নয়াদিল্লি, ২১ ফেব্রুয়ারি: ঔপনিবেশিক ভারতের সমাজ সংস্কারক সৈয়দ আহমদ খানের জীবন অবলম্বনে নির্মিত বায়োপিক সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করল দূরদর্শন। ‘স্যার সৈয়দ আহমেদ খান: দ্য মাসীহ (পথপ্রদর্শক) দূরদর্শনের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচারিত হওয়ার কথা ছিল। দূরদর্শনের প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ বায়োপিক সম্প্রচার না করার কারণ হিসেবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি লিখে জানান, প্রস্তাবিত অনুষ্ঠানটি স্ট্রিমিংয়ের জন্য প্রসার ভারতীর রেভেনিউ শেয়ারিং মডেল বিধান অনুযায়ী উত্তীর্ণ হয়নি। তাই স্যার সৈয়দ আহমেদ খানের উপর ভিত্তি করে নির্মিত ছবিটি দূরদর্শনে সম্প্রচার করা যাবে না।
বলা বাহুল্য, অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকা মুসলিম জাতিকে তৎকালীন সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শিক্ষা প্রদানকারী এক উজ্বল নক্ষত্র ছিলেন স্যার সৈয়দ আহমদ খান! ব্রিটিশ শাসনামলে সব দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজের কাছে তিনি ছিলেন অন্ধকারে আলোর রোশনাই! শুধু দেশে নয়, বিশ্বজুড়ে তাঁর খ্যাতি। অথচ তাঁর নামে ‘মুসলিম’ পরিচয় থাকায় নিজের দেশেই তিনি কোণঠাসা। তাঁর ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের মানসপট থেকে চিরতরে মুছে ফেলতে তৎপর অদৃশ্য এক শক্তি। যার মদদদাতা খোদ কেন্দ্রে আসীন সরকার! স্যার সৈয়দ আহমদ খান আলীগড় আন্দোলনের অন্যতম কর্ণধার। একইসঙ্গে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবর্তকও।
মুঘল স্মৃতিবিজড়িত ‘আলীগড়’ কবেই ‘হরিগড়ে’ রূপান্তরিত হয়েছে। এবার আলীগড়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত সমস্ত মুসলিম ব্যক্তিত্ব ও ইতিহাস মুছে ফেলার ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছে তারা। যা ‘স্যার সৈয়দ আহমেদ খান: দ্য মাসীহ’ বায়োপিকটি সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারিতেই প্রমাণ হল।
ঘটনাপ্রসঙ্গে উক্ত বায়োপিকের প্রযোজক এবং নায়ক শোয়েব চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘সৈয়দ আহমেদ খান: দ্য মাসীহ’ ছবিটি আন্তর্জাতিক স্তরে মুক্তি পেলেও প্রসার ভারতীর ওটিটি প্ল্যাটফর্মে তা সম্প্রচার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এই বিষয়টি খুবই কষ্টকর। অদৃশ্য এক রাজনৈতিক শক্তিই এই ঘটনার নেপথ্যের মূলে রয়েছে। মুসলিম ইতিহাস মুছে ফেলার জন্য মরিয়া লড়াই চালাচ্ছে ওরা। তবে এভাবে ইতিহাস মুছে ফেলা সম্ভব নয়। পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজের পথপ্রদর্শক ছিলেন স্যার। সমাজ সংস্কারে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, অশিক্ষা, অজ্ঞতা এবং অধঃপতনের হাত থেকে মুসলিম তথা সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার স্বার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। অথচ তাঁরই ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টায় রয়েছে অদৃশ্য এক অশুভ শক্তি।
দিল্লি এনসিআর এএমইউ ওল্ড বয়েজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুদাসসার হায়াত সংশ্লিষ্ট ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, স্যার সৈয়দের মতো একজন মহান নেতার জীবনী জাতির কাছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে আরও বেশি করে দেখানো উচিত। এই বায়োপিকটি মুসলিম সমাজ ও তাঁকে কেন্দ্র অনেক ভুল ধারণা দূর করতে পারত। কিভাবে নিষ্ঠা এবং অটল মনোভাব একটি মানুষকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে সহায়তা করে তা এই সিনেমা দেখে শেখা যাবে।
আলীগড় আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম নবজাগরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন। স্যার সৈয়দ আহমদ খান (১৮১৭-১৮৯৮) ছিলেন এই আন্দোলনের সূচনাকারী। এই আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি অনেক বাধার সম্মুখীন হন। সেই বাধাই কীভাবে তাঁর অদম্য স্পৃহা জাগিয়ে তুলেছিল তার এক ঝলক ছবিটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে জাতীয় স্তরে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরেও ছবিটি আন্তর্জাতিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলিতে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে। যেখানে স্যার সৈয়দের জীবনের সূক্ষ্ম চিত্রায়নের জন্য এটি প্রশংসিত হচ্ছে।