১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শ্রীলঙ্কা : আর্থিক দুর্গতি সামাল দিতে অর্থ মন্ত্রকে আলি সাবরি

মাসুদ আলি
  • আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২২, রবিবার
  • / 8

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : তিনি ছিলেন আইনমন্ত্রী। কিন্তু ক্রমাগত আর্থিক দুর্গতি দেখার পর প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রকে আনতে চাইলেন আলি সাবরিকে। সঙ্গে সঙ্গেই জোর সমালোচনা শুরু হল কট্টরবাদী বৌদ্ধদের পক্ষ থেকে, একজন মুসলিমকে এতবড় পদে বসানো নিয়ে। তেমনই একদল আশায় বুক বাঁধলেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির আলি সাবরি মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে সউদি আরবের সঙ্গে দরবার করে ঋণ বা অনুদান আনতে পারবেন দেশের জন্য। রাস্তার ত্রুদ্ধ জনতাকে ঠান্ডা করার জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষ এবং অপর ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রা রাজাপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন। যদিও আলি সাবরি বলেছিলেন, এই পদে তিনি উপযুক্ত নন, তাঁর থেকে যোগ্য লোককে অর্থ দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হোক।

তিনি পদত্যাগপত্রও পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি। ফলে অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হল তাঁকে আর্থিক দুর্দশায় পড়া শ্রীলঙ্কাকে। ভারত অবশ্য সুপ্রতিবেশী সুলভ আচরণ করে মদদ করতে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অবস্থা এমন যে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানী করতে হলে পেমেন্ট দেওয়ার অর্থ নেই। সর্বত্রই শূন্যতা। আলি সাবরি বললেন এই সঙ্গীন মুহূর্তে দেশের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। যদিও আমি অর্থনীতিবিদ নই এবং যোগ্য নই তবুও চেষ্টা করে যাব। শ্রীলঙ্কার মানুষ এই মুহূর্তে আর জাতপাত ভাষাগোত্র ধর্ম নিয়ে ভাবছে না। সকলেই রয়েছেন আতঙ্কের মধ্যে। দেশের স্বার্থে কাজ করে যেতে হবে।

আলি সাবরি বিদেশে থাকা নাগরিকদের কাছে আবেদন জানালেন দেশে অর্থ পাঠাতে ও মদদ করার জন্য। তিনি বলেন, দেশ এই ধরনের আর্থিক সঙ্কটে কোনওদিন পড়েনি। ডলারের ঘাটতি, কিছু কেনার অর্থ নেই। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখাই এখন সমস্যা। আলি সাবরি নিজের মতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক সমুদায়ের কাছেও আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর মুসলিম পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তিনি এমন একজন মুসলিম যার বাড়ির লোকও তাঁকে ভাল চোখে দেখেন না, কেন না করোনা মহামারীতে শ্রীলঙ্কা সরকার একটি বিদ্বেষমূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। করোনায় মৃতদের দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হবে। মুসলিমরা আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু সরকারে থেকে আল সাবরিকে সেই সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়েছিল, আর যে কারণে তাঁর নিজের পরিবারের লোকেরাই আপত্তি জানিয়েছিল, তবে প্রচন্ড মুসলিম বিদ্বেষী বৌদ্ধ ভিক্ষুকে রাষ্ট্রপতির টাস্ক ফোর্সের প্রধান করায় আলি সাবরি প্রতিবাদে একবার একবার পদত্যাগ করেছিলেন।

রাজাপক্ষ ভ্রাতৃত্বয় এখন সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু নিয়ে ভাবিত নন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশজুড়ে আর্থিক সংকটে এখন বিভাজন নিয়ে ভাবার সময় নয়। এখন প্রয়োজন ঐক্য। আর্থিক গতি ফেরানোর জন্য তাই আলি সাবরি এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়। উল্লেখ্য, উগ্র বৌদ্ধরা শ্রীলঙ্কার মুসলিমদের সুনজরে দেখে না, বেশ কয়েকবার সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মুসলিমদের সঙ্গে, কিন্তু এই বিপদের মুখে একজন মুসলিমকে অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে আর কেউ ভাবছেন না।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

শ্রীলঙ্কা : আর্থিক দুর্গতি সামাল দিতে অর্থ মন্ত্রকে আলি সাবরি

আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২২, রবিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : তিনি ছিলেন আইনমন্ত্রী। কিন্তু ক্রমাগত আর্থিক দুর্গতি দেখার পর প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রকে আনতে চাইলেন আলি সাবরিকে। সঙ্গে সঙ্গেই জোর সমালোচনা শুরু হল কট্টরবাদী বৌদ্ধদের পক্ষ থেকে, একজন মুসলিমকে এতবড় পদে বসানো নিয়ে। তেমনই একদল আশায় বুক বাঁধলেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির আলি সাবরি মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে সউদি আরবের সঙ্গে দরবার করে ঋণ বা অনুদান আনতে পারবেন দেশের জন্য। রাস্তার ত্রুদ্ধ জনতাকে ঠান্ডা করার জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষ এবং অপর ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রা রাজাপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন। যদিও আলি সাবরি বলেছিলেন, এই পদে তিনি উপযুক্ত নন, তাঁর থেকে যোগ্য লোককে অর্থ দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হোক।

তিনি পদত্যাগপত্রও পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি। ফলে অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হল তাঁকে আর্থিক দুর্দশায় পড়া শ্রীলঙ্কাকে। ভারত অবশ্য সুপ্রতিবেশী সুলভ আচরণ করে মদদ করতে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অবস্থা এমন যে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানী করতে হলে পেমেন্ট দেওয়ার অর্থ নেই। সর্বত্রই শূন্যতা। আলি সাবরি বললেন এই সঙ্গীন মুহূর্তে দেশের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। যদিও আমি অর্থনীতিবিদ নই এবং যোগ্য নই তবুও চেষ্টা করে যাব। শ্রীলঙ্কার মানুষ এই মুহূর্তে আর জাতপাত ভাষাগোত্র ধর্ম নিয়ে ভাবছে না। সকলেই রয়েছেন আতঙ্কের মধ্যে। দেশের স্বার্থে কাজ করে যেতে হবে।

আলি সাবরি বিদেশে থাকা নাগরিকদের কাছে আবেদন জানালেন দেশে অর্থ পাঠাতে ও মদদ করার জন্য। তিনি বলেন, দেশ এই ধরনের আর্থিক সঙ্কটে কোনওদিন পড়েনি। ডলারের ঘাটতি, কিছু কেনার অর্থ নেই। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখাই এখন সমস্যা। আলি সাবরি নিজের মতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক সমুদায়ের কাছেও আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর মুসলিম পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তিনি এমন একজন মুসলিম যার বাড়ির লোকও তাঁকে ভাল চোখে দেখেন না, কেন না করোনা মহামারীতে শ্রীলঙ্কা সরকার একটি বিদ্বেষমূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। করোনায় মৃতদের দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হবে। মুসলিমরা আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু সরকারে থেকে আল সাবরিকে সেই সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়েছিল, আর যে কারণে তাঁর নিজের পরিবারের লোকেরাই আপত্তি জানিয়েছিল, তবে প্রচন্ড মুসলিম বিদ্বেষী বৌদ্ধ ভিক্ষুকে রাষ্ট্রপতির টাস্ক ফোর্সের প্রধান করায় আলি সাবরি প্রতিবাদে একবার একবার পদত্যাগ করেছিলেন।

রাজাপক্ষ ভ্রাতৃত্বয় এখন সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু নিয়ে ভাবিত নন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশজুড়ে আর্থিক সংকটে এখন বিভাজন নিয়ে ভাবার সময় নয়। এখন প্রয়োজন ঐক্য। আর্থিক গতি ফেরানোর জন্য তাই আলি সাবরি এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়। উল্লেখ্য, উগ্র বৌদ্ধরা শ্রীলঙ্কার মুসলিমদের সুনজরে দেখে না, বেশ কয়েকবার সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মুসলিমদের সঙ্গে, কিন্তু এই বিপদের মুখে একজন মুসলিমকে অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে আর কেউ ভাবছেন না।