২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেনে সরকার ফেলতে নারাজ রাশিয়া

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১০ মার্চ ২০২২, বৃহস্পতিবার
  • / 6

প্রতীকী ছবি

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : ইউক্রেনে রুশ হামলা অব্যাহত। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনও। রুশ আগ্রাসনের মুখে পড়ে ফের বিপর্যস্ত ইউক্রেন। বুধবার ইউক্রেনের জাইতোমির এবং খারকিভ শহরের জনবসতি এলাকায় রুশ বায়ু সেনা নিরন্তর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ ইউক্রেনের। পূর্ব ইউক্রেনের সেভেরোদোনেস্কৎ শহরে রুশ বাহিনীর আক্রমণে নিহত হয়েছেন ১০জন ইউক্রেনের নাগরিক। এক সংবাদ সংস্থা সূত্রে এই খবর মিলেছে। সুমি শহরে রুশ বায়ু সেনার হামলায় ১৬ বছর বয়সি সাম্বো মার্শাল আর্টের তারকা খেলোয়াড় আর্তিওম প্রিমেঙ্কো সহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা মারা গিয়েছেন। অবিরাম রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় ৫ হাজার লোক প্রাণ বাঁচাতে সুমি ছেড়েছেন।

যুদ্ধ চললেও রাশিয়া বুধবার জানিয়ে দিয়েছে ইউক্রেনের জেলেনস্কি সরকারকে ফেলতে চায় না তারা। আসলে মঙ্গলবার রাতেই হতাশার সুরে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাঁরা ১৩দিন ধরে একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ন্যাটো কোনও সাহায্য করছে না। রাশিয়ার ভয়ে ন্যাটো কোনও পদক্ষেপ করছে না। এই পরিস্থিতিতে তিনি তাই আর ন্যাটোতে যোগ দেওয়া নিয়ে কোনও আগ্রহ দেখাবেন না। তাঁর এই মন্তব্যের পরই এদিন প্রতিক্রিয়া দিয়েছে রাশিয়া। বলেছে জেলেনস্কি সরকারকে উৎখাত তাদের লক্ষ্য নয়।

প্রায় দু’সপ্তাহের লড়াইয়ে বিধ্বস্ত ইউক্রেন। বিভিন্ন শহর ছেড়ে প্রাণ হাতে পালাচ্ছেন মানুষ। ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক জানান,অবরুদ্ধ দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর মারিউপোল সহ বুধবার ৬টি মানব করিডোর করা হয়েছে। সাধারণ নাগরিকদের নিরাপদস্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত লড়াই বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রুশ সেনা। একই পথে হেঁটেছে ইউক্রেন সেনাও। ফলে নিরীহ নাগরিকদের সরানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

তবে এদিনও ব্রিটেনের কাছে অনুরোধ অব্যাহত রেখেছে ইউক্রেন। মস্কোকে চাপে ফেলতে তারা ব্রিটেনের কাছে আবেদন করেছে রাশিয়াকে জঙ্গিরাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করার জন্য। রাশিয়ার উপর চাপ বাড়াতে পদক্ষেপ করেছে আমেরিকাও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে রাশিয়ার থেকে অপরিশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা সহ অন্যান্য শক্তি আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে আমেরিকা। রাশিয়ায় ব্যবসা বন্ধ করেছে ম্যাকডোনাল্ডস, স্টারবাকস, কোকা-কোলা সহ একাধিক বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েকটি সংস্থা। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হুঁশিয়ারি, ইউক্রেনে কোনও দিনই পুতিনের জয় হবে না। ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিও কাউকে ভয় করেন না এবং এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও কিয়েভ ছেড়ে পালাননি। পালটা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে রাশিয়াও। বুধবার এই প্রসঙ্গে রাশিয়া বলেছে, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে আসলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে আমেরিকা। একটি সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর মিলেছে, ন্যাটো অন্তভূক্ত মলডোভার একটি অংশ আবার রাশিয়াকে সমর্থন করেছে। তাদের ৮০০ সেনা রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে নামতে চলেছে।

মঙ্গলবারই এক বিরাট সংখ্যক ভারতীয় পড়ুয়া ইউক্রেন ছেড়েছেন। আর এবার ভারতীয় পড়ুয়াদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে প্রতিবেশী দেশ বেলারুশ। ইউক্রেনের মতো প্রতিবেশী বেলারুশেও বহু ভারতীয় পড়ুয়া রয়েছেন। ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। বন্ধু দেশ হিসেবে বেলারুশও এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। এখন বেলারুশে পড়তে যাওয়া ভারতীয়রাও সেখান থেকে চলে আসতে চাইছেন। প্রায় ২০০০ ভারতীয় পড়ুয়া বর্তমানে বেলারুশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষারত বলে জানা গিয়েছে।

 

অভিযোগ পড়ুয়াদের ভারতে ফেরার অনুমতি দিচ্ছে না বেলারুশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের কর্তারা। শুধু তাই নয় ইউক্রেন যুদ্ধে বেলারুশ প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ার পর সেদেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক বিমানের যাতায়াতও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে উড়ছে শুধু সামরিক বিমান। এই অবস্থায় তাঁরা কীভাবে দেশে ফিরবেন বুঝে উঠতে পারছেন না ভারতীয় পড়ুয়াদের। এদিকে রাশিয়া এ দিন বিভিন্ন দেশের একটি তালিকা প্রকাশ করে জানিয়েছে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলি তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেনি। সেই তালিকায় আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি ছাড়াও রয়েছে কানাডা, সুইৎজারল্যান্ড, নরওয়ে, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ান ।

রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, এই মুহূর্তে অন্তত ২০ লক্ষ ইউক্রেনবাসী দেশ ছাড়ছেন কিংবা সীমান্তে হত্যে দিয়ে পড়ে আছেন দেশান্তরী হওয়ার আশায়। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর দেখেনি ইউরোপ।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ইউক্রেনে সরকার ফেলতে নারাজ রাশিয়া

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২২, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : ইউক্রেনে রুশ হামলা অব্যাহত। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনও। রুশ আগ্রাসনের মুখে পড়ে ফের বিপর্যস্ত ইউক্রেন। বুধবার ইউক্রেনের জাইতোমির এবং খারকিভ শহরের জনবসতি এলাকায় রুশ বায়ু সেনা নিরন্তর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ ইউক্রেনের। পূর্ব ইউক্রেনের সেভেরোদোনেস্কৎ শহরে রুশ বাহিনীর আক্রমণে নিহত হয়েছেন ১০জন ইউক্রেনের নাগরিক। এক সংবাদ সংস্থা সূত্রে এই খবর মিলেছে। সুমি শহরে রুশ বায়ু সেনার হামলায় ১৬ বছর বয়সি সাম্বো মার্শাল আর্টের তারকা খেলোয়াড় আর্তিওম প্রিমেঙ্কো সহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা মারা গিয়েছেন। অবিরাম রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় ৫ হাজার লোক প্রাণ বাঁচাতে সুমি ছেড়েছেন।

যুদ্ধ চললেও রাশিয়া বুধবার জানিয়ে দিয়েছে ইউক্রেনের জেলেনস্কি সরকারকে ফেলতে চায় না তারা। আসলে মঙ্গলবার রাতেই হতাশার সুরে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাঁরা ১৩দিন ধরে একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ন্যাটো কোনও সাহায্য করছে না। রাশিয়ার ভয়ে ন্যাটো কোনও পদক্ষেপ করছে না। এই পরিস্থিতিতে তিনি তাই আর ন্যাটোতে যোগ দেওয়া নিয়ে কোনও আগ্রহ দেখাবেন না। তাঁর এই মন্তব্যের পরই এদিন প্রতিক্রিয়া দিয়েছে রাশিয়া। বলেছে জেলেনস্কি সরকারকে উৎখাত তাদের লক্ষ্য নয়।

প্রায় দু’সপ্তাহের লড়াইয়ে বিধ্বস্ত ইউক্রেন। বিভিন্ন শহর ছেড়ে প্রাণ হাতে পালাচ্ছেন মানুষ। ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক জানান,অবরুদ্ধ দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর মারিউপোল সহ বুধবার ৬টি মানব করিডোর করা হয়েছে। সাধারণ নাগরিকদের নিরাপদস্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত লড়াই বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রুশ সেনা। একই পথে হেঁটেছে ইউক্রেন সেনাও। ফলে নিরীহ নাগরিকদের সরানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

তবে এদিনও ব্রিটেনের কাছে অনুরোধ অব্যাহত রেখেছে ইউক্রেন। মস্কোকে চাপে ফেলতে তারা ব্রিটেনের কাছে আবেদন করেছে রাশিয়াকে জঙ্গিরাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করার জন্য। রাশিয়ার উপর চাপ বাড়াতে পদক্ষেপ করেছে আমেরিকাও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে রাশিয়ার থেকে অপরিশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা সহ অন্যান্য শক্তি আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে আমেরিকা। রাশিয়ায় ব্যবসা বন্ধ করেছে ম্যাকডোনাল্ডস, স্টারবাকস, কোকা-কোলা সহ একাধিক বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েকটি সংস্থা। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হুঁশিয়ারি, ইউক্রেনে কোনও দিনই পুতিনের জয় হবে না। ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিও কাউকে ভয় করেন না এবং এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও কিয়েভ ছেড়ে পালাননি। পালটা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে রাশিয়াও। বুধবার এই প্রসঙ্গে রাশিয়া বলেছে, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে আসলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে আমেরিকা। একটি সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর মিলেছে, ন্যাটো অন্তভূক্ত মলডোভার একটি অংশ আবার রাশিয়াকে সমর্থন করেছে। তাদের ৮০০ সেনা রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে নামতে চলেছে।

মঙ্গলবারই এক বিরাট সংখ্যক ভারতীয় পড়ুয়া ইউক্রেন ছেড়েছেন। আর এবার ভারতীয় পড়ুয়াদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে প্রতিবেশী দেশ বেলারুশ। ইউক্রেনের মতো প্রতিবেশী বেলারুশেও বহু ভারতীয় পড়ুয়া রয়েছেন। ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। বন্ধু দেশ হিসেবে বেলারুশও এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। এখন বেলারুশে পড়তে যাওয়া ভারতীয়রাও সেখান থেকে চলে আসতে চাইছেন। প্রায় ২০০০ ভারতীয় পড়ুয়া বর্তমানে বেলারুশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষারত বলে জানা গিয়েছে।

 

অভিযোগ পড়ুয়াদের ভারতে ফেরার অনুমতি দিচ্ছে না বেলারুশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের কর্তারা। শুধু তাই নয় ইউক্রেন যুদ্ধে বেলারুশ প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ার পর সেদেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক বিমানের যাতায়াতও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে উড়ছে শুধু সামরিক বিমান। এই অবস্থায় তাঁরা কীভাবে দেশে ফিরবেন বুঝে উঠতে পারছেন না ভারতীয় পড়ুয়াদের। এদিকে রাশিয়া এ দিন বিভিন্ন দেশের একটি তালিকা প্রকাশ করে জানিয়েছে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলি তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেনি। সেই তালিকায় আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি ছাড়াও রয়েছে কানাডা, সুইৎজারল্যান্ড, নরওয়ে, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ান ।

রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, এই মুহূর্তে অন্তত ২০ লক্ষ ইউক্রেনবাসী দেশ ছাড়ছেন কিংবা সীমান্তে হত্যে দিয়ে পড়ে আছেন দেশান্তরী হওয়ার আশায়। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর দেখেনি ইউরোপ।