পুবের কলম প্রতিবেদক: কন্যাশ্রীর পরে স্বাস্থ্যসাথী (Swasthya Sathi)। বাংলার প্রকল্পগুলির হাত ধরে বাংলা আবার জগতসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করছে। বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ, অষ্ট্রেলিয়ায় ‘সেন্ট গ্যালেন ব্রেস্ট ক্যানসার কনফারেন্স ২০২৫’ -এর অনুষ্ঠানে প্রশংসিত হল বাংলার স্বাস্থ্যসাথী (Swasthya Sathi) প্রকল্পের প্রসঙ্গ। যা বিশ্বের অন্যতম সেরা চিকিৎসক সম্মেলন বলে স্বীকৃত। এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গবেষণাপত্র পাঠ করার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছেন বাংলারই পাঁচ চিকিৎসক। এঁদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট অঙ্কোসার্জেন ডা. সৌমেন দাসসহ আরও পাঁচজন। তাঁদেরই সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের জন্যই রাজ্যের ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসার খরচ ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছে। এই সমীক্ষার সূত্রে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগের চিকিৎসায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত স্বাস্থ্যসাথী (Swasthya Sathi) প্রকল্প সাহায্য করার মানবিক ভাবনাকে সেরার স্বীকৃতি দিল আন্তর্জাতিক মঞ্চ। শুধু তা-ই নয়, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে কেমোথেরাপির ‘ট্রিটমেন্ট কমপ্লিসন রেট’ ভারতের মধ্যে সর্বোচ্চ। সরকারি সাহায্যের জন্যই ক্যানসার আক্রান্ত রোগীরা তাদের কেমোথেরাপির কোর্সটি শেষ করতে পারছে। নয়াবাদ ও সিঁথির দুই বেসরকারি হাসপাতালের ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্তদের নিয়ে বাংলার চিকিৎসকদের সমীক্ষার সূত্রেই এই তথ্য সামনে এল। এই সমীক্ষায় স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের ২৪৫০ জন এবং নগদে চিকিৎসা করা ২৭৩৫ জন রোগীদের চিকিৎসার গতিপ্রকৃতির তুলনামূলক বিচার করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গিয়েছে। বিরোধীরা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সমালোচনা করলেও এই প্রকল্প যে মানুষের কাছে সহায় হয়েছে, তা প্রমাণিত হল চিকিৎসকদের সমীক্ষার সূত্র ধরে। যে সাফল্যের কথা উঠে এল ‘নেচার’ পত্রিকার মতো জনপ্রিয় ‘দ্য ব্রেস্ট’ নামে আন্তর্জাতিক জার্নালেও।
আরও পড়ুন: PPP Model-এ নিজেরাই নার্স ও প্যারা-মেডিক্যাল কর্মী তৈরি করবে পুরনিগম
পরিসংখ্যান বলছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে গোটা বিশ্বে ক্যানসার মহামারির আকার নেবে। তাই কেমোথেরাপির মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্তদের চিকিৎসা বিশ্বের দুয়ারে পরিচিত করে দিল বাংলার প্রকল্পের নাম। বাংলার মানুষের উপকারে স্বাস্থ্যসাথী (Swasthya Sathi) প্রকল্প যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে সৌমনবাবুসহ বাংলার চিকিৎসকদের চিকিৎসায় সেই তথ্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে উঠে এলে। এর আগেও ২০১৭ সালে জাতিসংঘ তাদের সর্বোচ্চ জনসেবা পুরস্কারে সম্মানিত করেছিল কন্যাশ্রী প্রকল্পকে। প্রশংসিত হয়েছিল উৎকর্ষ বাংলা এবং সবুজসাথী প্রকল্পও। এবার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্মানিত হল স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প।
আগামী ২১ তারিখ লন্ডন যাওয়ার জন্য রওনা হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখবেন তিনি। লন্ডন যাওয়ার আগে আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের প্রশংসিত হওয়ার খবর পৌঁছল মমতার কাছে। এই সম্মান পেয়ে খুশি মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর বত্তৃতায় এই স্বাস্থ্যসাথী (Swasthya Sathi) প্রকল্পের নাম উঠে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজ্যবাসীর কাছে আরও ভালোভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব¨্যােপাধ্যায়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট কিছু বেসরকারি হাসপাতালে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা বিনামূল্যে করাতে পারে।
আরও পড়ুন: Sealdah Division-এ কি AC লোকাল? কি বললেন রেল আধিকারিক
বৃহস্পতিবার বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বেও উঠে এসেছিল স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কথা। এদিন আমতার তৃণমূল বিধায়ক সুকান্ত পালের প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টচার্য বলেন, রাজ্যের প্রায় নয় কোটি মানুষের নাম নথিভুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্যসাথী (Swasthya Sathi) প্রকল্পে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংখ্যাটা ৮ কোটি ৭২ লক্ষ ৫৭ হাজার ৬০৭ জন। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষ এই প্রকল্পের জন্য ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার কোটি টাকার মতো। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধে পাওয়া যায় ২৯১৪ টি হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ প্রত্যেক বছরই বাড়ানো হচ্ছে।
অনেক সময়েই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে টাকা সরকারের ঘর থেকে আসছে না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে একটি হেল্প লাইন নম্বর রয়েছে। কোনও নথিভুক্ত হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে (Swasthya Sathi) পরিষেবা দিতে অস্বীকার করলে ওই হেল্পলাইন নম্বরের ফোন করে সমস্যা জানানোর পরামর্শ দেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় সাহায্য করার জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী (Swasthya Sathi) প্রকল্পের খ্যাতি রাজ্য দেশ ছাড়িয়ে বৃহস্পতিবার পৌঁছে গেল আন্তর্জাতিক আঙিনায়।