ভোলবদল শিয়ালদহে:ঝাঁ চকচকে শপিংমল, মিলছে পোশাক- খাবারও
- আপডেট : ১৬ জানুয়ারী ২০২৩, সোমবার
- / 8
অর্পিতা লাহিড়ী: প্রায় চারবছর পর কলকাতায় পা রাখলেন বিথীকা মজুমদার। একসময় কলকাতায় থাকলেও এখন স্থায়ী নিবাস দিল্লিতেই। মাঝখানে করোনা মহামারির দাপটে ইচ্ছা থাকলেও আর আসা হয়নি। শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে একেবারে হতভম্ব অবস্থা তাঁর। একি এটা শিয়ালদহ স্টেশন নাকি কেতাদুরস্ত শপিংমল। সেনকো, অঞ্জলি জুয়েলার্স, পিসিচন্দ্র থেকে শুরু করে বাজার কোলকাতা কি নেই , এখানেই শেষ নয় শপিং করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলে পেট ভরানোর জন্য আছে কেএফসি, হলদিরাম , সহ হরেক কিসিমের আয়োজন।
এশিয়ার অন্যতম ব্যস্ত এই স্টেশন দিয়ে লোকাল এবং দূরপাল্লা সব মিলিয়ে প্রায় লক্ষাধিক যাত্রী যাতায়াত করেন।
শিয়ালদহ স্টেশন ১৮৬৯ খ্রীস্টাব্দে চালু হয়। এখান থেকে তৎকালীন পূর্ব বঙ্গীয় রেল বিভাগ এর আওতায় ছিল। দেশভাগ এর আগে দার্জিলিং মেল শিয়ালদহ থেকে রাণাঘাট, গেদে-দর্শনা পথ ধরে বর্তমান বাংলাদেশ এর মধ্যে দিয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছাত। ইতিহাসবিদদের মতে কলকাতা তখন ছিল প্রায় জনমানবহীন তখন এসব অঞ্চল ছিল বিশাল জলাভূমি। যারমধ্যে ছিল কিছু দ্বীপের মত জমি। শিয়ালদার পূর্ববর্তী নাম ছিল শিয়ালডিহি। পুরনো অভিধান অনুযায়ী ‘শিয়াল’ শিয়রে বা পূর্বদিক এবং ডিহি কথাটার অর্থ গ্রাম।
সুতানটি-গোবিন্দপুর-কলকাতা এ তিন অঞ্চল মিলে কলকাতার পত্তনের পর সেই শিয়ালডিহি কালক্রমে হয়েছে শিয়ালদা। যার সরকারি নাম শিয়ালদহ। দেশভাগের সাক্ষীও থেকেছে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই স্টেশন। তৎকালীন পূর্ববাংলা থেকে রেলে চেপে শিয়ালদহ স্টেশনে আসতেন সবহারিয়ে এপারে আসা ছিন্নমূলরা। তবে বদলে যাওয়া শিয়ালদহ স্টেশনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বর্তমানে যাত্রীরা সকলেই খুশি।
অন্যদিকে লকডাউনের পরবর্তী সময়ে বদলে গিয়েছে প্ল্যাটফর্মের শ্রেণি বিন্যাসও। এতদিন পর্যন্ত শিয়ালদহ স্টেশনে ২১টি প্ল্যাটফর্ম থাকলেও নম্বর থাকত ১৪এ অবধি। ৪ ও ৪এ শিয়ালদহ উত্তর শাখায়, শিয়ালদহ মেন শাখায় ৯, ৯ এ, ৯বি, ৯সি ও শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ১০ ও ১০এ, ১৪ ও ১৪এ নিয়ে মানুষের সমস্যা বাড়ছিল। নয়া নম্বর অনুযায়ী, শিয়ালদহ উত্তর শাখায় ১এ পরিচিত হবে ১ হিসেবে। ১ পরিচিত হবে ১এ হিসেবে। ২ হল ২ হিসেবে, ৩ হল ৩, ৪ হল ৪ ও ৪এ, ৪এ হল ৫ এবং ৫এ, ৫ হল ৬, ৬ হল ৭, ৭ হল ৮, ৮ হল ৯, ৯ হল ১০, ৯সি হল ১১, ৯বি হল ১২, ৯এ হল ১৩ এছাড়া ৯ডি যা ইয়ার্ড প্ল্যাটফর্ম তা হল ১৪ নম্বর।
সোনারপুর থেকে কলকাতায় প্রতিদিন অফিস করতে আসেন বিভা পোদ্দার। পুবের কলমের প্রতিবেদককে তিনি জানালেন এখন মানুষের হাতে সময় খুব কম। চারদিকে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটার সময় খুব কম। এখন অফিসে যাতায়াতের মাঝেই যা প্রয়োজনীয় তার সবটাই পেয়ে যাচ্ছেন।
বাঘাযতীনে থাকেন নন্দন সরকার। এখনও ছাত্র, সাফ জানালেন বদলে যাওয়া শিয়ালদহ স্টেশনে এখন মিলছে চেন রেস্তরাঁ গুলির খাবার। এরফলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাটা এখন শিয়ালদহ স্টেশনেই জমে উঠছে।
মহেন্দ্রদত্ত সন্সের শপ ম্যানেজার মুক্তিনাথ হালদার জানালেন এখন ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়লেও আর ভেজার ভয়নেই। সঙ্গে যদি ছাতা নাও থাকে তাতেও কুছ পরোয়া নেই। স্টেশনের মধ্যেই রয়েছে ছাতার দোকান। সমস্যার সমাধান এক নিমেষেই। কমদামি থেকে বেশি দামি সবধরণের ভালো ছাতা মিলছে।
শিয়ালদা স্টেশনের গ্রাউন্ডফ্লোরের একাংশ এবং দ্বিতলের অনেকটা অংশজুড়ে গড়ে উঠেছে এই শপিং কমপ্লেক্স।তিনতলায় করা হয়েছে রেলের রিজার্ভেশন কাউন্টার।সবকটি ফ্লোরে যেতে একাধিক সিঁড়ির সঙ্গে আছে লিফটের ব্যবস্থাও।
২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় টানা লকডাউনের মধ্যেই ভোলবদলে গিয়েছে শিয়ালদহ স্টেশনের। একবারে ফ্যামিলি মলের চেহারা নিয়েছে এই স্টেশন। মোট ২০টি ব্রান্ডেড শপ রয়েছে এই চত্বরে। এছাড়াও রয়েছে আধুনিক সমস্ত সুযোগ সুবিধা সহ এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জও। দূরপাল্লার যাত্রীদের যাদের রাতের দিকে ট্রেন তারা এখন প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করেননা। এঁদের ঠিকানা এখন এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জ।
পূর্বরেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী এই প্রতিবেদককে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে জানালেন কোভিডে রেলের বিপুল পরিমাণ লোকসান হয়েছে। তাই বিকল্প আয়ের সংস্থান করা হচ্ছে।অপারেটিং রেশিও প্রায় একশো ছুঁই যার অর্থ একটাকা আয় করতে গেলে প্রায় একটাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এরসঙ্গে কর্মীদের বেতন এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনসন। শুধু শিয়ালদহ স্টেশনই নয় ভারতীয় রেলের একাধিক স্টেশনকেই কেন্দ্র করে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এমনটাই জানালেন পূর্বরেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক। (৫৯৪)