১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নতুন বিদেশী আইন: ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা সিংভির

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার
  • / 18

নয়াদিল্লি: বিরোধীদের প্রবল আপত্তির মধ্যেই লোকসভায় পেশ করা হয় অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিক সংশোধনী বিল। ইতিমধ্যে বিলটি আইনে পরিণত হয়েছে। শতাব্দীপ্রাচীন অভিবাসন আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে সেটির সরলীকরণ, জাতীয় নিরাপত্তা শক্তিশালী করা ও অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার লক্ষ্যেই নতুন আইনটি সংশোধন করেছে কেন্দ্র। মূলত বাংলাদেশ থেকে এসে ভারতে থেকে যাওয়া মুসলিমদের ধরপাকড় করাই ওই আইনের প্রধান লক্ষ্য হতে চলেছে বলে দাবি বিরোধীদের। আগামী বছর অসম, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে পূর্ব ভারতে হিন্দু মেরুকরণের হাওয়া তোলার চেষ্টা হবে বলে মনে করছে বিরোধীরা। এবার নয়া অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিক আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে তোপ দাগলেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি। তিনি বলেন, এই আইন বিদেশিত্বের ধারণাকে গ্রহণ করে মানুষকে অপরাধী করে তুলবে। যে কোনও সন্দেহজনক বিদেশিকে কারণ ছাড়াই গ্রফতার, আটক, হয়রানি এবং নির্বাসনের অনুমতি দিয়েছে।

Read More: ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে অস্বীকার, উত্তরপ্রদেশে মুসলিম কিশোরকে কিল-চড়-ঘুষি

এক ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বলেন, “এই আইনটি অভিবাসন নীতিকে সুস্ট পরিচালনার জন্য নয়। এই আইন অনিয়ন্ত্রিত কর্তৃপক্ষকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং কাফকায়েস্কের চিত্র এবং অরওয়েলিয়ান নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তুলে দিয়েছে।” কংগ্রেস নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, এই আইন সন্দেহজনক বিদেশিদের টার্গেট করে বানানো হয়েছে। যে কোনও সময় অন্যদিকে মোড় নেবে। অপব্যবহার করা হবে আইনের। নতুন অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিক আইনের সবচেয়ে উদ্বেগজনক ধারা হল ৩। এতে একাধিক ভয়ঙ্কর বিধান রয়েছে। সিংভির বক্তব্য, “সরকার যে কাউকে সন্দেহজনক মনে করলে তাকে সংজ্ঞায়িত করে  আটক ও গ্রেফতার করতে পারে। কোনও কারণ ছাড়াই বিদেশীকে ফেরত পাঠানো যাবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হল, আইনে অভিবাসন কর্তাদের ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কাউকে সন্দেহজনক মনে গ্রেফতার করলেও উক্ত ব্যক্তি কোনও আপিল করতে পারবে না, কোনও শুনানিও হবে না। অভিবাসন কর্মকর্তার সিদ্ধান্তি চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।”

নয়া আইনের ৭ নম্বর ধারার বিতর্কিত বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘একজন বিদেশি কোথায় থাকবেন, কার সঙ্গে কথা বলবেন, কখন রিপোর্ট করতে হবে, কী প্রকাশ করতে পারবে এবং তাকে কি ধরণের আচরণ করতে হবে, তা ঠিক করে দেবে এই আইন। অর্থাৎ বিদেশিদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও অতিথি হিসাবে নয় বরং অনুপ্রবেশকারী হিসাবে তাদের সঙ্গে আচরণ করা হবে।” সুপ্রিম আইনজীবীর কথায়, ভারতে প্রবেশ বা প্রস্থানের সময় সকল বিদেশির কাছে বৈধ পাসপোর্ট এবং ভিসা থাকতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং নার্সিং হোমের মতো প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের তত্ত্বাবধানে থাকা বিদেশি নাগরিকদের সম্পর্কে অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বিদেশিদের আনার জন্য বিমান সংস্থা এবং পরিবহন অপারেটরদের দায়ী করা হবে। যদি কোনও বিদেশিকে ভারতে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়, তা হলে সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থা এবং পরিবহন অপারেটরদের অবিলম্বে তাদের ভারত থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় জরিমানা এবং তাদের যানবাহনও বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

নতুন বিদেশী আইন: ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা সিংভির

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার

নয়াদিল্লি: বিরোধীদের প্রবল আপত্তির মধ্যেই লোকসভায় পেশ করা হয় অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিক সংশোধনী বিল। ইতিমধ্যে বিলটি আইনে পরিণত হয়েছে। শতাব্দীপ্রাচীন অভিবাসন আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে সেটির সরলীকরণ, জাতীয় নিরাপত্তা শক্তিশালী করা ও অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার লক্ষ্যেই নতুন আইনটি সংশোধন করেছে কেন্দ্র। মূলত বাংলাদেশ থেকে এসে ভারতে থেকে যাওয়া মুসলিমদের ধরপাকড় করাই ওই আইনের প্রধান লক্ষ্য হতে চলেছে বলে দাবি বিরোধীদের। আগামী বছর অসম, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে পূর্ব ভারতে হিন্দু মেরুকরণের হাওয়া তোলার চেষ্টা হবে বলে মনে করছে বিরোধীরা। এবার নয়া অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিক আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে তোপ দাগলেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি। তিনি বলেন, এই আইন বিদেশিত্বের ধারণাকে গ্রহণ করে মানুষকে অপরাধী করে তুলবে। যে কোনও সন্দেহজনক বিদেশিকে কারণ ছাড়াই গ্রফতার, আটক, হয়রানি এবং নির্বাসনের অনুমতি দিয়েছে।

Read More: ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে অস্বীকার, উত্তরপ্রদেশে মুসলিম কিশোরকে কিল-চড়-ঘুষি

এক ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বলেন, “এই আইনটি অভিবাসন নীতিকে সুস্ট পরিচালনার জন্য নয়। এই আইন অনিয়ন্ত্রিত কর্তৃপক্ষকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং কাফকায়েস্কের চিত্র এবং অরওয়েলিয়ান নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তুলে দিয়েছে।” কংগ্রেস নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, এই আইন সন্দেহজনক বিদেশিদের টার্গেট করে বানানো হয়েছে। যে কোনও সময় অন্যদিকে মোড় নেবে। অপব্যবহার করা হবে আইনের। নতুন অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিক আইনের সবচেয়ে উদ্বেগজনক ধারা হল ৩। এতে একাধিক ভয়ঙ্কর বিধান রয়েছে। সিংভির বক্তব্য, “সরকার যে কাউকে সন্দেহজনক মনে করলে তাকে সংজ্ঞায়িত করে  আটক ও গ্রেফতার করতে পারে। কোনও কারণ ছাড়াই বিদেশীকে ফেরত পাঠানো যাবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হল, আইনে অভিবাসন কর্তাদের ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কাউকে সন্দেহজনক মনে গ্রেফতার করলেও উক্ত ব্যক্তি কোনও আপিল করতে পারবে না, কোনও শুনানিও হবে না। অভিবাসন কর্মকর্তার সিদ্ধান্তি চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।”

নয়া আইনের ৭ নম্বর ধারার বিতর্কিত বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘একজন বিদেশি কোথায় থাকবেন, কার সঙ্গে কথা বলবেন, কখন রিপোর্ট করতে হবে, কী প্রকাশ করতে পারবে এবং তাকে কি ধরণের আচরণ করতে হবে, তা ঠিক করে দেবে এই আইন। অর্থাৎ বিদেশিদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও অতিথি হিসাবে নয় বরং অনুপ্রবেশকারী হিসাবে তাদের সঙ্গে আচরণ করা হবে।” সুপ্রিম আইনজীবীর কথায়, ভারতে প্রবেশ বা প্রস্থানের সময় সকল বিদেশির কাছে বৈধ পাসপোর্ট এবং ভিসা থাকতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং নার্সিং হোমের মতো প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের তত্ত্বাবধানে থাকা বিদেশি নাগরিকদের সম্পর্কে অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বিদেশিদের আনার জন্য বিমান সংস্থা এবং পরিবহন অপারেটরদের দায়ী করা হবে। যদি কোনও বিদেশিকে ভারতে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়, তা হলে সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থা এবং পরিবহন অপারেটরদের অবিলম্বে তাদের ভারত থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় জরিমানা এবং তাদের যানবাহনও বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।