উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়নগর: মরশুমি ফলের মধ্যে অন্যতম এবং অর্থকরী ফল আম। বছরের এই সময় অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে আমের গাছে মুকুল আসা শুরু করে। তবে মুকুলগুলো ঝড়ে বা অন্য কারণে ঝরে পড়ে, যা চাষিদের জন্য দুঃখজনক। এ বিষয়ে কথা বলেছেন নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রমের কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রধান সিনিয়র কৃষি বিজ্ঞানী ড. চন্দন কুমার মণ্ডল। তিনি জানিয়েছেন, আমের মুকুল ঝরার কারণ হিসেবে মূলত হপার পোকার আক্রমণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বৃষ্টি, ঝড়, শিলা বৃষ্টি ও বন্যা দায়ী। এর পাশাপাশি মাটির রসের অভাবও মুকুল ঝরার আরেকটি কারণ।
ড. চন্দন কুমার মণ্ডল আরও জানান, মুকুল ঝরার রোধে প্রথমত আমবাগান পরিষ্কার এবং আগাছামুক্ত রাখতে হবে। এছাড়াও গাছের গোড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পৌঁছাতে হবে। তিনি পরামর্শ দেন, মুকুল আসার আগে হপার পোকার জন্য স্প্রে করা উচিত। স্প্রে করতে হবে ডায়াজিনন ৬০ ইসি বা লেবাসিড ৫০ ইসি, যা ৮.৫ লিটার জলে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর দুই বার করতে হবে। ফল গুটি আকার ধারণ করার পর ১০-২০ দিন পর বোরিক এসিড স্প্রে করলে আমের গুটির পরিমাণ বাড়বে।
কীভাবে বাঁচাবেন আমের মুকুল, তা তুলে ধরতে গিয়ে নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রমের প্রধান সিনিয়র কৃষি বিজ্ঞানী ড: চন্দন কুমার মণ্ডল আরও বললেন, প্রাকৃতিক পরাগায়নের জন্য আম বাগানে মৌমাছি পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, বিভিন্ন আম গাছ এবং ফুল গাছ লাগিয়ে পরাগায়নের ক্ষেত্রে সাহায্য করা সম্ভব। তবে মুকুল ফোটার পর কোনও ধরনের স্প্রে করা উচিত নয়, কারণ এতে পরাগায়ন ব্যাহত হতে পারে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে, মুকুল ঝরা রোধ সম্ভব এবং ফলন ভালো হবে। এর পাশাপাশি কৃষকরা যদি নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করেন এবং সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখেন, তাহলে এ ধরনের সমস্যা থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। উপযুক্ত পরিচর্যা এবং প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করলে আম গাছের মুকুল ঝরার ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব, যা চাষিদের লাভের সুযোগ বাড়াতে সহায়তা করবে।