BREAKING:
রাজ্যসভায় পেশ ওয়াকফ বিল সংক্রান্ত জেপিসি রিপোর্ট অধিকার হরণের প্রতিবাদে সোমবার রাজ্যের আইনজীবীদের ধর্মঘট হেট স্পিচ: বিজেপি নেতা পিসি জর্জের আগাম জামিন নাকচ দুবাইয়ে সব বেসরকারি স্কুলে বাধ্যতামূলক হল আরবি ৫০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা সিআইএর পাকিস্তান ম্যাচের আগে বাবা তৌসিফকে স্মরণ শামির ইউজিসির খসড়া নির্দেশিকার বিরোধিতায় জাতীয় কনভেনশন, যোগ দিল অবিজেপিশাসিত চার রাজ্য হেমন্ত রাজ্যে মুসলিম সাংসদ রাকিবুল হুসেনের ওপর প্রাণঘাতী হামলা শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন সোনিয়া গান্ধি ভাষা ও সাহিত্য হোক দ্বীন প্রচারের মাধ্যম কুরআনের আলোকে মাতৃভাষার মর্যাদা

শহীদ আবদুল হামিদের নামাঙ্কিত স্কুলের নাম বদল

রিপোর্টার:
  • শেষ আপডেট: সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আহমদ হাসান:  নাম বদলানোর ধুম উঠেছে ভারত ও বাংলাদেশে। তবে উপমহাদেশের অন্য এক রাষ্ট্র পাকিস্তান এখনও এই ব্যাধিতে তেমন একটা আক্রান্ত হয়নি। অনেকের ধারণা, নাম বদলালে ইতিহাসও মুছে দেওয়া যাবে। তাই তারা ক্ষমতার দম্ভে কিংবা পুরনো প্রতিশোধের স্পৃহায় একের পর এক নাম বদল করে যাচ্ছে। এদের ধারণা, নাম পাল্টে দিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণের তৃপ্তি পাওয়া সম্ভব।

সাম্প্রতিক বাংলাদেশের কথাই ধরা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর লেটেস্ট বদলেছে ঢাকা স্টেডিয়ামের নাম। ‘বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম’ হিসেবে এতদিন এর নাম ছিল। আর বাংলাদেশে বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় যার নামের সঙ্গে শেখ মুজিবের নাম জড়িয়ে রয়েছে, তা পরিবর্তন করা হয়েছে। পর পর ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাতারাতি বদলে দেওয়া হয়েছে। বলতে গেলে ‘নাম পরিবর্তনের অভিযান’ শুরু হয়েছে।

তবে নাম পরিবর্তনে চ্যাম্পিয়ান হচ্ছে ভারত। ভারতের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর লক্ষ্য মুসলিম বা ইসলাম সংক্রান্ত নাম যেখানেই রয়েছে, তা পরিবর্তন করার। তাই এতদিনের ইলাহাবাদ হয়ে গেল প্রয়াগরাজ। মোঘলসরাই স্টেশনের নাম বদলে রাখায় বিজেপির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নামে। ফৈজাবাদ জেলার নাম রাখা হয়েছে অযোধ্যা। এই জেলাতেই ছিল বাবরি মসজিদ।

কিন্তু সদ্য যে নামটি বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে পরিবর্তন করা হয়েছে তাতে অন্তত কিছু মানুষ যে অবাক হবেন তাতে স¨েহ নেই। উত্তরপ্রদেশের এক স্কুলের নাম ছিল শহীদ বীর আবদুল হামিদের নামে। তিনি ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যে যুদ্ধ হয়েছিল, তাতে পাকবাহিনীর কয়েকটি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তাঁর এই সাহস ও আত্মদানে স্বীকৃতিস্বরূপ এই বীর সেনানিকে দেওয়া হয়েছিল পরম বীর চক্র উপাধি। আবদুল হামিদ অগ্রসরমান পাকিস্তানী ট্যাঙ্ক বাহিনীর একটি নয়, দু’টি নয় পর পর চারটি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছিলেন। শত্রুবাহিনীর পঞ্চম ট্যাঙ্ক ধ্বংস করতে গিয়ে তিনি তাদের পাল্টা আঘাতে শহীদ হন।

১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর কেটে গেছে অর্ধশতাধীর বেশি সময়। এখন দিল্লির মসনদে সমাসীন সংঘ পরিবারের রাজনৈতিক শাখা বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে এখন চলছে সবকিছুর গৈরিকীকরণ এবং নাম বদলের অভিযান।

উত্তরপ্রদেশের গাজীপুরের ধামপুর গ্রামে একটি সরকারি স্কুল ছিল। ১৯৬৫ সালের বীর সেনানি বীর আবদুল হামিদের নামে এই স্কুলের নামকরণ হয়েছিল। অবশ্য এই নামকরণ এমনই এমনই হয়নি। ভারতের পরম বীর চক্রধারী আবদুল হামিদ এই স্কুলটিতে পড়াশোনা করেছিলেন।

কেন এই নাম বদল? মিন মিন করে তার একটি কৈফিয়ত দিয়েছেন ওই স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেছেন, স্কুলটি বছরের পর বছর ধরে বীর আবদুল হামিদের নামে পরিচিত হলেও আসলে নাকি সরকারি রেকর্ডে নাম পরিবর্তনটি রেকর্ড করা হয়ে ওঠেনি। তাই তিনি নিদির্ধায় নাম পরিবর্তনের সুপারিশ করেছিলেন। আর গাজীপুরের প্রশাসন তা মেনেও নিয়েছেন।স্কুলটি নতুন নামের সঙ্গে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী মোদিজির নামও টেনে আনা হয়েছে। নতুন নাম ‘পিএম শ্রী কম্পোজিট বিদ্যালয় ধামপুর’। ওই গ্রামে অবস্থিত আবদুল হামিদের আত্মীয়রা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বলা হচ্ছে, দেশের জন্য শহীদ হলেও আবদুল হামিদ আসলে একজন মুসলিম। তাই সুযোগ পাওয়ামাত্র এই স্কুলটির নাম থেকে আবদুল হামিদের নাম মুছে দেওয়া হয়েছে। লোকসভার সদস্য চন্দ্রশেখর আজাদ রাবণ এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, বিজেপি এই বীর মুসলিম যোদ্ধার নামটি  উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিবর্তন করেছে।

 

বিজেপি এর দ্বারা ঘৃণার প্রচার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে চায়। তিনি আরও বলেন, স্কুলটি আবদুল হামিদের নামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই ঘটনা নিন্দনীয় এবং একজন শহীদ বীর সেনানির সর্বোচ্চ কুরবানির প্রতি অপমানস্বরূপ। উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়ি বলেছেন, গাজীপুর এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট ধামপুরের  স্কুলটি থেকে বীর আবদুল হামিদের নাম বাদ দিয়েছে। আমি ফোনে তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরাও বলছেন, এটা শুধু আবদুল হামিদ নয়, দেশের সমস্ত সেনার প্রতি অপমান। স্থানীয় লোকেরা বলছেন, বিদ্যালয়ের ওই প্রধান শিক্ষক এর আগেও একবার স্কুলটির নাম পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, বার বার ভারতীয় মুসলিমদের বর্তমান বিজেপি সরকারের আমলে অপমান ও হতমান করার চেষ্টা হচ্ছে। তাদের সমস্ত কৃতিত্বকে মুছে ফেলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সবথেকে দুঃখের কথা, বীর আবদুল হামিদের স্কুলের নাম পরিবর্তনে মিডিয়া ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের  তরফ থেকে তেমন কোনও প্রতিবাদ নেই। এটাও দেখা গেছে, যখনই নির্বাচন আসে, প্রধানমন্ত্রী মোদি থেকে শুরু করে ছোট-বড় সকল বিজেপি নেতাই মুসলিমদের বিরুদ্ধে কল্পিত-অকল্পিত ঘৃণা ছড়িয়ে নির্বাচন জিততে চায়।

 

যেন এটাই তাদের নির্বাচন জেতার একমাত্র হাতিয়ার। অথচ ভারতের সংবিধান, ঐক্যবদ্ধ দেশের চেতনা এমনকি নির্বাচন কমিশনের নিয়মকানুন এর ঘোরতর বিরোধী। কিন্তু এখন সংবিধানের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে যার দ্বারা দেশের বৈচিত্রময় চরিত্রকে বিনাশ করার প্রচেষ্টা চলছে। আখেরে কিন্তু আমাদের দেশের জন্য এই ধরনের নীতি ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবে। কিন্তু এসব কথা বোঝার মত সংঘ পরিবারের সময় নেই। তাদের লক্ষ্যই হচ্ছে, ঘৃণা ছড়িয়ে একপক্ষীয় অগণতান্ত্রিক রাজত্ব কায়েম করা।

ভারতে মুসলিমদের সংখ্যা সরকারিভাবে ২০ কোটিরও বেশি। আর বেসরকারিভাবে এই সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি। এই বিপুল সংখ্যক ভূমিপুত্র তাহলে নিজেদের দেশে কিভাবে বেঁচে থাকবে? তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কথাও ইদানিং কোনও কোনও গেরুয়াপন্থী সশধে উচ্চারণ করছেন। তাই দেখা যাচ্ছে, আবদুল হামিদের মতো জীবন উৎসর্গকারী পরম বীর চক্র পাওয়া এক মুসলিমেরও এ দেশের গেরুয়াপন্থীদের কাছে কোনও স্থান নেই। স্বাভাবিকভাবেই ভারতের মুসলিমরা এই ধরনের অধিকার হরণ মেনে নেবে না।

উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, যে সমস্ত বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া বাংলাদেশে একই ধরনের ঘটনার কথা বলে শুধু শোরগোল নয়, আসমান-জমিন তোলপাড় করছেন তাঁরাও কিন্তু নিজের দেশের বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব। আলেকজান্ডার না বলে থাকলেও অনেকে কিন্তু বলবেন, ‘সত্য সেলুকাস! কি বিচিত্র এই দেশ’।

 

এই সংক্রান্ত আরও খবর
Copyright © 2025 Puber Kalom All rights reserved.
Developed By eTech Builder