ড. আদহাম শারকাভিঃ ‘আমি আল্লাহর কাছে আমার দুঃখ-কষ্টের অভিযোগ করছি।’ (সূরা ইউসুফ, আয়াত : ৮৬) মানুষের কাছে অনুযোগ করে সান্ত্বনা পাওয়া যায়। আর আল্লাহর কাছে অনুযোগ করে রহমত পাওয়া যায়। এক দুর্বল আরেক দুর্বলের কাছে অনুযোগ করে কীই-বা পেতে পারে? যেখানে সবাই দুর্বল। এক দরিদ্র অন্য দরিদ্রের কাছে অনুযোগ করে কীই-বা পেতে পারে? যেখানে সবাই দরিদ্র।
দুর্বল হয়তো কখনও শক্তিশালী হতে পারে, তবে আল্লাহ্র চেয়ে বেশি নয়। দরিদ্র হয়তো কখনও ধনী হতে পারে, তবে আল্লাহ্র চেয়ে বেশি নয়। তাই অভিযোগ-অনুযোগ যদি করতেই হয়— আল্লাহর কাছে করো। নিজের অভাব, অনটন, দুঃখ-কষ্টের কথা রোনাজারি করে আল্লাহর কাছে বলো। যত সম্ভব আল্লাহর সামনে নিজেকে ছোট করে তুলে ধরো। নিজের অক্ষমতা তুলে ধরো। কিন্তু মানুষের সম্মুখে ছোট না হয়ে বীরের মতো মাথা উঁচু করে চলো।
আল্লাহ্ তোমার সঙ্গে আছেন
‘কক্ষনো না। নিশ্চয়ই আমার রব আমার সঙ্গে আছেন। তিনিই আমাকে পথ দেখাবেন।’ (সূরা শুআরা, আয়াত: ৬১) হে আল্লাহ্! তুমি আমার অন্তরে তোমার অস্তিত্বের বিশ্বাস এ পরিমাণ দাও, যে পরিমাণ দিয়েছিলে তোমার প্রিয় রাসূল মুসা কালিমুল্লাহ্কে। হযরত মুসা আ. সঙ্গীদের নিয়ে মিশর ছেড়ে পালাচ্ছিলেন। তাঁর সামনে ছিল নদী। পেছনে ফেরাউন ও তার বাহিনী। সঙ্গীরা হতাশ হয়ে বলছিলেন, ‘হে মুসা! আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম।’
কিন্তু হযরত মুসা আ. পরিপূর্ণ আস্থার সঙ্গে তাদের বলেছিলেন, ‘কক্ষনো না। নিশ্চয়ই আমার রব আমার সঙ্গে আছেন। তিনিই আমাকে পথ দেখাবেন।’ (সূরা শুআরা, আয়াত: ৬১-৬২) হে আল্লাহ্! তুমি আমার অন্তরে তোমার অস্তিত্বের বিশ্বাস এ পরিমাণ দাও, যে পরিমাণ দিয়েছিলে তোমার প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ সা.-কে।হিজরতের প্রাক্কালে নবীজি সা. সঙ্গী হযরত আবু বকর রা.-কে নিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন গারে সাওরে। আর ওপরে ছিল শত্রুর পদচারণা। হযরত আবু বকর রা. চিন্তিত হয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহ্ রাসূল সা.! তারা তো নিচের দিকে তাকালেই আমাদের দেখে ফেলবে।’ নবীজি সা. বললেন, ‘আবু বকর! চিন্তিত হয়ো না। আমাদের সঙ্গে তৃতীয়জন হিসেবে আল্লাহ্ রয়েছেন।’
প্রতিদানের আশা করো না
‘তখন মুসা তাদের জন্তুদের পানি পান করাল। তারপর সে ছায়ার নিচে আশ্রয় গ্রহণ করে বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই করবে, আমি তারই ভিখারি।’ (সূরা কাসাস, আয়াত: ২৪) ভালো কাজ করে কারও প্রশংসার আশায় থাকবে না। বীরত্বের কাজ করে কারও বাহবা ও করতালির অপেক্ষায় থাকবে না। স্বচ্ছতার সঙ্গে পবিত্র জীবনযাপন করো। যার সহায়তার প্রয়োজন, তাকে সহযোগিতা করো। যার সহমর্মিতার প্রয়োজন, তাকে সান্ত্বনা দাও। কেউ পড়ে গেলে তাকে হাত ধরে উঠিয়ে দাও। যে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, তাকে নতুন করে জীবন সাজাতে সাহায্য করো।
ভালো কাজকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করো, যেন তা শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো হয়ে যায়। কারও উপকার করার পর নিজেকে এমনভাবে গুটিয়ে নাও, যেন কেউ দেখতে না পায়। মানুষের কৃতজ্ঞতা থেকে নিজেকে আড়ালে রাখো। এমন আসমানি প্রতিদান পাবে, যা হৃদয়কে করবে প্রশান্ত। হযরত মুসা আ. নবী শুআইব আ.-এর কন্যাদ্বয়কে সহযোগিতা করে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ্ তাঁকে গাছতলা থেকে নবীর মেহমান বানিয়ে দিয়েছেন। তাই প্রতিটি ভালো কাজ করার সময় ভাবো, তুমি এক মহানুভব সত্তার সঙ্গে লেনদেন করছ।