১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বাধীনতা দিবসে বাবার গ্রেফতারি নিয়ে দেশের সামনে প্রশ্ন তুলে ধরল সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের ৯ বছরের কন্যা

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৬ অগাস্ট ২০২২, মঙ্গলবার
  • / 6

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : স্বাধীনতা দিবসে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, বীর যোদ্ধাদের কথা স্মরণ করে বাবার গ্রেফতারি নিয়ে সরব হয়ে দেশের সামনে একটি প্রশ্ন তুলে ধরলেন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের ৯ বছরের ক্ষুদে কন্যা। স্কুলে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে একটি নির্ধারিত বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে দু’ মিনিটের বক্তৃতায় একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বক্তব্য তুলে ধরল কাপ্পান কন্যা। তার এই বক্তব্য শুধু যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে তাই নয়, সমাজে রীতিমতো আলোড়ন ফেলেছে।

প্রসঙ্গত, যে সময় ৭৬ বছরের স্বাধীনতা দিবস পালন করছে দেশবাসী,   ঠিক সেই সময়ে জেলে রয়েছেন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান। উত্তরপ্রদেশে হাথরস মামলা সহ বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের অধীনে কারাগারে বন্দি রয়েছেন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান।

স্বাধীনতা দিবসে তার স্কুল আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সিদ্দিক কাপ্পানের ৯ বছরের এই ক্ষুদে কন্যাকে বলতে শোনা যায়,’আমি একজন সাংবাদিকের কন্যা। বাবা জেলে রয়েছেন। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার বাবা তার সব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।’ স্কুলে স্বাধীনতা দিবসে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে এইভাবে সওয়াল করতে দেখা গেল তার ছোট্ট মেয়েকে।

 

দু’মিনিটের এই বক্তৃতায় সাংবাদিকের কন্যা বলে, ‘একটি স্বাধীন দেশে কে কি কথা বলবে, কি খাবে বা কোন ধর্ম নেবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়া, পছন্দ তাদের আছে। এই সবই সম্ভব হয়েছে মহাত্মা গান্ধি, জওহরলাল নেহেরু, ভগৎ সিং এবং অগণিত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কারণে। যারা তাদের চলে যেতে বলছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার অধিকার প্রত্যেক ভারতবাসীর আছে। সেই সকল মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে আমার অনুরোধ, সাধারণ নাগরিকের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ করবেন না।’

কাপ্পান কন্যার আরও সংযোজন, ‘কারুর কাছে মাথা ঝোঁকাবে না ভারতবাসী, এটাই আমাদের গর্ব। ধর্ম, রং, বর্ণ, রাজনীতির দোহাই তুলে দেশে অস্থিরতার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। যা আমাদের ভালোবাসা ও সম্প্রীতির মাধ্যমে নির্মূল করা উচিত। যেকোনও অশান্তির ছায়াকে মুছে ফেলতে হবে। আমাদের সকলের এক জীবন হিসাবে বেঁচে থাকা উচিত, ভারতকে শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টার প্রয়োজন আছে। ভারত যখন ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস পালন করছে তখন একজন দায়িত্বশীল ভারতবাসীর কন্যা হিসেবে গর্বের সঙ্গে আমি বলতে চাই, ‘ভারত মাতা কি জয়’।’

 

উল্লেখ্য, সিদ্দিক কাপ্পান মালায়ালাম নিউজ পোর্টাল আজিমুখামের একজন সাংবাদিক ও কেরল ইউনিয়ন অফ ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট (কেউডব্লিউজে)-এর সেক্রেটারি। ২০২০ সালের অক্টোবরে উত্তরপ্রদেশের হাথরসে ১৯ বছর বয়সী দলিত কন্যার গণধর্ষণ করে হত্যার ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে যাওয়ার সময় তিনজনের সঙ্গে তিনি গ্রেফতার হন। উত্তরপ্রদেশের পুলিশ সেই সময় দাবি করে, হাথরথে আইনশৃঙ্খলা লঙ্ঘন করেছে তারা। আরও অভিযোগ ছিল যে, এদের সঙ্গে পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার (পিএফআই)-র যোগসাজশ রয়েছে।

এই মাসের শুরুর দিকে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ সিদ্দিক কাপ্পানের জামিন খারিজ করে দেয়। কাপ্পান সহ আরও তিনজনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৭ এবং ১৮-এর অধীনে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ), ধারা ১২৪এ (বিদ্রোহ), ১৫৩এ (ধর্মের ভিত্তিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা প্রচার করা) এবং ২৯৫এ (ইচ্ছাকৃত ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত করার উদ্দেশ্য) ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং তথ্য প্রযুক্তি আইনের ধারা ৬৫, ৭২ এবং ৭৫ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

স্বাধীনতা দিবসে বাবার গ্রেফতারি নিয়ে দেশের সামনে প্রশ্ন তুলে ধরল সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের ৯ বছরের কন্যা

আপডেট : ১৬ অগাস্ট ২০২২, মঙ্গলবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক : স্বাধীনতা দিবসে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, বীর যোদ্ধাদের কথা স্মরণ করে বাবার গ্রেফতারি নিয়ে সরব হয়ে দেশের সামনে একটি প্রশ্ন তুলে ধরলেন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের ৯ বছরের ক্ষুদে কন্যা। স্কুলে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে একটি নির্ধারিত বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে দু’ মিনিটের বক্তৃতায় একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বক্তব্য তুলে ধরল কাপ্পান কন্যা। তার এই বক্তব্য শুধু যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে তাই নয়, সমাজে রীতিমতো আলোড়ন ফেলেছে।

প্রসঙ্গত, যে সময় ৭৬ বছরের স্বাধীনতা দিবস পালন করছে দেশবাসী,   ঠিক সেই সময়ে জেলে রয়েছেন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান। উত্তরপ্রদেশে হাথরস মামলা সহ বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের অধীনে কারাগারে বন্দি রয়েছেন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান।

স্বাধীনতা দিবসে তার স্কুল আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সিদ্দিক কাপ্পানের ৯ বছরের এই ক্ষুদে কন্যাকে বলতে শোনা যায়,’আমি একজন সাংবাদিকের কন্যা। বাবা জেলে রয়েছেন। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার বাবা তার সব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।’ স্কুলে স্বাধীনতা দিবসে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে এইভাবে সওয়াল করতে দেখা গেল তার ছোট্ট মেয়েকে।

 

দু’মিনিটের এই বক্তৃতায় সাংবাদিকের কন্যা বলে, ‘একটি স্বাধীন দেশে কে কি কথা বলবে, কি খাবে বা কোন ধর্ম নেবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়া, পছন্দ তাদের আছে। এই সবই সম্ভব হয়েছে মহাত্মা গান্ধি, জওহরলাল নেহেরু, ভগৎ সিং এবং অগণিত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কারণে। যারা তাদের চলে যেতে বলছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার অধিকার প্রত্যেক ভারতবাসীর আছে। সেই সকল মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে আমার অনুরোধ, সাধারণ নাগরিকের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ করবেন না।’

কাপ্পান কন্যার আরও সংযোজন, ‘কারুর কাছে মাথা ঝোঁকাবে না ভারতবাসী, এটাই আমাদের গর্ব। ধর্ম, রং, বর্ণ, রাজনীতির দোহাই তুলে দেশে অস্থিরতার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। যা আমাদের ভালোবাসা ও সম্প্রীতির মাধ্যমে নির্মূল করা উচিত। যেকোনও অশান্তির ছায়াকে মুছে ফেলতে হবে। আমাদের সকলের এক জীবন হিসাবে বেঁচে থাকা উচিত, ভারতকে শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টার প্রয়োজন আছে। ভারত যখন ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস পালন করছে তখন একজন দায়িত্বশীল ভারতবাসীর কন্যা হিসেবে গর্বের সঙ্গে আমি বলতে চাই, ‘ভারত মাতা কি জয়’।’

 

উল্লেখ্য, সিদ্দিক কাপ্পান মালায়ালাম নিউজ পোর্টাল আজিমুখামের একজন সাংবাদিক ও কেরল ইউনিয়ন অফ ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট (কেউডব্লিউজে)-এর সেক্রেটারি। ২০২০ সালের অক্টোবরে উত্তরপ্রদেশের হাথরসে ১৯ বছর বয়সী দলিত কন্যার গণধর্ষণ করে হত্যার ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে যাওয়ার সময় তিনজনের সঙ্গে তিনি গ্রেফতার হন। উত্তরপ্রদেশের পুলিশ সেই সময় দাবি করে, হাথরথে আইনশৃঙ্খলা লঙ্ঘন করেছে তারা। আরও অভিযোগ ছিল যে, এদের সঙ্গে পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার (পিএফআই)-র যোগসাজশ রয়েছে।

এই মাসের শুরুর দিকে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ সিদ্দিক কাপ্পানের জামিন খারিজ করে দেয়। কাপ্পান সহ আরও তিনজনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৭ এবং ১৮-এর অধীনে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ), ধারা ১২৪এ (বিদ্রোহ), ১৫৩এ (ধর্মের ভিত্তিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা প্রচার করা) এবং ২৯৫এ (ইচ্ছাকৃত ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত করার উদ্দেশ্য) ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং তথ্য প্রযুক্তি আইনের ধারা ৬৫, ৭২ এবং ৭৫ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।