রাইট টু হেলথ: ‘রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রশ্ন করা উচিত’

- আপডেট : ৭ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার
- / 9
প্রতি বছর ৭ এপ্রিল পালিত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এই দিনটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র প্রতিষ্ঠা দিবস। এই বছর ওয়ার্ল্ড হেলথ ডে-র থিম: ‘মাই হেলথ, মাই রাইট’ অর্থাৎ, ‘আমার স্বাস্থ্য, আমার অধিকার’। কিন্তু, আমাদের দেশে স্বাস্থ্য কি মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত? স্বাস্থ্যের অধিকার মানে আসলে কী? কোন সব রোগ এখন ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছে? এই সব বিষয় নিয়ে বললেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পুবের কলম প্রতিবেদক বিশ্বজিৎ ঘোষ।
প্রশ্ন: বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস-এ এই বছরের থিম ‘মাই হেলথ, মাই রাইট’। কী বলবেন?
উত্তর: এই ক্ষেত্রে প্রথমেই বলা দরকার যে স্বাস্থ্যের অধিকার বলতে আমরা কী বুঝি। স্বাস্থ্যের অধিকার মানে হচ্ছে, সব মানুষের জন্য যখন যেখানে প্রয়োজন তখন সেখানেই যেন উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে পারেন মানুষ। কারও ক্ষেত্রে যেন বাধা না হয়ে দাঁড়ায় আর্থিক অক্ষমতা।
অর্থাৎ, গরিব মানুষ বলে কেউ যেন অসুস্থ না হয়ে পড়েন অথবা বিনা চিকিৎসায় যেন প্রাণ না হারান। এই অসুস্থ না হয়ে পড়ার বিষয়টি নির্ভর করে বেশ কয়েকটি বুনিয়াদি মানবাধিকার বিষয় অ্যাভেলেবেল কি না, তার উপর। যেমন, নিরাপদ পানীয় জল, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যকর বাসস্থান, নিকাশি ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পুষ্টিকর খাদ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নিরাপদ কাজের পরিবেশ, সামাজিক স্থিতি, ন্যায়বিচার, গোপনীয়তার অধিকার। এই সব বিষয় নিশ্চিত না থাকলে স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করা যায় না।
প্রশ্ন: ভারতে স্বাস্থ্য কি মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত?
উত্তর: ১৯৭৮-এ আলমাআতা ঘোষণায় এই স্লোগান নেওয়া হয়েছিল যে, সকলের জন্য স্বাস্থ্য। পৃথিবীর প্রায় সব ক’টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা মিলে এটা করেছিলেন। সমস্ত অসুস্থতা এবং অস্বাস্থ্যের মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব, পুষ্টির অভাব, নিরাপদ পানীয় জলের অভাব, উপযুক্ত বাসস্থানের অভাব, বিশ্রামের অভাব, এই সব বিষয়কে। এগুলি সবই আর্থ-সামাজিক কারণ। অসুখের এই কারণগুলি নিরসনের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত যে কোনও সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। অথচ আমাদের দেশে কী হচ্ছে, হেলথ ইন্ডাস্ট্রির রমরমার সঙ্গে পণ্য হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্যপরিষেবা বড় একটি বাণিজ্যে পর্যবসিত হয়েছে। প্রাইভেট হেলথ সেক্টরের যে বল্গাহীন মুনাফা তার উপর লাগাম কষাতে ব্যর্থ সরকার।
মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার আমাদের দেশে বড় একটি ধাক্কা পেয়েছে। ২০১৭-তে নতুন নীতি নিয়ে আসে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এর আগের সরকারের নতুন স্বাস্থ্য নীতির প্রস্তাবনায় ছিল রাইট টু হেলথ অ্যাক্ট চালু করা হবে। কোথাও যদি আইন লঙ্ঘন হয়, তা হলে শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার সেটাকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। এখন স্বাস্থ্য বলতে মানুষ বোঝেন ঝা-চকচকে কর্পোরেট হাসপাতাল, বিমার একটি কার্ড, বড় বড় ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি, নতুন নতুন নামের ওষুধ। স্বাস্থ্য মানে যে ওই বুনিয়াদি মানবাধিকারের বিষয়গুলিকে নিশ্চিত করে অসুখটাকে আটকে দেওয়া, সেই ধারণাটাকেই বদলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান যে সরকার রয়েছে তারা অন্তত স্বাস্থ্যের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে দেখছে না।
প্রশ্ন: লোকসভা ভোটের পর্ব চলছে। রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনী ইস্তাহার এবং রাইট টু হেলথ, কী বলবেন?
উত্তর: কোনও কোনও বাম দল তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে এ বারও রেখেছে যে মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এই বিষয়টি যে দলগুলি সরকার গঠন করার জায়গায় থাকে তাদের কোনও নির্বাচনী ইস্তাহারে এই বারেও এখনও নজরে পড়েনি। এটা সাধারণ মানুষের দাবি হওয়া উচিত। যখন এই রাজনৈতিক দলগুলি ভোট চাইতে যাবে মানুষের দোড়গোড়ায় তখন তাদের প্রত্যেকের কাছে প্রশ্ন করা উচিত যে, স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে আপনারা কী ভাবছেন, কী বক্তব্য আপনাদের ইস্তাহারে?
প্রশ্ন: স্বাস্থ্যের সঙ্গে তো পরিবেশও যুক্ত…
উত্তর: পরিবেশ একটি বড় বিষয়। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যবেক্ষণ: পৃথিবী জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে দিনে দিনে মানুষের অসুখবিসুখ বাড়ছে এবং জৈব জ্বালানির দহন কমানোর উদ্যোগে আশা অনুরূপ সাফল্য না আসার ফলে দূষণমুক্ত বাতাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ। এর ফলে, দূষিত বাতাসের কারণে প্রতি ৫ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন।
প্রশ্ন: কোন রোগগুলি ভয়ংকর আকার ধারণ করছে এখন?
উত্তর: সংক্রামক রোগ বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশঙ্কা, আবার যে কোনও সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে কোভিড-১৯-এর মতো কোনও প্যান্ডেমিক। তেমনই ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, মানসিক অসুস্থতা, এই সব অসংক্রামক রোগগুলিও মহামারীর আকার নিচ্ছে। আমাদের দেশে এখন ১০০ জনের মৃত্যু হলে, তার মধ্যে ৬৫ জনের মৃত্যু হয় অসংক্রামক বিভিন্ন রোগে।
ভারতে এই মুহূর্তে অন্তত সাত কোটি মানুষ কোনও না কোনও মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন। অথচ আমাদের স্বাস্থ্যের টোটাল যে বাজেট তার মাত্র এক শতাংশ খরচ হয় মেন্টাল হেলথে। এপ্রিল মাসের গোড়া থেকে হিট ওয়েভ চালু হয়ে গিয়েছে এখন। হিটস্ট্রোকে গরিব মানুষ এবং শিশুরা সব থেকে বেশি আক্রান্ত হন।