ইম্ফল, ২১ ফেব্রুয়ারিঃ ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের দমন করতে চলছে একের পর এক এনকাউন্টার। অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠছে, মাওবাদী দমনের নামে অনেক সাধারণ মানুষকেও এনকাউন্টার করে খতম করে দেওয়া হচ্ছে। মাবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। আসলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘ডেড লাইন’ ঘোষণা করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ২০২৫ সালের মধ্যেই সম্পূর্ণ মাওবাদী মুক্ত হবে ছত্তিশগড়। সেই লক্ষ্যেই চলছে অভিযান। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ‘ছত্তিশগড় মডেল’ কি এবার চালু করা হচ্ছে মণিপুরে? মণিপুরে এখন রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে। ছত্তিশগড়ে শাহ যেমন ডেডলাইন ঘোষণা করে দিয়েছিলেন এক্ষেত্রে রাজ্যপাল হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সাত দিনের মধ্যে লুঠ হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ফেরত না দিলে ফল ভুগতে হবে। শুরু হবে ‘অ্যাকশন’। ফলে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, আলোচনা নয়, বলপ্রয়োগ করেই ‘শান্ত’ করা হবে মণিপুরকে।
এমনিতেই কুকিদের অভিযোগ, এতদিন রাজ্যের বিজেপি সরকার তাদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে। পদ্ম সরকার মেইতেইদের স্বার্থে কাজ করেছে। মেইতেইরা কার্যত ‘বিনা বাধায়’ থানা থেকে অস্ত্র লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে একাধিকবার। কেউ কেউ বলছেন, প্রশাসন এভাবে মেইতেইদের হাতে অস্ত্র ‘তুলে দিয়েছে’ কুকিদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য। রাষ্ট্রপতি শাসনেও প্রশাসন মেইতেইদের হয়ে কাজ করবে। কুকিদের আরও অভিযোগ, রাজ্যপাল যে অস্ত্র ফেরানোর কথা বলছেন তা শুধু কুকিদের জন্য। মেইতেইদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না। তারউপর যেভাবে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার পর গোটা সপ্তাহ ধরে দুষ্কৃতী ও সন্ত্রাসীদের নামে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা বেশিরভাগই কুকি গোষ্ঠী ভুক্ত বলে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। শুক্রবারও মণিপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান জারি ছিল। গত ক’দিন ধরে ৩০জনেরও বেশি সন্দেহ ভাজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কুকিদের অভিযোগ, তাদের গ্রামের স্বেচ্ছাসেবকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
যাতে কুকি গ্রামগুলিতে বাইরে থেকে কেউ এসে হামলা চালাতে না পারে সেজন্য এই স্বেচ্ছাসেবকরা গ্রাম পাহারাদার হিসেবে কাজ করত। আর এভাবে একাধিক গ্রাম স্বেচ্ছাসেবকদের আটক করা নিয়ে ফের পথে নেমেছে কুকিরা। ইম্ফল উপত্যকায় এদিন তুমুল বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। রাস্তা অবরোধ করা হয়। টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, ওয়াংখেই, উরিপক, থাংমেইবান্দা, খুরাই প্রভৃতি জেলায় বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। কাকচিং জেলা থেকে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবকদের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে তারা।
এদিন সকালেই পাঞ্জাও, পাল্লুমডায় অভিযান চালিয়ে ১০জনের বেশি স্বেচ্ছাসেবকদের গ্রেফতার করে নিরাপত্তা বাহিনী। নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা ১৭জন ‘জঙ্গি’কে গ্রেফতার করেছে। পালটা কুকিদের দাবি, যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই কুকি নেতা ও গ্রামরক্ষক। কুকিদের অভিযোগ, সশস্ত্র মেইতেইদের হামলা ঠেকাতে গ্রাম পাহারা দিত এই স্বেচ্ছাসেবকরা। তাদের গ্রেফতার করে আসলে মেইতেইদের হামলার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।