রামপুরহাট কাণ্ডঃ রাজ্যপালের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মমতা, কড়া চিঠি রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে

- আপডেট : ২২ মার্চ ২০২২, মঙ্গলবার
- / 13
পুবের কলম প্রতিবেদক: রামপুরহাট কাণ্ডে ভিডিও বিবৃতি প্রকাশ করে উষ্মা প্রকাশ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের। এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিব হরি কৃষ্ণ দ্বিবেদীর থেকে রিপোর্ট চাইলেন তিনি। এদিন এই নিয়ে পাল্টা রাজ্যপালকে দুষেছেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তার কাজকর্মে এবং বক্তব্যে কেন্দ্রের শাসকদলের সুর পাওয়া যাচ্ছে বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে রাজ্যপালের বক্তব্যকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রামপুরহাট- কাণ্ড নিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ তিনি। আর সে কারণেই রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে চিঠি লিখে তার মনোভাব প্রকাশ করলেন তিনি। মমতার দাবি রাজ্যপালের পদে আসীন থেকে ধনকড়ের এই মন্তব্য অনভিপ্রেত। পাশাপাশি রাজ্যপালকে তাঁর কটাক্ষ কেন বিজেপি শাসিত রাজ্যে এমন কোনও ঘটনা ঘটলে তিনি নীরব থাকেন। মুখ্যমন্ত্রীর আরও অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গে যখনই কোনও ‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা’ ঘটে রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের সমালোচনা ও নিন্দার সুযোগ ছাড়েন না।
এ দিন সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মন্তব্য অসাংবিধানিক। রামপুরহাটের ঘটনা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ঘটনার পরে পরে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছে। স্থানীয় পুলিশস্টেশনে কর্তব্যরত অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সিট গঠন করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১০জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। জেলাশাসক-সহ জেলা পুলিশের পদস্থকর্তারা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। পুলিশের মহানির্দেশককে আমি বলেছি, ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি আরও লিখেছেন, আপনি নিশ্চই অবগত আছেন যে এই ঘটনায় তৃণমূলের একজন কর্মী, যিনি আবার পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তার ওপর অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা নৃশংস হামলা চালিয়েছে। হামলায় তার মৃত্যুও হয়েছে। দুষ্কৃতীরা কোন রাজনৈতিক দলের তা তদন্ত করে দেখা হবে। তাছাড়া সেখানে বেশ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। তাতে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। কোনওভাবেই এটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে রাজ্যের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করতেই পরিকল্পনা করেই এই হামলা চালানো হয়েছে। তদন্তে স্পষ্ট হয়ে যাবে, কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আর তাদের উদ্দেশ্যই বা কি?
এদিন তিনি তার ক্ষোভ লুকিয়ে রাখেননি। সরাসরি রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে তিনি লিখেছেন, এই ধরনের ঘটনা অত্যান্ত স্পর্শকাতর। এই সব ঘটনার ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি এবং অনভিপ্রেত মন্তব্য না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। যদিও আপনি আপনার টুইটার হ্যান্ডেল এই ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করেছেন, যার উদ্দেশ্য এমন একটা ভাবমূর্তি তৈরি করা যাতে স্পষ্ট হয় এই রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। সাংবিধানিক পদ থেকে এই ধরনের মন্তব্য অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্খিত, এবং দুর্ভাগ্যজনক।
প্রসঙ্গত,সোমবার রাতে রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের বরিশাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখের খুনের ঘটনার পর উত্তপ্ত হয় ওই এলাকার রাজনীতি। পুলিশের তরফ থেকে বলা হয় এই ঘটনায় আগুন লেগে পুড়ে গিয়েছে সাতটি বাড়ি। এই ঘটনা নিয়েই মধ্যেই উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। শাসক এবং বিরোধীদের চাপানউতোর চলছে।
এরইমধ্যে টুইট করে সরকারকে বিঁধেছেন রাজ্যপাল। তিনি লিখেছেন বীরভূমের রামপুরহাটে যে ঘটনা ঘটেছে তা স্পষ্ট করে রাজ্যে হিংসার রাজনীতি চলছে ও জনগন আইন-শৃঙ্খলা হীনতায় ভুগছে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় আট জনের মৃত্যু হয়েছে আমি জরুরী ভিত্তিতে রাজ্যের মুখ্য সচিবের কাজ থেকে রিপোর্ট তলব করছি। প্রয়াতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। করা হচ্ছে এই টুইটের পাল্টা হিসাবেই এ দিন কড়া চিঠি দিলেন মমতা।