Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the login-customizer domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/u419551674/domains/puberkalom.in/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
অমুসলিমদের প্রতি মহানবী সা.-এর আচরণ | Puber Kalom
১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অমুসলিমদের প্রতি মহানবী সা.-এর আচরণ

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বুধবার
  • / 16

পুবের কলম, দ্বীন দুনিয়া ওয়েবডেস্ক: ইসলাম শান্তি ও সাম্যের ধর্ম। হযরত মুহাম্মদ সা. ছিলেন সেই ধর্মের প্রবর্তক। যাঁর সমগ্র জীবন বিশ্ববাসীর জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। আল্লাহ্তায়ালা বলেন,  ‘হে আমার রাসূল! আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া)

তিনি (সা.) নির্দিষ্ট কোনও জাতির জন্য প্রেরিত হননি। তিনি (সা.) ছিলেন সমগ্র জগতের রাসূল ও মহা মানব। তাঁর ধর্ম ইসলাম হলেও সব ধর্মের প্রতি ছিলেন উদার ও শ্রদ্ধাশীল। ‘মদিনা সনদ’ তার উত্তম দৃষ্টান্ত। মদিনা হিজরতের পর মহানবী সা. মদিনায় বসবাসরত সব ধর্মের অনুসারীদের সমন্বয়ে এই সনদটি তৈরি করেন।
উল্লেখ্য, মুসলমান ছাড়া সে সময় মদিনায় বাস করত ইহুদি, পৌত্তলিক, মূর্তিপূজক ও অগ্নিপূজক।

৬২২-৬৩০ খ্রিস্টাধ পর্যন্ত মহানবী সা. এি সনদের মাধ্যমে মদিনা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। দীর্ঘ আট বছরের ইতিহাসে অন্য ধর্মের একটি লোকও এই অভিযোগ করেনি যে, সে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বরং ইসলামের মর্মবাণীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অনেক লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে।

কেননা, ষষ্ঠ হিজরিতে যখন মহানবী সা. মক্কায় হজব্রত পালন করতে এসে মক্কার অবিশ্বাসীদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মদিনা প্রত্যাবর্তন করেন, তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন এক হাজার ৪০০ সাহাবি। অপরদিকে অষ্টম হিজরিতে মহানবী সা. ১০ হাজার সাহাবি নিয়ে মক্কা বিজয় করেন এবং অবিশ্বাসীদের বিনা বাধায় মক্কা নগরীতে প্রবেশ করেন। মহানবী সা. অমুসলিমদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন তার কয়েকটি উদাহরণ উপস্থাপন করা হল।

মহানবী সা. অমুসলিম প্রত্যেক নাগরিককে তাদের ন্যায্য অধিকার প্রদান করেছেন এবং সাহাবিদের এই নির্দেশনা দিতেন। তিনি (সা.) তাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘জেনে রাখো, কোনও মুসলিম যদি অমুসলিম নাগরিকদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন করে, কোনও অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করে, তার কোনও ধন-সম্পদ জোরপূর্বক কেড়ে নেয়, তবে কিয়ামতের দিন বিচারের কাঠগড়ায় আমি তার বিপক্ষে অমুসলিমদের পক্ষে অবস্থান করব।’ (আবু দাউদ)।

শুধু তা-ই নয়, মহানবী সা. অমুসলিমদের সঙ্গে ওঠাবসা করেছেন এবং কোনও কোনও অমুসলিমকে তিনি (সা.) মসজিদে বসার অনুমতি প্রদান করেছেন। যেমন সাকিফ গোত্রের প্রতিনিধি মহানবী সা.-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে মসজিদের শেষ গম্বুজের কাছে অবস্থান করে। অতঃপর নামাযের সময় হলে সাহাবিদের মধ্য থেকে একজন বললেন, ‘হে আল্লাহ্! নামাযের সময় হয়েছে। এরা একদল অমুসলিম, যারা মসজিদে আছে (ফলে মসজিদ নাপাক হতে পারে)।’ তখন মহানবী সা. বললেন, ‘অমুসলিমদের কারণে আল্লাহর জমিন নাপাক হয় না।’ (ইবন আবি শায়বা)

মহানবী সা. অমুসলিমদের বোঝা বহন করতেন। যেমন এক বৃদ্ধা তাঁর বোঝা বহন করতে না পেরে বসে ছিলেন। মহানবী সা. বললেন,  ‘আপনি কোথায় যাবেন?’ বৃদ্ধা বললেন, ‘শুনেছি, আমাদের দেশে মুহাম্মদ নামে এক যুবক এসেছে। সে আমাদের ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করাচ্ছে। আমি তাঁর ভয়ে পাহাড়ের অপর প্রান্তে যেতে চাই।’ মহানবী সা. তাঁকে তাঁর বোঝাসহ গন্তব্যে পৌঁছে দেন। ফেরার সময় বৃদ্ধা বললেন, ‘তুমি এত ভালো মানুষ! তুমি কে বাবা?’ তখন তিনি (সা.) বললেনn ‘আপনি যার ভয়ে স্বীয় ভূমি ত্যাগ করেছেন, আমি সেই মুহাম্মদ।’ তখন বৃদ্ধার ভুল ভেঙে গেল এবং ইসলাম গ্রহণ করলেন।

অমুসলিমরা অসুস্থ হলে মহানবী সা. তাদের দেখতে যেতেন এবং তাঁদের খোঁজখবর নিতেন। হযরত আনাস রা. বলেন n এক ইহুদি দাস নবী করিম সা.-এর খেদমত করত। যখন সে অসুস্থ হল তখন মহানবী সা. তাঁকে দেখতে গেলেন। তাঁর মাথার দিকে বসে তাঁর খোঁজখবর নিয়ে তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তখন সে দাস তার পিতার দিকে দেখল। পিতা বললেন, ‘তুমি মুহাম্মদ সা.-কে অনুসরণ করো। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করল। তখন মহানবী সা. এই কথা বললেন, ‘আল্লাহর শুকরিয়া যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন।’ (বুখারী)
অমুসলিমদের প্রতি মহানবী সা. জীবিত অবস্থায় যেমন হক আদায় করেছেন, তেমনি মৃত্যুর পরেও হক আদায় করেছেন।

হাদিসে বর্ণিত আছে, একদা মহানবী সা.-এর পাশ দিয়ে এক ইহুদির লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি দাঁড়িয়ে যান। সঙ্গে থাকা সাহাবি বললেন, ‘আপনি কেন দাঁড়ালেন, এটা তো ইহুদির লাশ।’ তখন তিনি (সা.) বললেন,  ‘এটা কি মানব নয়?’ (বুখারী)

মুসলমানরা যেন অবিশ্বাসীদের মূর্তিগুলোকে গালি না দেয় সেই ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কারণ তাদের গালি দিলে তারাও আল্লাহ্কে গালি দেবে। আল্লাহ্ বলেন, ‘আর তোমরা তাদের গালমন্দ কোরো না, আল্লাহ্ ব্যতীত যাদেরকে তারা ডাকে, ফলে তারা গালমন্দ করবে আল্লাহ্কে, শত্রুতা পোষণ করে অজ্ঞতাবশত। এভাবেই আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য তাদের কর্ম শোভিত করে দিয়েছি। তারপর তাদের রবের নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন।’ (সূরা আনয়াম)

ইসলাম মানবতার ধর্ম। সবাইকে মানবিক করার জন্যই আল্লাহ্তায়ালা তাঁর নবী সা.-কে পাঠিয়েছেন। তিনি (সা.) প্রতিষ্ঠা করেছেন অনুকরণীয় সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থা। আমরা তাঁর উম্মত। সাম্প্রদায়িক চেতনা ভুলে গিয়ে নবী সা.-এর আদর্শ বাস্তবায়ন করা এবং মুসলিম-অমুসলিম ভাই-ভাই হয়ে সমাজে বাস করা একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

অমুসলিমদের প্রতি মহানবী সা.-এর আচরণ

আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বুধবার

পুবের কলম, দ্বীন দুনিয়া ওয়েবডেস্ক: ইসলাম শান্তি ও সাম্যের ধর্ম। হযরত মুহাম্মদ সা. ছিলেন সেই ধর্মের প্রবর্তক। যাঁর সমগ্র জীবন বিশ্ববাসীর জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। আল্লাহ্তায়ালা বলেন,  ‘হে আমার রাসূল! আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া)

তিনি (সা.) নির্দিষ্ট কোনও জাতির জন্য প্রেরিত হননি। তিনি (সা.) ছিলেন সমগ্র জগতের রাসূল ও মহা মানব। তাঁর ধর্ম ইসলাম হলেও সব ধর্মের প্রতি ছিলেন উদার ও শ্রদ্ধাশীল। ‘মদিনা সনদ’ তার উত্তম দৃষ্টান্ত। মদিনা হিজরতের পর মহানবী সা. মদিনায় বসবাসরত সব ধর্মের অনুসারীদের সমন্বয়ে এই সনদটি তৈরি করেন।
উল্লেখ্য, মুসলমান ছাড়া সে সময় মদিনায় বাস করত ইহুদি, পৌত্তলিক, মূর্তিপূজক ও অগ্নিপূজক।

৬২২-৬৩০ খ্রিস্টাধ পর্যন্ত মহানবী সা. এি সনদের মাধ্যমে মদিনা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। দীর্ঘ আট বছরের ইতিহাসে অন্য ধর্মের একটি লোকও এই অভিযোগ করেনি যে, সে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বরং ইসলামের মর্মবাণীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অনেক লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে।

কেননা, ষষ্ঠ হিজরিতে যখন মহানবী সা. মক্কায় হজব্রত পালন করতে এসে মক্কার অবিশ্বাসীদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মদিনা প্রত্যাবর্তন করেন, তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন এক হাজার ৪০০ সাহাবি। অপরদিকে অষ্টম হিজরিতে মহানবী সা. ১০ হাজার সাহাবি নিয়ে মক্কা বিজয় করেন এবং অবিশ্বাসীদের বিনা বাধায় মক্কা নগরীতে প্রবেশ করেন। মহানবী সা. অমুসলিমদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন তার কয়েকটি উদাহরণ উপস্থাপন করা হল।

মহানবী সা. অমুসলিম প্রত্যেক নাগরিককে তাদের ন্যায্য অধিকার প্রদান করেছেন এবং সাহাবিদের এই নির্দেশনা দিতেন। তিনি (সা.) তাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘জেনে রাখো, কোনও মুসলিম যদি অমুসলিম নাগরিকদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন করে, কোনও অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করে, তার কোনও ধন-সম্পদ জোরপূর্বক কেড়ে নেয়, তবে কিয়ামতের দিন বিচারের কাঠগড়ায় আমি তার বিপক্ষে অমুসলিমদের পক্ষে অবস্থান করব।’ (আবু দাউদ)।

শুধু তা-ই নয়, মহানবী সা. অমুসলিমদের সঙ্গে ওঠাবসা করেছেন এবং কোনও কোনও অমুসলিমকে তিনি (সা.) মসজিদে বসার অনুমতি প্রদান করেছেন। যেমন সাকিফ গোত্রের প্রতিনিধি মহানবী সা.-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে মসজিদের শেষ গম্বুজের কাছে অবস্থান করে। অতঃপর নামাযের সময় হলে সাহাবিদের মধ্য থেকে একজন বললেন, ‘হে আল্লাহ্! নামাযের সময় হয়েছে। এরা একদল অমুসলিম, যারা মসজিদে আছে (ফলে মসজিদ নাপাক হতে পারে)।’ তখন মহানবী সা. বললেন, ‘অমুসলিমদের কারণে আল্লাহর জমিন নাপাক হয় না।’ (ইবন আবি শায়বা)

মহানবী সা. অমুসলিমদের বোঝা বহন করতেন। যেমন এক বৃদ্ধা তাঁর বোঝা বহন করতে না পেরে বসে ছিলেন। মহানবী সা. বললেন,  ‘আপনি কোথায় যাবেন?’ বৃদ্ধা বললেন, ‘শুনেছি, আমাদের দেশে মুহাম্মদ নামে এক যুবক এসেছে। সে আমাদের ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করাচ্ছে। আমি তাঁর ভয়ে পাহাড়ের অপর প্রান্তে যেতে চাই।’ মহানবী সা. তাঁকে তাঁর বোঝাসহ গন্তব্যে পৌঁছে দেন। ফেরার সময় বৃদ্ধা বললেন, ‘তুমি এত ভালো মানুষ! তুমি কে বাবা?’ তখন তিনি (সা.) বললেনn ‘আপনি যার ভয়ে স্বীয় ভূমি ত্যাগ করেছেন, আমি সেই মুহাম্মদ।’ তখন বৃদ্ধার ভুল ভেঙে গেল এবং ইসলাম গ্রহণ করলেন।

অমুসলিমরা অসুস্থ হলে মহানবী সা. তাদের দেখতে যেতেন এবং তাঁদের খোঁজখবর নিতেন। হযরত আনাস রা. বলেন n এক ইহুদি দাস নবী করিম সা.-এর খেদমত করত। যখন সে অসুস্থ হল তখন মহানবী সা. তাঁকে দেখতে গেলেন। তাঁর মাথার দিকে বসে তাঁর খোঁজখবর নিয়ে তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তখন সে দাস তার পিতার দিকে দেখল। পিতা বললেন, ‘তুমি মুহাম্মদ সা.-কে অনুসরণ করো। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করল। তখন মহানবী সা. এই কথা বললেন, ‘আল্লাহর শুকরিয়া যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন।’ (বুখারী)
অমুসলিমদের প্রতি মহানবী সা. জীবিত অবস্থায় যেমন হক আদায় করেছেন, তেমনি মৃত্যুর পরেও হক আদায় করেছেন।

হাদিসে বর্ণিত আছে, একদা মহানবী সা.-এর পাশ দিয়ে এক ইহুদির লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি দাঁড়িয়ে যান। সঙ্গে থাকা সাহাবি বললেন, ‘আপনি কেন দাঁড়ালেন, এটা তো ইহুদির লাশ।’ তখন তিনি (সা.) বললেন,  ‘এটা কি মানব নয়?’ (বুখারী)

মুসলমানরা যেন অবিশ্বাসীদের মূর্তিগুলোকে গালি না দেয় সেই ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কারণ তাদের গালি দিলে তারাও আল্লাহ্কে গালি দেবে। আল্লাহ্ বলেন, ‘আর তোমরা তাদের গালমন্দ কোরো না, আল্লাহ্ ব্যতীত যাদেরকে তারা ডাকে, ফলে তারা গালমন্দ করবে আল্লাহ্কে, শত্রুতা পোষণ করে অজ্ঞতাবশত। এভাবেই আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য তাদের কর্ম শোভিত করে দিয়েছি। তারপর তাদের রবের নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন।’ (সূরা আনয়াম)

ইসলাম মানবতার ধর্ম। সবাইকে মানবিক করার জন্যই আল্লাহ্তায়ালা তাঁর নবী সা.-কে পাঠিয়েছেন। তিনি (সা.) প্রতিষ্ঠা করেছেন অনুকরণীয় সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থা। আমরা তাঁর উম্মত। সাম্প্রদায়িক চেতনা ভুলে গিয়ে নবী সা.-এর আদর্শ বাস্তবায়ন করা এবং মুসলিম-অমুসলিম ভাই-ভাই হয়ে সমাজে বাস করা একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।