১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

করোনা অতিমারির পর থেকে ওজন বাড়ছে শিশুদের

সামিমা এহসানা
  • আপডেট : ৯ নভেম্বর ২০২২, বুধবার
  • / 9

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: লক্ষ লক্ষ পরিবারে থাবা বসিয়ে আপনজনদের কেড়ে নিয়ে গেছে কোভিড। গোটা বিশ্বে মৃত্যু মিছিলের কারণ হলেও তাৎপর্যপূর্ণভাবে শিশুদের প্রতি আংশিক সদয় হয়েছিল কোভিড। কোভিডে শিশুমৃত্যুর হার ছিল হাতে গোনা। কিন্তু প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে শিশুদের এই মারণ ভাইরাস ক্ষতি করেছে বলে মত চিকিৎসকমহলের। ভারতীয় শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড পরবর্তীকালে ওজন বাড়ছে শিশুদের। দীর্ঘ লকডাউনে বাড়িতে থাকার অভ্যাস, মোবাইলে সময় কাটানো ও শরীরচর্চা না করার জন্য শিশুদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে বলে মত শিশু বিশে¡জ্ঞদের।

ইন্দিরা গান্ধি ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. ভানি এইচ এন জানিয়েছেন, কোভিডের আগে তাঁর কাছে প্রতিমাসে ৭-৮ জন শিশুর অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের স্থূলতার সমস্যা নিয়ে আসতেন।  এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫। অর্থাৎ কোভিড পরবর্তীকালে শিশুদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা বেড়েছে দ্বিগুন। ডা. ভানি জানিয়েছেন, কিশোর কিশোরীরা বিভিন্ন শারিরিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে যাচ্ছে, অথচ দেখা যাচ্ছে ওই সব সমস্যার মূল লুকিয়ে আছে তাদের স্থূলতায়।

অতিমারির তীব্রতা কমার পর থেকে কিশোররা ব্রেস্ট ডেভলপমেন্ট, মাইক্রোপেনিস ও কিশোরীরা অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ব্রণ, ঘাড়ের কাছে পিগমেন্টেশনের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে যাচ্ছে। এই সব সমস্যার মূলেও আছে কিশোর-কিশোরীদের স্থূলতা। ডা. ভানি জানিয়েছেন বেঙ্গালুরু ও আশপাশের অন্যান্য এলাকায় শিশুদের ওজন দিন দিন বাড়ছে। আর এর পিছনে দায়ী অনেকগুলি ফ্যাক্টর। তার মধ্যে একটি হল চিপস জাতীয় অন্যান্য প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ার প্রবণতা। ইন্দিরা গান্ধি ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ওজন ২৫-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের বয়স ১০-১৮ বছরের মধ্যে। ডা. বীণা ভট্ট জানিয়েছেন, কোভিডের আগে ২-৩ জন শিশু স্থূলতার সমস্যা নিয়ে আসত, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮-১০।

ডা. ভানি এইচ এন জানিয়েছেন, কোভিড পরবর্তীকালে শিশুদের ওজন বাড়ার পিছনে অনেকগুলি কারণ রয়েছে। শিশুরা অনেকটা সময় মোবাইল ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে এবং তাদের জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। খেলার মাঠের অভাবের জন্য শরীরচর্চা বা খেলাধূলা করার প্রবণতাও প্রায় নেই বললেই চলে। টিউশন এবং অন্যান্য এক্সট্রা ক্যারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে অংশগ্রহণ করলেও খেলাধূলার সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন হচ্ছে শিশুদের। তিনি আরও বলেন, পরিবারের বড়দের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা দরকার। আর এই স্থূলতার পিছনে পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি জিনগত কারণও থাকে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অতিমারির পর থেকে গোটা বিশ্বের শহরাঞ্চলের শিশুদের ৩০-৪০ শতাংশই স্থূলতার সমস্যায় ভুগছে। এই সমস্যা না রুখলে শরীরের পাশাপাশি মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিশুরা। জীবন যাপনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনলে শিশুদের এই সমস্যা থেকে বের করে আনা সম্ভব বলে মত চিকিৎসকমহলের।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

করোনা অতিমারির পর থেকে ওজন বাড়ছে শিশুদের

আপডেট : ৯ নভেম্বর ২০২২, বুধবার

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্ক: লক্ষ লক্ষ পরিবারে থাবা বসিয়ে আপনজনদের কেড়ে নিয়ে গেছে কোভিড। গোটা বিশ্বে মৃত্যু মিছিলের কারণ হলেও তাৎপর্যপূর্ণভাবে শিশুদের প্রতি আংশিক সদয় হয়েছিল কোভিড। কোভিডে শিশুমৃত্যুর হার ছিল হাতে গোনা। কিন্তু প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে শিশুদের এই মারণ ভাইরাস ক্ষতি করেছে বলে মত চিকিৎসকমহলের। ভারতীয় শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড পরবর্তীকালে ওজন বাড়ছে শিশুদের। দীর্ঘ লকডাউনে বাড়িতে থাকার অভ্যাস, মোবাইলে সময় কাটানো ও শরীরচর্চা না করার জন্য শিশুদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে বলে মত শিশু বিশে¡জ্ঞদের।

ইন্দিরা গান্ধি ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. ভানি এইচ এন জানিয়েছেন, কোভিডের আগে তাঁর কাছে প্রতিমাসে ৭-৮ জন শিশুর অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের স্থূলতার সমস্যা নিয়ে আসতেন।  এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫। অর্থাৎ কোভিড পরবর্তীকালে শিশুদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা বেড়েছে দ্বিগুন। ডা. ভানি জানিয়েছেন, কিশোর কিশোরীরা বিভিন্ন শারিরিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে যাচ্ছে, অথচ দেখা যাচ্ছে ওই সব সমস্যার মূল লুকিয়ে আছে তাদের স্থূলতায়।

অতিমারির তীব্রতা কমার পর থেকে কিশোররা ব্রেস্ট ডেভলপমেন্ট, মাইক্রোপেনিস ও কিশোরীরা অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ব্রণ, ঘাড়ের কাছে পিগমেন্টেশনের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে যাচ্ছে। এই সব সমস্যার মূলেও আছে কিশোর-কিশোরীদের স্থূলতা। ডা. ভানি জানিয়েছেন বেঙ্গালুরু ও আশপাশের অন্যান্য এলাকায় শিশুদের ওজন দিন দিন বাড়ছে। আর এর পিছনে দায়ী অনেকগুলি ফ্যাক্টর। তার মধ্যে একটি হল চিপস জাতীয় অন্যান্য প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ার প্রবণতা। ইন্দিরা গান্ধি ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ওজন ২৫-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের বয়স ১০-১৮ বছরের মধ্যে। ডা. বীণা ভট্ট জানিয়েছেন, কোভিডের আগে ২-৩ জন শিশু স্থূলতার সমস্যা নিয়ে আসত, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮-১০।

ডা. ভানি এইচ এন জানিয়েছেন, কোভিড পরবর্তীকালে শিশুদের ওজন বাড়ার পিছনে অনেকগুলি কারণ রয়েছে। শিশুরা অনেকটা সময় মোবাইল ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে এবং তাদের জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। খেলার মাঠের অভাবের জন্য শরীরচর্চা বা খেলাধূলা করার প্রবণতাও প্রায় নেই বললেই চলে। টিউশন এবং অন্যান্য এক্সট্রা ক্যারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে অংশগ্রহণ করলেও খেলাধূলার সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন হচ্ছে শিশুদের। তিনি আরও বলেন, পরিবারের বড়দের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা দরকার। আর এই স্থূলতার পিছনে পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি জিনগত কারণও থাকে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অতিমারির পর থেকে গোটা বিশ্বের শহরাঞ্চলের শিশুদের ৩০-৪০ শতাংশই স্থূলতার সমস্যায় ভুগছে। এই সমস্যা না রুখলে শরীরের পাশাপাশি মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিশুরা। জীবন যাপনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনলে শিশুদের এই সমস্যা থেকে বের করে আনা সম্ভব বলে মত চিকিৎসকমহলের।