BREAKING:
রাজ্যসভায় পেশ ওয়াকফ বিল সংক্রান্ত জেপিসি রিপোর্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জমি, চাষিদের পাশে দাঁড়াতে বড় সিদ্ধান্ত রাজ্যের আরও দুটি নয়া কোর্স চালু করছে আলিয়া সিটু-র অ্যাপ ক্যাব ধর্মঘট আজ বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি, জারি কমলা সতর্কতা রমজানে মসজিদে ক্যামেরার ব্যবহার নিষিদ্ধ করল সউদি আরব হাইটেক টুকলি! মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষায় এআইয়ের ব্যবহার, হাতেনাতে ধরা পড়ল পরীক্ষার্থী ভাষার জন্য তামিলরা প্রাণ দিয়েছে, ভাষার সঙ্গে খেললে ফল ভালো হবে না, হুঙ্কার কমল হাসানের সলমন রুশদির হামলাকারী দোষী সাব্যস্ত, ন্যূনতম ৩০ বছর কারাদণ্ডের সম্ভাবনা ৬ ইসরাইলি জিম্মিকে ছাড়ল হামাস, জেলমুক্তির অপেক্ষায় ৬০০ ফিলিস্তিনি কুম্ভমেলায় যাওয়ার পথে দূর্ঘটনায় মৃত পশ্চিমবঙ্গের ৬, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর 

মুর্শিদাবাদে প্রাইমারি স্কুলগুলোতে ৫০-এর বেশি ভর্তি করায় নিষেধ

রিপোর্টার:
  • শেষ আপডেট: মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২৫

সংকটে পড়ুয়া এবং অভিভাবকরা

মুহাম্মদ মুস্তাক আলি, জঙ্গিপুর: মুর্শিদাবাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রাক্-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তির আসন সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। একটি শ্রেণিতে কোনওমতেই পঞ্চাশ জনের বেশি পড়ুয়াকে ভর্তি না করার নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকদের। এমন নির্দেশিকার অনুলিপিও সংরক্ষিত আছে ‘পুবের কলম’ দফতরে। আর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে ডিআইয়ের এমন নির্দেশিকার কারণে জেলার বেশ কিছু স্কুলে বেশ কিছু পড়ুয়াকে ভর্তি করতে পারছেন না অভিভাবকরা বলে জানা গেছে। নিজেদের ছেলে-মেয়েদের কাছাকাছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরের শুরুতেই ভর্তি করতে না পেরে অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অভিভাবকদের বক্তব্য, সন্তানের বয়স পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সরকার পোষিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সুযোগ না পেলে তাদের শিক্ষার ভবিষ্যৎটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। যে-সমস্ত পড়ুয়ার এখনও ভর্তি নেয়নি জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এমন পড়ুয়া অর্থাৎ ভর্তি হতে ইচ্ছুক সকল ছাত্রছাত্রীকে দ্রুত ভর্তির সুযোগ দেওয়ার দাবি উঠেছে শিক্ষানুরাগী মহলে।
ভর্তি সমস্যার বিষয়টি কার্যত মেনে নিয়েছেন মুর্শিদাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আশিস মার্জিত। একইসঙ্গে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে আন্তরিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খড়গ্রামের বিধায়ক তথা জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বলেন, সমস্ত পড়ুয়াকে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় পার হয়ে গেলেও শিশুরা ভর্তি হতে না পারায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ-১ সার্কেলের সারিকা খাতুন, ফিরোজ সেখ, ভুলু খান, আকতারা বিবি প্রমুখ অভিভাবক। তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে তাদের সন্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্রুত ভর্তি এবং প্রয়োজনীয় আসন সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দাবি জানিয়েছেন।
মুর্শিদাবাদ জুড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি সমস্যা যে যথার্থ, তা উঠে এসেছে বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকদের কাছ থেকেও। রঘুনাথগঞ্জ-১ পূর্বচক্রের ১৬নং সুজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৭নং চড়কা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬৮নং রওজাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭৫নং বড়শিমূল প্রাথমিক বিদ্যালয়-সহ একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি হল, তাদের লিখিতভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে কোনও শ্রেণিতেই ৫০ জনের বেশি পড়ুয়াকে ভর্তি না করা হয়। অতিরিক্ত আবেদন থাকলে সেগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই অতিরিক্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করে কী করবেন, তা যথেষ্ট রহস্যময়।
রঘুনাথগঞ্জ পূর্বচক্রের অবর বিদ্যালয়ের এসআই আকবর রহমানও এমন নির্দেশিকা জারি করার সত্যতা মেনে নিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য জেলা ডিআই (প্রাইমারি) এই নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন। একাধিক ßুñলের প্রধানশিক্ষক জানিয়েছেন, লিখিত নির্দেশিকার কারণেই তাঁরা ৫০ জনের বেশি পড়ুয়া কোনও ক্লাসে ভর্তি নিতে পারছেন না। তবে ব্যতিক্রম ঘটছে কোনও কোনও স্কুলে ৬৮নং রওজাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা প্রি-প্রাইমারি শ্রেণিতে এখনও পর্যন্ত ৬৭ জন পড়ুয়া ভর্তি নিয়েছেন। অভিভাবকদের এবং স্থানীয়স্তরে চাপ থাকায় অনেক স্কুল জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিআইয়ের নির্দেশিকার বাইরে গিয়ে পড়ুয়া ভর্তি করছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পড়ুয়াদের ভর্তি সংকটের বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জঙ্গিপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ সোহরাব। তাঁর মতে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বহু দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পায়। মুহাম্মদ সোহরাব আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এমন পরিস্থিতি চললে সকলের জন্য লেখাপড়ার অধিকার (রাইট টু এডুকেশন) খর্ব হতে পারে। তিনি মনে করেন, বেসরকারি স্কুলের দাপট যেভাবে বাড়ছে তাতে সরকারি স্কুলগুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের পাশাপাশি পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
সামাজিক সংগঠন মুর্শিদাবাদ জনবিকাশ সমিতির সভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন এ প্রসঙ্গে বলেন, এমনিতেই মুর্শিদাবাদ শিক্ষা এবং আর্থিক, উভয় দিক দিয়ে দেশের মধ্যে অনেক পিছিয়ে। এরপরেও প্রাথমিকস্তরেই লেখাপড়ার সুযোগ সংকুচিত হলে সংকট আরও বাড়বে। শিক্ষার অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে। তিনি সব পড়ুয়ার লেখাপড়ার সুযোগ এবং বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদে রয়েছে ৩১৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সার্কেলের সংখ্যা ৪২। শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার বলে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আশিস মার্জিত জানিয়েছেন। এ ছাড়াও রয়েছেন কিছু পার্শ্ব শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে মরিয়া প্রচেষ্টা করছেন। আশিস মার্জিতের অভিযোগ, কেন্দ্র সরকারের শিক্ষানীতি বহুক্ষেত্রে ব্যাহত করেছে শিক্ষা ব্যবস্থাকে। তিনি আশ্বাস দেন, মুর্শিদাবাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সংকট খুব শীঘ্রই কাটিয়ে ওঠা যাবে।

এই সংক্রান্ত আরও খবর
Copyright © 2025 Puber Kalom All rights reserved.
Developed By eTech Builder