জনপ্রিয়তাই কি ভাদু শেখের মৃত্যুর জন্য দায়ী! উত্তর খুঁজছে বগটুই গ্রাম

- আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২২, বৃহস্পতিবার
- / 4
কৌশিক সালুই, বীরভূম: – রকেটের গতিতে উত্থান এবং রবিনহুড ইমেজই কাল হল ভাদু শেখের। মাত্র কয়েক বছরেই নিজের ক্যারিশমায় ক্ষমতা ও খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যান তিনি। প্রথমে বরশাল গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে উপপ্রধান। আর তাতেই একে একে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ প্রবল শত্রুতে পরিণত হল। এলাকাবাসীদের দাবি, তিনি যদি নৃশংসভাবে খুন না হতেন তাহলে হয়তো এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড হত না।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বগটুই গ্রামে এসে ওই নৃশংস হত্যালীলাকে গভীর চক্রান্ত হতে পারে বলে মনে করছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের খুন হওয়া উপপ্রধান ভাদু শেখ এবং বীরভূমের রামপুরহাট এর বগটুই গ্রাম। ভাদু এবং বগটুই গ্রামের শিশু ও মহিলাসহ আটজনের গণহত্যা। বিগত তিন দিনে জেলা থেকে রাজ্য ছাড়িয়ে সারাদেশের বহু চর্চিত এবং কলঙ্কিত অধ্যায়। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজের বাড়ির কিছুটা অদূরে খুন হন ভাদু শেখ। ঘটনার ৪ দিন পরেও ওই এলাকার বহু বাড়িতে এখনও পর্যন্ত হাড়ি চড়েনি। অনেক পরিবার উপপ্রধানের খুনের শোকে এখনও মুহ্যমান।
কারণ ভাদু একাংশ মানুষের হয়ে মসিহা হয়ে উঠেছিলেন। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা, অসুস্থর চিকিৎসা কিংবা দুস্থদের পড়াশোনা যেকোনও বিষয়ে সাহায্যের জন্য এই উপ-প্রধানের কাছে গেলে খালি হাতে ফিরে আসতে হতো না বলে দাবি তাদের।
মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা করতে আসা এক অশীতিপর বৃদ্ধা মহিলা আপন মনে বির বির করে বলে চলেছেন চারদিন আগেই তো ভাদু বলল খালা তোমার কুড়ে ঘরটা বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে দ্রুত পাকা করে দেব। তোমার বাড়ির পাশের ওই মাটির নর্দমাটাও ইট সিমেন্ট দিয়ে করে দেব। ‘ও তো চলে গেল’ এখন আমাদেরকে দেখবে কে? ও মারা যাওয়ার পর আমাদের কারোর বাড়িতে রান্না হয়নি। ভাদুকে যদি না মারত তাহলে তো পরে আর কিছু হত না। ভাদুর ঘনিষ্ঠজনদের দাবি এক বছর আগে ভাদুর ভাইকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। সেই ঘটনায় জড়িত ছিল ভাদুর-ই ডানহাত বলে পরিচিত ছেলেরা। যদিও সেদিন ভাই নয়, টার্গেট ছিলেন ভাদু। সামান্য গাড়ি চালক থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হয়ে এলাকার বেতাজ বাদশা হওয়া অনেকেরই পছন্দ হয়নি। সেই তালিকায় ছিল ভাদুর একসময়ের ঘনিষ্ঠজনরা। তাদের মূল সমস্যা ছিল এলাকার দখলদারি না পাওয়া। আর তাতেই পরপর ভাদু ও তার ভাই সহ কয়েকজন খুন হলেন তাদের হাতে। এছাড়া আরও একটি বিষয় উঠে আসছে। ভাই বাবর খুন হওয়ার পর ভাদু শেখ পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে ছিলেন।
যদিও সে নিরাপত্তা পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি বলে তাদের পরিবারের অভিযোগ। পুলিশ এ বিষয়টি অস্বীকার করেছে। নাটকীয় এবং মর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাই এখনও অনেক গ্রামবাসী বলে চলেছেন ভাদুর মৃত্যু না হলে হয়তো এমন বীভৎস ঘটনা চোখে দেখতে হত না।