লালগোলার চাকরিপ্রার্থীর মৃত্যু ঘটনায় নিয়োগ দুর্নীতি খুঁজতে তদন্তভার সিবিআইকে

- আপডেট : ১ মার্চ ২০২৩, বুধবার
- / 6
পারিজাত মোল্লা: রাজ্যের বেশিরভাগ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিংহভাগ তদন্তভার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে। বুধবারও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এর সিঙ্গেল বেঞ্চে লালগোলার এক চাকরিপ্রার্থীর আত্মহত্যা মামলায় সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়া হল।
সিবিআই-কে তদন্তের নথি সাত দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার।
এদিন মামলার শুনানি পর্বে আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে পাওয়া সুইসাইড নোট নিয়োগ দুর্নীতির সূত্র হতে পারে’।
এর পাশাপাশি প্রয়োজনে সিবিআই এই মামলায় চার্জশিটও দাখিল করতে পারবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থার। এই মামলায় অবশ্য আগেই চার্জশিট জমা করেছে স্থানীয় থানার পুলিশ। পুলিশের তরফ থেকে আগেই আদালতে জানানো হয়েছে, ‘ আত্মঘাতী চাকরিপ্রার্থী আব্দুর রহমানের কাছ থেকে একটি ন’পাতার নোট পাওয়া গিয়েছে’।
সদ্য তদন্তভার যাওয়া পুলিশের দাবি, -‘ আত্মঘাতী চাকরিপ্রার্থী আব্দুর রহমান কেবল প্রতারিত চাকরিপ্রার্থী তাই নয়, তিনি নিজেও জড়িয়ে পড়েছিলেন নিয়োগ দুর্নীতিতে’।
পুলিশের চার্জশিটেই তাঁর নাম রয়েছে। নিহত রহমান-সহ চার জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। আদালতে পুলিশ জানায়, ‘ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে রহমানের’। বৃহত্তর ষড়যন্ত্র খুঁজে বার করার সুযোগ রয়েছে।
এর আগে এই মামলায় বিচারপতি উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ ছিল, সিবিআইয়ের বক্তব্য শুনতে হবে। কারণ লালগোলা থানা এখনও তদন্তে ত্রুটি করেনি। এসএসসি দুর্নীতির সঙ্গে এই ঘটনার যোগ রয়েছে। শুধু আত্মহত্যা নয়, কোর্ট নিয়োগ দুর্নীতি নিয়েও তদন্তের বিষয় নিয়ে চিন্তিত। তাই সিবিআই-এর মতামত চায়।”
বিচারপতি তখনই জানতে চেয়েছিলেন, “সিবিআই কেন জেলে গিয়ে জেরা করছে না? বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা ওড়ানো যাচ্ছে না।” উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদের লালগোলায় চাকরিপ্রার্থী আব্দুর রহমানের দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের অভিযোগ, আত্মঘাতী হয়েছেন রহমান। প্রাথমিকে চাকরির টোপ দিয়ে রহমানের কাছ থেকে ৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা দিয়েও তিনি চাকরি পাননি বলে দাবি পরিবারের। বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়ায় সুইসাইড নোট ও পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আত্মঘাতী আবদুর রহমানের পরিবারের অভিযোগ ছিল, টাকা দিয়ে চাকরি না পেয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন ওই তরুণ। সেই মামলায় বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের কথা বলেছিল আদালত। আগের দিনের শুনানিতে উঠে এসেছিল আবদুর রহমানের সুইসাইড নোটের প্রসঙ্গও। এদিন শেষমেশ সিবিআইকেই তদন্তভার দিল আদালত।
জানা গিয়েছে, আবদুর রহমানের সুইসাইড নোটে দিবাকর কনুই নামের এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা ছিল। এও জানা গিয়েছিল, সুইসাইড নোটে আত্মঘাতী ছাত্র লিখে গিয়েছেন, এই দিবাকরই তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেবেন।দিবাকরকে ইতিমধ্যে তারাপীঠ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এর আগের শুনানিতে আদালত সিবিআইয়ের উদ্দেশে বলেছিল, কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তকারীরা কেন দিবাকর কনুইকে জেরা করছেন না? আদালত মনে করছে, নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনার সঙ্গে এই ঘটনার যোগ রয়েছে।আদালত এও জানায় , -‘আবদুর রহমানের আত্মহত্যার পর তাঁর পরিবার যে অভিযোগ করেছে তার ভিত্তিতে পুলিশি তদন্তে এখনও কোনও ফাঁক নেই।
কিন্তু যেহেতু নিয়োগ দুর্নীতির গোটা তদন্তটা করছে সিবিআই তাই তাদেরই ভার দেওয়া হল’। এখন দেখার লালগোলার চাকরিপ্রার্থীর আত্মহত্যা মামলায় কী পদক্ষেপ করে সিবিআই।এই মুর্শিদাবাদেই প্রধান শিক্ষক ‘বাবার’ স্কুলে ভুয়ো শিক্ষক ‘ছেলের’ সন্ধান মেলে। এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলাটি অবশ্য সিআইডির ডিআইজি করছেন।