ও আদর্শকে বাস্তবায়ন করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য।
বিশিষ্ট সংখ্যালঘু নেতা ও মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সদস্য মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, যাঁদের লড়াই, সংগ্রাম ও আদর্শে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও সৌভ্রাতৃত্বের বার্তা আছে মোদি সরকার তাঁদের পছন্দ করেন না। তাই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সবধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তিত্বের জন্মদিনের গুরুত্বকে গৌণভাবে দেখা হচ্ছে। মোদি সরকারের এই সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির আমরা তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানাচ্ছি। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে জাতীয় ছুটি ঘোষণার এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে স্বাধীনতা সংগ্রামের আপসহীন রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।