২৫ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সব সীমানা ছাড়িয়ে গেল মরক্কোর গর্জন

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার
  • / 4

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ একের পর এক বিস্ময় নিয়ে হাজির হয়েছে কাতার বিশ্বকাপ। শুরুতেই সউদি আরবের কাছে ২-০ গোলে পর্যুদস্ত হয়েছে মেসির আর্জেন্টিনা। এরপর জাপানের কাছে বিশ্বকাপ জয়ী জার্মানির হার। মরক্কোর কাছে ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়ামের মতো হেভিওয়েটদের আত্মসমর্পণ। উরুগুয়ের বিপক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ার নজরকাড়া পারফরম্যান্স। তিউনিশিয়ার কাছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্র্যান্সের আটকে যাওয়া। গ্রুপ পর্বে এমনই কত অঘটনের সাক্ষী থেকেছে ফুটবলবিশ্ব। যদিও নক আউটের জন্যও এমন অনেক বিস্ময় জমা রেখেছিল কাতার বিশ্বকাপ। দাপটের সঙ্গে সেই বিস্ময় ঘটিয়ে চলেছে টিম মরক্কো। আফ্রিকার এই মুসলিম প্রধান দেশ স্পেনের মত বিশ্বকাপ জয়ী দলকে বিদায় করে দিয়েছে।

 

কোয়ার্টার ফাইনালে ইউসুফ এল নেসেরির গোলে পর্তুগালকে হারিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে চোখের জলে বিদায় জানিয়েছে। এতে মরক্কো যেমন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে, একইভাবে তারা প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে ইতিহাস গড়ে ফেলেছে। সেমিতে মরক্কোর সামনে ফ্রান্স। ফাইনালে যাওয়ার রাস্তাটা তুল্যমূল্য কঠিন হাকিমিদের সামনে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, আগামী বৃহস্পতিবার আল বায়াত স্টেডিয়ামে সেমির লড়াইয়ে এই ফ্রান্সকে যদি মরক্কো হারিয়ে দেয়, তাহলে এতে আর নতুন করে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।

সব সীমানা ছাড়িয়ে গেল মরক্কোর গর্জন
এই বিশ্বকাপের প্রত্যেক ম্যাচেই মরক্কোর ফুটবলাররা ম্যাচ শেষে সিজদায় গিয়ে আল্লাহকে সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আসছেন। পর্তুগালের বিপক্ষে ইতিহাস গড়ার ম্যাচেও একইভাবে কৃতজ্ঞতা জানালেন হাকিম জিয়েচরা। মাঠের মধ্যেই একযোগে সবাই লুটিয়ে পড়লেন সিজদায়। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না তারা, সে কারণে প্রতি ম্যাচে অপরাজেয় থেকে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুল করছেন না মরক্কোর ফুটবলাররা। দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে মরক্কোর ইতিহাস গড়ার ম্যাচে দেখা গেল অবর্ণনীয় এক দৃশ্য।

 

চলতি বিশ্বকাপে পিএসজি তারকা আশরাফ হাকিমি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে যেভাবে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে মাঠে জয় উদযাপন করেন, এবার তার সতীর্থ সোফিয়ান বোফালেও একই পথে হাঁটলেন। দলের জয়ের আনন্দে মরক্কোর অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সোফিয়ান বোফালে নিজের মাকে মাঠের মধ্যে নিয়ে আসেন। তারপর মাকে নিয়ে ছেলের বাঁধনহারা নাচ। যদিও সেই সময় তাদের আনন্দে সঙ্গী হন মরক্কো দলের বাকিরাও। যে দৃশ্য টিভির পর্দার সামনে থাকা ফুটবলপ্রেমীদের পাশাপাশি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলেন গ্যালারিতে থাকা দর্শকরাও।

ফিফা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে এর আগে ক্যামারুন, সেনেগাল, ঘানার মত দেশগুলি পৌঁছে গিয়েছিল। তবে এই তিন আফ্রিকান দেশের দৌড় ছিল সর্বোচ্চ দ্বিতীয় রাউন্ড। তাদের বিশ্বকাপ দৌড় শেষ হয়ে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে।

 

যদিও এবারই প্রথম কোনো আফ্রিকান দেশ হিসেবে মরক্কো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে। শুধু আফ্রিকান দেশ হিসেবে নয়, বিশ্বের প্রথম কোনো মুসলিম দেশ হিসেবেও মরক্কো পৌঁছে গেল বিশ্বকাপের শেষ চারে। রোনাল্ডো, পেপে, ব্রুনো ফার্নান্ডেজদের নিয়ে গড়ে ওঠা শক্তিশালী পর্তুগালকে কোয়ার্টার ফাইনালে ১-০ গোলে হারিয়ে সেমির টিকিট কাটল মরক্কো।

সব সীমানা ছাড়িয়ে গেল মরক্কোর গর্জন

আর এতেই বিশ্ব ফুটবল মহলে এই আরব-আফ্রিকান দেশটি নিজেদের আলাদা একটা পরিচিতিও গড়ে তুললো। আফ্রিকান অ্যাটলাস লায়ন্সদের এমন ঈর্ষণীয় পারফরম্যান্স যেন সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। বিশ্বকাপের মতো এতো বড় মঞ্চে তাদের এমন পারফরম্যান্স আফ্রিকান দলগুলিকে আগামীদিনে নিশ্চয়ই নতুন করে স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন অনেকেই।

গ্রুপে মরক্কো মুখোমুখি হয় ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম এবং কানাডার সঙ্গে। প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে গোলশূন্য ড্র করে চমকে দিয়েছিল তারা। বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারায় মরক্কো। শেষ ম্যাচে কানাডাকে হারিয়েছে ২-১ গোলে। যদিও কানাডার বিপক্ষে যে গোলটি খেয়েছিল তারা, সেটি আত্মঘাতি ছিল।

 

এরপর পেনাল্টি, টাইব্রেকার কিংবা যেভাবেই হোক- মরক্কোর জালে কেউ বল ঠেলে দিতে পারেনি। স্পেনকে ১২০ মিনিট ঠেকিয়ে রাখার পাশাপাশি টাইব্রেকারে প্রতিটা শটই ঠেকিয়ে দিয়েছেন মরক্কো গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো। এমনকি কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালের বিপক্ষে নিজেদের জাল অক্ষত রাখল তারা। যে পর্তুগাল দ্বিতীয় রাউন্ডে সুইজারল্যান্ডের জালে ৬বার বল পাঠিয়েছিল, তারা মরক্কোর জাল কোনোভাবেই খুঁজে পেল না।

 

বারবার রোনাল্ডো, র‌্যামোস, ব্রুনোরা থমকে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন ইয়াসিন বোনোর সামনে গিয়ে। যে কারণে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়ে বিশ্বকাপ থেকে খালিহাতে বিদায় নিতে হল পর্তুগীজদের। চলতি বিশ্বকাপে মরক্কোর শক্তিশালী রক্ষণ ভেদ করে কেউই জালের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। এখন দেখার এমবাপ্পে, ডেম্বেলেরা কি মরক্কোর অভেদ্য রক্ষণ দূর্গের শেষ প্রহরী আশরাফ হাকিমিকে পরাস্ত করতে পারেন কিনা? নাকি আর এক দফা বিস্ময় ঘটিয়ে বাকিদের মতো ফ্রান্সকেও গুঁড়িয়ে দিয়ে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেন মরক্কোর ফুটবলাররা।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

সব সীমানা ছাড়িয়ে গেল মরক্কোর গর্জন

আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ একের পর এক বিস্ময় নিয়ে হাজির হয়েছে কাতার বিশ্বকাপ। শুরুতেই সউদি আরবের কাছে ২-০ গোলে পর্যুদস্ত হয়েছে মেসির আর্জেন্টিনা। এরপর জাপানের কাছে বিশ্বকাপ জয়ী জার্মানির হার। মরক্কোর কাছে ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়ামের মতো হেভিওয়েটদের আত্মসমর্পণ। উরুগুয়ের বিপক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ার নজরকাড়া পারফরম্যান্স। তিউনিশিয়ার কাছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্র্যান্সের আটকে যাওয়া। গ্রুপ পর্বে এমনই কত অঘটনের সাক্ষী থেকেছে ফুটবলবিশ্ব। যদিও নক আউটের জন্যও এমন অনেক বিস্ময় জমা রেখেছিল কাতার বিশ্বকাপ। দাপটের সঙ্গে সেই বিস্ময় ঘটিয়ে চলেছে টিম মরক্কো। আফ্রিকার এই মুসলিম প্রধান দেশ স্পেনের মত বিশ্বকাপ জয়ী দলকে বিদায় করে দিয়েছে।

 

কোয়ার্টার ফাইনালে ইউসুফ এল নেসেরির গোলে পর্তুগালকে হারিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে চোখের জলে বিদায় জানিয়েছে। এতে মরক্কো যেমন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে, একইভাবে তারা প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে ইতিহাস গড়ে ফেলেছে। সেমিতে মরক্কোর সামনে ফ্রান্স। ফাইনালে যাওয়ার রাস্তাটা তুল্যমূল্য কঠিন হাকিমিদের সামনে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, আগামী বৃহস্পতিবার আল বায়াত স্টেডিয়ামে সেমির লড়াইয়ে এই ফ্রান্সকে যদি মরক্কো হারিয়ে দেয়, তাহলে এতে আর নতুন করে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।

সব সীমানা ছাড়িয়ে গেল মরক্কোর গর্জন
এই বিশ্বকাপের প্রত্যেক ম্যাচেই মরক্কোর ফুটবলাররা ম্যাচ শেষে সিজদায় গিয়ে আল্লাহকে সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আসছেন। পর্তুগালের বিপক্ষে ইতিহাস গড়ার ম্যাচেও একইভাবে কৃতজ্ঞতা জানালেন হাকিম জিয়েচরা। মাঠের মধ্যেই একযোগে সবাই লুটিয়ে পড়লেন সিজদায়। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না তারা, সে কারণে প্রতি ম্যাচে অপরাজেয় থেকে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুল করছেন না মরক্কোর ফুটবলাররা। দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে মরক্কোর ইতিহাস গড়ার ম্যাচে দেখা গেল অবর্ণনীয় এক দৃশ্য।

 

চলতি বিশ্বকাপে পিএসজি তারকা আশরাফ হাকিমি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে যেভাবে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে মাঠে জয় উদযাপন করেন, এবার তার সতীর্থ সোফিয়ান বোফালেও একই পথে হাঁটলেন। দলের জয়ের আনন্দে মরক্কোর অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সোফিয়ান বোফালে নিজের মাকে মাঠের মধ্যে নিয়ে আসেন। তারপর মাকে নিয়ে ছেলের বাঁধনহারা নাচ। যদিও সেই সময় তাদের আনন্দে সঙ্গী হন মরক্কো দলের বাকিরাও। যে দৃশ্য টিভির পর্দার সামনে থাকা ফুটবলপ্রেমীদের পাশাপাশি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলেন গ্যালারিতে থাকা দর্শকরাও।

ফিফা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে এর আগে ক্যামারুন, সেনেগাল, ঘানার মত দেশগুলি পৌঁছে গিয়েছিল। তবে এই তিন আফ্রিকান দেশের দৌড় ছিল সর্বোচ্চ দ্বিতীয় রাউন্ড। তাদের বিশ্বকাপ দৌড় শেষ হয়ে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে।

 

যদিও এবারই প্রথম কোনো আফ্রিকান দেশ হিসেবে মরক্কো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে। শুধু আফ্রিকান দেশ হিসেবে নয়, বিশ্বের প্রথম কোনো মুসলিম দেশ হিসেবেও মরক্কো পৌঁছে গেল বিশ্বকাপের শেষ চারে। রোনাল্ডো, পেপে, ব্রুনো ফার্নান্ডেজদের নিয়ে গড়ে ওঠা শক্তিশালী পর্তুগালকে কোয়ার্টার ফাইনালে ১-০ গোলে হারিয়ে সেমির টিকিট কাটল মরক্কো।

সব সীমানা ছাড়িয়ে গেল মরক্কোর গর্জন

আর এতেই বিশ্ব ফুটবল মহলে এই আরব-আফ্রিকান দেশটি নিজেদের আলাদা একটা পরিচিতিও গড়ে তুললো। আফ্রিকান অ্যাটলাস লায়ন্সদের এমন ঈর্ষণীয় পারফরম্যান্স যেন সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। বিশ্বকাপের মতো এতো বড় মঞ্চে তাদের এমন পারফরম্যান্স আফ্রিকান দলগুলিকে আগামীদিনে নিশ্চয়ই নতুন করে স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন অনেকেই।

গ্রুপে মরক্কো মুখোমুখি হয় ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম এবং কানাডার সঙ্গে। প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে গোলশূন্য ড্র করে চমকে দিয়েছিল তারা। বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারায় মরক্কো। শেষ ম্যাচে কানাডাকে হারিয়েছে ২-১ গোলে। যদিও কানাডার বিপক্ষে যে গোলটি খেয়েছিল তারা, সেটি আত্মঘাতি ছিল।

 

এরপর পেনাল্টি, টাইব্রেকার কিংবা যেভাবেই হোক- মরক্কোর জালে কেউ বল ঠেলে দিতে পারেনি। স্পেনকে ১২০ মিনিট ঠেকিয়ে রাখার পাশাপাশি টাইব্রেকারে প্রতিটা শটই ঠেকিয়ে দিয়েছেন মরক্কো গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো। এমনকি কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালের বিপক্ষে নিজেদের জাল অক্ষত রাখল তারা। যে পর্তুগাল দ্বিতীয় রাউন্ডে সুইজারল্যান্ডের জালে ৬বার বল পাঠিয়েছিল, তারা মরক্কোর জাল কোনোভাবেই খুঁজে পেল না।

 

বারবার রোনাল্ডো, র‌্যামোস, ব্রুনোরা থমকে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন ইয়াসিন বোনোর সামনে গিয়ে। যে কারণে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়ে বিশ্বকাপ থেকে খালিহাতে বিদায় নিতে হল পর্তুগীজদের। চলতি বিশ্বকাপে মরক্কোর শক্তিশালী রক্ষণ ভেদ করে কেউই জালের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। এখন দেখার এমবাপ্পে, ডেম্বেলেরা কি মরক্কোর অভেদ্য রক্ষণ দূর্গের শেষ প্রহরী আশরাফ হাকিমিকে পরাস্ত করতে পারেন কিনা? নাকি আর এক দফা বিস্ময় ঘটিয়ে বাকিদের মতো ফ্রান্সকেও গুঁড়িয়ে দিয়ে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেন মরক্কোর ফুটবলাররা।