কিবরিয়া আনসারী: ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দিকভ্রস্ট হয়ে গিয়েছে, তারা নিজেদের দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়ে শাসকের কোলে বসে গিয়েছে। কলকাতায় এসে বললেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা। দেশের সংবাদমাধ্যম দূর্বল হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন নিজেকে ‘নন বায়োলজিক্যাল’ (ঈশ্বরের দূত) বলে দাবি করেন। তখন সংবাদমাধ্যম মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য করার পরও সংবাদমাধ্যম একটিও প্রশ্ন করার সাহস দেখায় না। সংবাদমাধ্যমের ঐতিহ্য শেষ হয়ে যাচ্ছে। দূর্বল হয়ে যাচ্ছে ভারতীয় মিডিয়া।
নানা ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মের সংমিশ্রণে তৈরি দেশের ঐতিহ্য। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ বলা হয় ভারতকে। কিন্তু এক শ্রেণীর সংবাদমাধ্যম এই ঐতিহ্যকে নষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক। পরঞ্জয়ের কথায়, বর্তমানে দেশজুড়ে এক বিচারধারা, এক মতবাদ এবং এক ভাবনা-চিন্তা তৈরির চেষ্টা চলছে। এই কাজে সংবাদমাধ্যমকে হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে শাসক শ্রেণী। মিডিয়া নিদিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের দলদাসে পরিণত হয়েছে। বিরোধীদের আক্রমণ করলেও শাসককে প্রশ্ন করার সাহস নেই তাদের। এটিই বর্তমান দেশের চতুর্থ স্তম্ভ।
কিন্তু কেনো মিডিয়ার এই দুরবস্থা? প্রশ্ন তুলেছেন পরঞ্জয়। সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, চতুর্থ স্তম্ভের প্রধানকাজ শাসককে প্রশ্ন করা। দেশজুড়ে নোটবন্দির ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মানুষ মারাও গিয়েছে। কিন্তু এই নোটবন্দির ফলে দেশের কি লাভ হল! তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করেনি। বেকার যুবরা কাজ পাচ্ছে না! তা নিয়েও প্রশ্ন নেই। সংবাদমাধ্যম শাসকের কোলে বসে গিয়েছে।
শুক্রবার ‘কালধ্বনি’ ম্যাগাজিনের ৪০ বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুণা সেন সভাঘরে ‘উদার অর্থনীতি ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম’ শীর্ষক বিষয়ে তিনি বলেন, দেশজুড়ে লক্ষাধিক সংবাদপত্র, কয়েকশো টিভি চ্যানেল রয়েছে। ক’টা চ্যানেল সরকারের সমালোচনা ও প্রশ্ন করে। যারা সমালোচনা ও প্রশ্ন করার সাহস দেখায় তাদের অফিস-বাড়িতে আয়কর বিভাগকে পাঠিয়ে হেনস্থা করা হয়।
দেশজুড়ে উদ্বেগজনক ভাবে মাথা চাড়া দিয়েছে ভুয়ো খবর। ফেক নিউজ সমাজে ঝুঁকি বাড়িয়েছে। এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ের যুবকরা ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমে আসক্ত। দেশের প্রায় ৫০ কোটি মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে। ফলে সহজেই মানুষের মধ্যে ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে তারা সক্ষম। হোয়াটসঅ্যাপের সমস্ত ভুয়ো তথ্যকে অনায়াসে বিশ্বাস করে নিচ্ছে মানুষ। সবচেয়ে উদ্বেগের দেশের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ঘৃণাভরা খবর ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরাসরি এর প্রভাব মুসলিমদের উপর গিয়ে পড়ছে। এভাবেই মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে তুলতে বাধ্য করা হচ্ছে। এর জন্য দায়ী সংবাদমাধ্যম। পরঞ্জয়ের সংযোজন, “আমরা যদি স্বাধীন স্বতন্ত্র মিডিয়া তৈরি করতে না পারি, তাহলে ঘৃণাভরা, ভুয়ো খবর, মিথ্যা ও অর্ধসত্য খবর সমাজকে দূষিত করে যাবে।”