Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the login-customizer domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u419551674/domains/puberkalom.in/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
শবে বরাত: হাদিসের আলোকে কীভাবে পালন করব এই রাত | Puber Kalom
১৭ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শবে বরাত: হাদিসের আলোকে কীভাবে পালন করব এই রাত

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 12

মুহাম্মদ উসমান গনীঃ  শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্য-সহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দি-সহ নানা ভাষায় যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত।

 

কুরআনুল কারিমে এসেছে, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এই নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয়ই আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি।’ (সূরা দুখান, আয়াত: ১-৫) 

 

মুফাসসিরিনগণ বলেন: এখানে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা বরকতময় রজনী বলে শাবান মাসে পূর্ণিমা রাতকেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, রুহুল মাআনি ও রুহুল বায়ান) হযরত ইকরিমা রা. প্রমুখ কয়েকজন তাফসিরবিদ থেকে বর্ণিত আছে, সূরা দুখান-এর দ্বিতীয় আয়াতে বরকতের রাত বলে শবে বরাতকে বোঝানো হয়েছে।(মা’আরিফুল কুরআন)

 নবীজি সা. বললেন,  ‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। এই রাতে আল্লাহ্তায়ালা তাঁর বান্দাহ্দের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’

 

হাদিস শরিফে আছে, ‘হযরত মুআজ ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা. বলেছেন, আল্লাহ্তায়ালা অর্ধ-শাবানের রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫, ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, রাজিন: ২০৪৮; ইবনে খুজাইমা, কিতাবুত তাওহিদ, পৃষ্ঠা: ১৩৬, মুসনাদে আহমদ, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১৭৬) 

 

হযরত আয়শা সিদ্দিকা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ্ সা. নামাযে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদাহ্ করলেন যে আমার ধারণা হল তিনি (সা.) মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি (সা.) সিজদাহ্ থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন,  ‘হে আয়শা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে?’  আমি উত্তরে বললাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সা.)! আপনার দীর্ঘ সিজদাহ্ থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।’ নবীজি সা. বললেন, ‘তুমি কি জানো এটা কোন রাত?’ আমি বললাম, আল্লাহ্ ও আল্লাহর রাসূল সা.-ই ভালো জানেন।’ তখন নবীজি সা. বললেন, ‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। এই রাতে আল্লাহ্তায়ালা তাঁর বান্দাহ্দের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’ (শুআবুল ঈমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)

 

হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে: নবীজি সা. এই রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি সা. তাঁকে বলেছেন , ‘এই রাতে বনি কালবের ভেড়া,বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ্ ক্ষমা করে দেন।’ (তিরমিজি: ৭৩৯)

 

রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন , যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদাত করবে ও দিনে রোযা পালন করবে।’ (ইবনে মাজাহ)
নবী করিম সা. বলেছেন, ‘‘১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এই রাত ইবাদাত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোযা রাখো। কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ্তায়ালা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, ‘কোনও ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনও রিযিক-প্রার্থী আছো কি? আমি রিযিক দেব; আছো কি কোনও বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব।’ এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ্ মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ´ান করতে থাকেন।’ (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)

 

এছাড়া প্রতি মাসের ৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামেবিদের নফল রোযা তো আছেই, যা হযরত আদম আ. পালন করেছিলেন এবং আমাদের প্রিয় নবী সা.-ও পালন করতেন, যা মূলত সুন্নাত। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ফকিহ হাফিজ ইবনে রজব রহ. বলেন, এদিনের রোযা আইয়ামেবিদের রোযার অন্তর্ভুক্ত। (লাতায়িফুল মা’আরিফ, পৃষ্ঠা: ১৫১)। এছাড়া মাসের প্রথম তারিখ, মধ্য তারিখ ও শেষ তারিখ নফল রোযা গুরুত্বপূর্ণ। শবে বরাতের রোযা এর আওতায়ও পড়ে। সওমে দাউদি পদ্ধতিতে এক দিন পর এক দিন রোযা পালন করলেও প্রতিটি বিজোড় তারিখ রোযা হয় এবং শবে বরাতের রোযার শামিল হয়ে যায়।

 

সর্বোপরি রাসূল সা. রমযান মাসের পর রজব-শাবান মাসে বেশি নফল নামায ও নফল রোযা পালন করতেন, শাবান মাসে কখনও ১০টি, কখনও ১৫টি, কখনও ২০টি নফল রোযা, কখনও আরও বেশি রাখতেন। এমনকি উম্মুহাতুল মুমিনিনগণ বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. শাবান মাসে এভাবে নফল রোযা রাখা শুরু করতেন, মনে হ’ত, তিনি (সা.) আর কখনও রোযা ছাড়বেন না। (মুসলিম) 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

শবে বরাত: হাদিসের আলোকে কীভাবে পালন করব এই রাত

আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার

মুহাম্মদ উসমান গনীঃ  শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্য-সহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দি-সহ নানা ভাষায় যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত।

 

কুরআনুল কারিমে এসেছে, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এই নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয়ই আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি।’ (সূরা দুখান, আয়াত: ১-৫) 

 

মুফাসসিরিনগণ বলেন: এখানে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা বরকতময় রজনী বলে শাবান মাসে পূর্ণিমা রাতকেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, রুহুল মাআনি ও রুহুল বায়ান) হযরত ইকরিমা রা. প্রমুখ কয়েকজন তাফসিরবিদ থেকে বর্ণিত আছে, সূরা দুখান-এর দ্বিতীয় আয়াতে বরকতের রাত বলে শবে বরাতকে বোঝানো হয়েছে।(মা’আরিফুল কুরআন)

 নবীজি সা. বললেন,  ‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। এই রাতে আল্লাহ্তায়ালা তাঁর বান্দাহ্দের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’

 

হাদিস শরিফে আছে, ‘হযরত মুআজ ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা. বলেছেন, আল্লাহ্তায়ালা অর্ধ-শাবানের রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫, ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, রাজিন: ২০৪৮; ইবনে খুজাইমা, কিতাবুত তাওহিদ, পৃষ্ঠা: ১৩৬, মুসনাদে আহমদ, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১৭৬) 

 

হযরত আয়শা সিদ্দিকা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ্ সা. নামাযে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদাহ্ করলেন যে আমার ধারণা হল তিনি (সা.) মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি (সা.) সিজদাহ্ থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন,  ‘হে আয়শা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে?’  আমি উত্তরে বললাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সা.)! আপনার দীর্ঘ সিজদাহ্ থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।’ নবীজি সা. বললেন, ‘তুমি কি জানো এটা কোন রাত?’ আমি বললাম, আল্লাহ্ ও আল্লাহর রাসূল সা.-ই ভালো জানেন।’ তখন নবীজি সা. বললেন, ‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। এই রাতে আল্লাহ্তায়ালা তাঁর বান্দাহ্দের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’ (শুআবুল ঈমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)

 

হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে: নবীজি সা. এই রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি সা. তাঁকে বলেছেন , ‘এই রাতে বনি কালবের ভেড়া,বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ্ ক্ষমা করে দেন।’ (তিরমিজি: ৭৩৯)

 

রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন , যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদাত করবে ও দিনে রোযা পালন করবে।’ (ইবনে মাজাহ)
নবী করিম সা. বলেছেন, ‘‘১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এই রাত ইবাদাত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোযা রাখো। কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ্তায়ালা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, ‘কোনও ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনও রিযিক-প্রার্থী আছো কি? আমি রিযিক দেব; আছো কি কোনও বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব।’ এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ্ মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ´ান করতে থাকেন।’ (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)

 

এছাড়া প্রতি মাসের ৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামেবিদের নফল রোযা তো আছেই, যা হযরত আদম আ. পালন করেছিলেন এবং আমাদের প্রিয় নবী সা.-ও পালন করতেন, যা মূলত সুন্নাত। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ফকিহ হাফিজ ইবনে রজব রহ. বলেন, এদিনের রোযা আইয়ামেবিদের রোযার অন্তর্ভুক্ত। (লাতায়িফুল মা’আরিফ, পৃষ্ঠা: ১৫১)। এছাড়া মাসের প্রথম তারিখ, মধ্য তারিখ ও শেষ তারিখ নফল রোযা গুরুত্বপূর্ণ। শবে বরাতের রোযা এর আওতায়ও পড়ে। সওমে দাউদি পদ্ধতিতে এক দিন পর এক দিন রোযা পালন করলেও প্রতিটি বিজোড় তারিখ রোযা হয় এবং শবে বরাতের রোযার শামিল হয়ে যায়।

 

সর্বোপরি রাসূল সা. রমযান মাসের পর রজব-শাবান মাসে বেশি নফল নামায ও নফল রোযা পালন করতেন, শাবান মাসে কখনও ১০টি, কখনও ১৫টি, কখনও ২০টি নফল রোযা, কখনও আরও বেশি রাখতেন। এমনকি উম্মুহাতুল মুমিনিনগণ বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. শাবান মাসে এভাবে নফল রোযা রাখা শুরু করতেন, মনে হ’ত, তিনি (সা.) আর কখনও রোযা ছাড়বেন না। (মুসলিম)