সূরা নিসায় নারীর অধিকারের কথা
ইমামা খাতুন
- আপডেট :
৯ জুন ২০২৩, শুক্রবার
- / 6
ফিরদৌস ফয়সাল: পবিত্র কুরআনের চতুর্থ সুরার নাম সূরা নিসা। নিসা মানে স্ত্রী’জাতি। এই সূরায় ২৪ রুকু, ১৭৬ আয়াত। তৃতীয় হিজরিতে ও হুদের যুদ্ধের পর এটি অবতীর্ণ হয়। এতে উত্তরাধিকার এবং এতিমের অধিকার বর্ণিত রয়েছে।
পঞ্চম হিজরিতে মুসতালিকের যুদ্ধে পানির অভাব দেখা দিলে তায়াম্মুমের আদেশ জারি হয়। এই সূরায় মুসলমানদের চরিত্রের কথা বর্ণিত হয়েছে। তবে এই সূরায় নারীদের বিধানের বর্ণনা বেশি বলে এর নাম হয়েছে ‘সূরা নিসা’।
রাসূলুল্লাহ্ সা. মদিনায় হিজরত করে আসার পর প্রাথমিক বছরগুলোতে সূরা নিসা নাযিল হয়। এর বেশির ভাগ অংশই নাযিল হয় বদরের যুদ্ধের পরে। মদিনায় একটি ইসলামি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হওয়ার পর নবগঠিত রাষ্ট্রের যাবতীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করে। মুসলমানদের নিজেদের ইবাদাত, আচরণ ও সমাজব্যবস্থা নিয়ে নানা বিধানের প্রয়োজন দেখা দেয়। ইসলামের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য শত্রুপক্ষ তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করার চেষ্টা করছে। নিজেদের ভৌগোলিক ও ভাবগত সীমারেখা সংরক্ষণের জন্য মুসলিমরা সে সময় নিত্যনতুন সমস্যার মুখোমুখি। ঠিক এমন সময়ই সূরা নিসা নাযিল হয়।
নারী ও পরিবার হল একটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষুদ্র একক, কিন্তু একটি সুসংগঠিত ও প্রধান বুনিয়াদ। সূরাটিতে এই প্রসঙ্গে বিধান দেওয়া হয়েছে। জাহিলিয়া যুগে নারীদের প্রতি যেসব অবিচার চলত, সেগুলোর মূলোৎপাটন করা হল। এছাড়া এমন বহু বিধি-বিধান দেওয়া হল, যার কারণে সূরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল।
সূরাটির সূচনায় তাক্ওয়া অর্জনের আহ্বান করা হয়েছে, আর পুরো সূরাব্যাপী তার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক হলে এতিমদের অর্থসম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। তা আত্মসাৎ করা যাবে না। খারাপ মাল দিয়ে তাদের ভালো মাল নিজে নেওয়া যাবে না। অনাথ-এতিম ছেলে ও মেয়ে উভয়ের সম্পদের ক্ষেত্রেই এই বিধান প্রযোজ্য।
একসঙ্গে চারজন নারীকে বিয়ে করার সুযোগ থাকলেও শর্ত হচ্ছে স্বামীকে তাদের অধিকার আদায়ে সক্ষম হতে হবে। তাদের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করতে হবে। আর নিখুঁতভাবে তা না পারলে একজন স্ত্রী নিয়ে সন্তুষ্টচিত্তে সংসার করতে হবে।
ইসলামের আগেও একাধিক নারীকে বিয়ের প্রচলন ছিল, তবে স্ত্রীর সংখ্যা সুনির্দিষ্ট ছিল না। ইসলাম ও সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয় এবং কিছু কঠোর শর্ত আরোপ করে। বস্তুত কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব করে শর্তগুলো মেনে চলা এতই দুরূহ যে প্রকৃতপক্ষে এক স্ত্রীর সংসারই নিরাপদ। নইলে আল্লাহর দেওয়া শর্ত যে-কোনও সময় লঙ্ঘন করে ফেলার আশঙ্কা থাকে।
জাহেলি যুগে আরবে অবাধে বহুসংখ্যক বিয়ে করার প্রচলন ছিল। চারটি পর্যন্ত বিয়ে করার অনুমতি দেওয়া হলেও একটির বেশি বিয়ে করা শর্তসাপেক্ষ করা হয়েছে, যাতে স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার করতে পারার ব্যাপারে কোনও ভেদ না ঘটে।
বিয়ে করার জন্য স্ত্রীকে মোহর প্রদান করা ফরয। বিয়ের আগেই মোহর দিতে হবে। তবে স্ত্রীর সম্মতিক্রমে পরেও দেওয়া যেতে পারে। ইসলামে ওয়ারিশ পুরুষ ও নারী সবাই পাবে। বণ্টনকালে তারা উপস্থিত হলে বিরক্তি প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এর কারণ ইসলাম ভরণপোষণ, অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান এবং বিয়ের মোহরানাসহ যাবতীয় ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব পুরুষের ওপর অর্পণ করা হয়েছে।
নারীদের হক আদায় করা অবশ্যকর্তব্য (ফরয)। ইসলামের আগে নারীদের ওয়ারিশ সম্পত্তি বা মিরাস দেওয়া হত না। আরবদের মধ্যে প্রবাদ ছিল, যারা ঘোড়ায় সওয়ার হতে পারে না, তরবারি বহন করতে পারে না, দুশমনের মোকাবিলা করতে পারে না, তাদের সম্পত্তি দেওয়া হবে না। এই কারণে শিশু ও নারীদের মিরাস থেকে বঞ্চিত করা করত। ইসলাম নারীদের ওপর এই যুলুম পরিত্যাগ করে শিশু ও নারীদেরও সম্পত্তির হকদার বলে সাব্যস্ত করেছে।
নারীদের সঙ্গে সদাচরণ এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে তাদের অংশ-সংক্রান্ত আলোচনার পর ওই সব নারীর আলোচনা করা হয়েছে, আত্মীয়তা, বৈবাহিক বা দুধ-সম্পর্কের কারণে যাদের বিয়ে করা হারাম।’ (আয়াত: ২৩-২৪)