০৩ মে ২০২৫, শনিবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দ্রুত হারে গলে যাচ্ছে হিমালয়ের হিমবাহ, ওজনে ৫৭ কোটির হাতির সমান! চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৫ এপ্রিল ২০২৩, বুধবার
  • / 10

পুবের কলম,ওয়েবডেস্কঃ বিশ্ব জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। প্রশান্ত মহাসাগর, ভারত মহাসাগরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘূর্ণিঝড় বৃদ্ধির ব্যাপারে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা। হিমাবাহ গলে যাওয়ার পরিণতি কেমন হতে পারে তাও তুলে ধরেছেন  আবহাওয়াবিদরা । এবার যে তথ্য সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে হিমালয়ের বেশিরভাগ হিমবাহই গলে যাচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে দ্রুত হারে গলে যাচ্ছে হিমালয়ের হিমবাহ। প্রায় ৫৭ কোটি হাতির ওজনের সমান হিমবাহের গলন হয়েছে বলেই জানা গেছে। হিমবাহের তলদেশে এই  গলন   হওয়ায়, এটি এতদিন সম্পূর্ণরুপে অদৃশ্য ছিল বলেই জানিয়েছে একদল গবেষক। উষ্ণায়নের জেরে হিমবাহের বিপুল ক্ষয়ে গবেষকরাও চিন্তিত ।

এই প্রথমবার হিমালয়ের হিমবাহগুলির নিম্নতলের এমন রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে । কারণ উপগ্রহগুলি জলের নীচে হিমবাহের পরিবর্তনগুলি সঠিকভাবে পর্যালোচনা করতে পারে না। তাই হিমবাহের এই বিপুল ধস পূর্ববর্তী কোনও গবেষণায় উঠে আসেনি।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট অ্যান্ড্রুস, চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস, অস্ট্রিয়ার গ্রাজ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি এবং কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা একত্রে একটি গবেষণার মাধ্যমে এই তথ্য সবার সামনে তুলে ধরেছে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, হিমবাহ গলনের আগের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, পূর্বের তুলনায় এই পরিমাণ ৬.৫ শতাংশ বেড়েছে।  এই গবেষণা পত্রটি নেচার জিওসায়েন্স জার্নালেও প্রকাশিত হয়েছে । সেখানে  উল্লেখ করা হয়েছে মধ্য হিমালয়ে হিমবাহ গলনের পরিমাণ সব থেকে বেশি। এবং সেখানেই আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে হিমবাহ হ্রদগুলি।

তিব্বত মালভূমি গবেষণা ইনস্টিটিউট গুওকিং ঝাং এই গবেষণার প্রধান লেখক।

ঘটনাপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, “হিমবাহের গলনে হ্রদগুলি ফুলেফেঁপে উঠছে। ফলে খুব শীঘ্রই বন্যা  পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। হিমবাহের ব্যাপক গলনের ফলে ভারসাম্যও  বিঘ্নিত হতে পারে।  এই বিষয়ে আমরা পরীক্ষা- নিরীক্ষা চালাচ্ছি। বৃহত্তর হিমালয়জুড়ে  হিমবাহের গলন এখন আমাদের মুখ্য আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে প্রোগ্লাসিয়াল হ্রদের সংখ্যা ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। এবং আয়তনে ৩৩ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশে বৃদ্ধি  পেয়েছে। এই ঘটনা সত্যিই আমাদের আশঙ্কিত করে তুলেছে।

হিমবাহ গলতে থাকার ফল সুদূরপ্রসারী। ইতিমধ্যে হিমালয়ের পাদদেশগুলিতে একের পর এক হ্রদের সৃষ্টি হচ্ছে। যা অচিরে বন্যা ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

গবেষকদের মতে মাউন্ট এভারেস্টের এই হিমবাহ ধ্বংসের ফল হবে মারাত্মক। এশিয়া  মহাদেশের পানীয় জল, খাদ্য ও জীবিকা সঙ্কটের মুখে পড়বে বলে দাবি গবেষকদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, শুধু যে হিমবাহ গলছে তাই নয়, এত দিন ধরে যে তুষার আচ্ছাদিত পৃষ্ঠ হিমালয়ের ভারসাম্য রক্ষা করছে, সেটিও নষ্ট হচ্ছে। ফলত, পরিস্থিতি সঙ্কটজনক।

Copyright © 2025 Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

দ্রুত হারে গলে যাচ্ছে হিমালয়ের হিমবাহ, ওজনে ৫৭ কোটির হাতির সমান! চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট

আপডেট : ৫ এপ্রিল ২০২৩, বুধবার

পুবের কলম,ওয়েবডেস্কঃ বিশ্ব জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। প্রশান্ত মহাসাগর, ভারত মহাসাগরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘূর্ণিঝড় বৃদ্ধির ব্যাপারে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা। হিমাবাহ গলে যাওয়ার পরিণতি কেমন হতে পারে তাও তুলে ধরেছেন  আবহাওয়াবিদরা । এবার যে তথ্য সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে হিমালয়ের বেশিরভাগ হিমবাহই গলে যাচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে দ্রুত হারে গলে যাচ্ছে হিমালয়ের হিমবাহ। প্রায় ৫৭ কোটি হাতির ওজনের সমান হিমবাহের গলন হয়েছে বলেই জানা গেছে। হিমবাহের তলদেশে এই  গলন   হওয়ায়, এটি এতদিন সম্পূর্ণরুপে অদৃশ্য ছিল বলেই জানিয়েছে একদল গবেষক। উষ্ণায়নের জেরে হিমবাহের বিপুল ক্ষয়ে গবেষকরাও চিন্তিত ।

এই প্রথমবার হিমালয়ের হিমবাহগুলির নিম্নতলের এমন রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে । কারণ উপগ্রহগুলি জলের নীচে হিমবাহের পরিবর্তনগুলি সঠিকভাবে পর্যালোচনা করতে পারে না। তাই হিমবাহের এই বিপুল ধস পূর্ববর্তী কোনও গবেষণায় উঠে আসেনি।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট অ্যান্ড্রুস, চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস, অস্ট্রিয়ার গ্রাজ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি এবং কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা একত্রে একটি গবেষণার মাধ্যমে এই তথ্য সবার সামনে তুলে ধরেছে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, হিমবাহ গলনের আগের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, পূর্বের তুলনায় এই পরিমাণ ৬.৫ শতাংশ বেড়েছে।  এই গবেষণা পত্রটি নেচার জিওসায়েন্স জার্নালেও প্রকাশিত হয়েছে । সেখানে  উল্লেখ করা হয়েছে মধ্য হিমালয়ে হিমবাহ গলনের পরিমাণ সব থেকে বেশি। এবং সেখানেই আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে হিমবাহ হ্রদগুলি।

তিব্বত মালভূমি গবেষণা ইনস্টিটিউট গুওকিং ঝাং এই গবেষণার প্রধান লেখক।

ঘটনাপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, “হিমবাহের গলনে হ্রদগুলি ফুলেফেঁপে উঠছে। ফলে খুব শীঘ্রই বন্যা  পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। হিমবাহের ব্যাপক গলনের ফলে ভারসাম্যও  বিঘ্নিত হতে পারে।  এই বিষয়ে আমরা পরীক্ষা- নিরীক্ষা চালাচ্ছি। বৃহত্তর হিমালয়জুড়ে  হিমবাহের গলন এখন আমাদের মুখ্য আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে প্রোগ্লাসিয়াল হ্রদের সংখ্যা ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। এবং আয়তনে ৩৩ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশে বৃদ্ধি  পেয়েছে। এই ঘটনা সত্যিই আমাদের আশঙ্কিত করে তুলেছে।

হিমবাহ গলতে থাকার ফল সুদূরপ্রসারী। ইতিমধ্যে হিমালয়ের পাদদেশগুলিতে একের পর এক হ্রদের সৃষ্টি হচ্ছে। যা অচিরে বন্যা ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

গবেষকদের মতে মাউন্ট এভারেস্টের এই হিমবাহ ধ্বংসের ফল হবে মারাত্মক। এশিয়া  মহাদেশের পানীয় জল, খাদ্য ও জীবিকা সঙ্কটের মুখে পড়বে বলে দাবি গবেষকদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, শুধু যে হিমবাহ গলছে তাই নয়, এত দিন ধরে যে তুষার আচ্ছাদিত পৃষ্ঠ হিমালয়ের ভারসাম্য রক্ষা করছে, সেটিও নষ্ট হচ্ছে। ফলত, পরিস্থিতি সঙ্কটজনক।