জ্ঞানভাপী মসজিদ মামলার রায়কে ‘হতাশাজনক’ বলল অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড

- আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার
- / 18
পুবের কলম প্রতিবেদকঃ জ্ঞানভাপী মসজিদ মামলায় বারাণসীর জেলা আদালতের রায়কে ‘হতাশাজনক’ বলেছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড (এআইএমপিএলবি)। বোর্ড সরকারের কাছে আবেদন করেছে ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইনকে কঠোরভাবে বলবৎ করা হোক।
বারাণসীর জেলা আদালত সোমবার তাদের রায়ে বলেছিল, এবার জ্ঞানভাপী মসজিদের দেওয়ালে হিন্দু দেবদেবীর পুজো করার আবেদনের শুনানি করা হবে। আদালত মসজিদ কমিটির আপত্তি খারিজ করে দিয়েছে। মসজিদ কমিটি আদালতে আপত্তি জানিয়ে বলেছিল, হিন্দুপক্ষের জ্ঞানভাপী মসজিদের দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তির পুজো করার আবেদন খারিজ করা হোক। এক বিবৃতিতে এআইএমপিএলবি-র সাধারণ সম্পাদক মাওলানা খালিদ সইফুল্লাহ রহমানি বলেছেন, জেলা আদালতের বিচারকের প্রাথমিক রায় এই মামলায় ‘হতাশা এবং দুঃখজনক’।
রহমানি বলেন, ১৯৯১ সালে বাবরি মসজিদ আন্দোলনের সময় সমস্ত ধর্মীয় স্থানে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ অনুমোদন করেছিল সংসদ। বাবরি মসজিদকে এই নির্দেশের আওতা থেকে বাদ রাখা হয়েছিল। সংসদ বলেছিল ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় স্থানগুলি যে অবস্থায় ছিল, সেই স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হবে।
কোনও ধর্মস্থান নিয়ে কোনও ধরনের বিবাদ বৈধ বলে গণ্য হবে না। রহমানি বলেন, বাবরি মসজিদ মামলার রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইন দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই আইনের প্রয়োগ হবে বাধ্যতামূলক। কিন্তু এসবের পরেও যারা ঘৃণায় বিশ্বাসী, যারা দেশের ঐক্য নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করে না, তারা বারাণসীর জ্ঞানভাপী মসজিদের মামলা তুলে দেশের শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে।
এটা সত্যি দুঃখজনক যে জেলা আদালতের বিচারকও ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইন উপেক্ষা করে হিন্দুপক্ষকে মামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। রহমানি বলেন, আদালত প্রাথমিকভাবে হিন্দুপক্ষের দাবি মেনে নিয়ে ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিবাদের পথ খুলে দিয়েছে। দেশ এবং দেশের মানুষের পক্ষে এটি বেদনাদায়ক। আদালতের এই রায়ের ফলে দেশের ঐক্য এবং সাম্প্রদায়িক ভ্রাতৃত্ববোধ বিপদগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেন রহমানি।
প্রসঙ্গত, জেলা আদালতের বিচারক এ কে বিশ্বেস অজ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটির আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন যেখানে হিন্দুপক্ষের জ্ঞানভাপী মসজিদ নিয়ে মামলা চালানোর বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়েছিল। এই রায়ের ফলে জ্ঞানভাপী মসজিদ, কাশী বিশ্বনাথ মন্দির বিবাদ ফের উসকে দেওয়া হল।
পাশাপাশি, ইলাহাবাদ হাইকোর্টও এই বিষয়ে ১৯৯১ সালের একটি মামলার শুনানি করছে। ২৮ সেপ্টেম্বর সেই মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত। জ্ঞানভাপী মসজিদ বারাণসীতে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়ে।বারাণসী আদালতের রায় ফের একবার এই বিতর্ক উসকে দিল যে, মসজিদ তৈরি হয়েছিল মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে মন্দির ভেঙে তার ভগ্নাবশেষের উপর। সুপ্রিম কোর্ট জেলা আদালতকে নির্দেশ দিয়েছিল প্রথমে হিন্দু মহিলাদের জ্ঞানভাপী মসজিদে পুজো করার মামলা আইনত চালানো যায় কি না, তার বিচার করা। মসজিদ কমিটি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল যে, ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইন অনুযায়ী হিন্দুপক্ষ এই মামলা চালাতে পারে না। এই আইনে বলা হয়েছে, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ছাড়া যেকোনও ধর্মস্থান যেভাবে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টে ছিল তার স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে। তার কোনও ধর্মীয় চরিত্র পরিবর্তন হবে না। কিন্তু বারাণসীর জেলা আদালত বলেছে, ১৯৯১ সালের আইন এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ জ্ঞানভাপী মসজিদে দেবদেবীর মূর্তি অনেক আগেই স্থাপিত। হিন্দু মহিলারা সেখানে বছরে একবার পুজো করে থাকেন। তারা এখন প্রতিদিন পুজো করার আবেদন করেছেন। তাই এই মামলা চলতেই পারে।