পুবের কলম প্রতিবেদক : ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ হতে চলেছে আজ বুধবার। রাজ্যের স্বাধীন দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বিকেল চারটের সময় বিধানসভায় এই বাজেট পেশ করবেন। তার আগে মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে। সূত্রের খবর, এবারের বাজেটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাছে বাড়তি গুরুত্ব পেতে চলেছে গ্রামোন্নয়ন। পঞ্চায়েত দফতরের জন্য রেকর্ড পরিমাণ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হতে পারে।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে গোহারা হারার পর ১০০ দিনের কাজের প্রাপ্য ঢাকা মেটায়নি কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সেই বকেয়া মিটিয়েছ। ১০০ দিনের প্রকল্পের জব কার্ড হোল্ডারদের অন্নসংস্থান করতে কর্মশ্রী প্রকল্প চালু করেছে। ২৬-এর নির্বাচনের আগে বাজেটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাখির চোখ থাকবে সেই গ্রামোন্নয়নেই। এই খাতে ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব থাকতে পারে। গ্রামীণ রাস্তা তৈরিতে জোর দেওয়া হবে বলে জানা যাচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প-সহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতেও বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা হয়েছে।
এবারের বাজেটে নানা মহলে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের আগেই এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় উপভোক্তারা পেতেন ৫০০ টাকা করে। ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে এক ধাক্কায় সেই টাকা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছিল। সাধারণ মহিলাদের জন্য মাসে ১০০০ টাকা এবং তপশিলি জাতি উপজাতিদের ১২০০ টাকা করা হয়েছে। এবার ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের দামামা বাজতে আর বেশি দেরি নেই। সেই সূত্রে জল্পনা শোনা যাচ্ছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে ফের টাকা বাড়ানোর। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যখন মালদহের সভায় গিয়ে বলেছেন, এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আমার মা-বোনেদের টাকা যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। মুখ্যমন্ত্রীর সেই কথার রেশ ধরে বাজেটে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা বাড়ছেই বলে ধরে নিয়েছেন অনেকে।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ছাড়াও কন্যাশ্রী রূপশ্রী বিধবা ভাতা-সহ একাধিক সরকারি প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধি হতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া বাংলার বাড়ি ছাত্রদের জন্য স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ কৃষকদের জন্য কৃষক বন্ধু প্রকল্পে অতিরিক্ত বরাদ্দের সম্ভাবনা রয়েছে।
বাজেটে শিল্প এবং কর্মসংস্থান নিয়ে নতুন কোনও ঘোষণা থাকে না বলে প্রায়ই সমালোচনা করে থাকেন বিরোধীরা। এই মুহূর্তে রাজ্যে শিল্পের প্রসার ঘটাতে এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে মরিয়া রাজ্য সরকার। বাজেটে শিল্প উন্নয়নের কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হতে পারে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ও ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রে নতুন প্রকল্প ঘোষণা করা হতে পারে।
১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে রাজ্যের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধির কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। শ্রম মন্ত্রক সূত্রে খবর ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের অধীনে দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারেও সুপারিশ করতে পারে রাজ্য।
বাজেটে এবার সারপ্রাইজ থাকতে পারে মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি। ২০২৩ সালে বাজেটে তিন শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সপ্তম অর্থ কমিশন তৈরির সময় এসে গিয়েছে। এই মহার্ঘ ভাতা বাড়ানো নিয়ে কোনও ঘোষণা বাজেটে থাকে কি না, সেই দিকে তাকিয়ে রয়েছে সরকারি কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার বিধানসভায় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবারের ববাজেটের অভিমুখ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংগ্রামের কথা শোনাচ্ছিলেন। তিনি নিজে তৃণমূল স্তর থেকে আন্দোলনের মাধ্যমে উঠে এসেছেন। তাঁর উদ্দেশ্য সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষজনকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা। সেইসঙ্গে ছাত্র, যুব, কর্মচারী, মহিলাদের জন্য তাঁর ভাবনা থাকে। শোভনদেববাবুর কথার সূত্র ধরে ইঙ্গিত পাওয়া যায় ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে বুধবারের বাজেট হবে অলরাউন্ডার অর্থাৎ সর্বস্তরের মঙ্গলের বাজেট।