১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৬ ডিসেম্বর সিএএ-বিরোধী মামলাগুলির শুনানি করবে সুপ্রিম কোর্ট

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২২, সোমবার
  • / 9

পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ-র সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০০-রও বেশি আবেদনের শুনানি সোমবার স্থগিত করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভাট এবং বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর বেঞ্চ।

 

এই মামলাগুলির পরবর্তী শুনানি করবে সুপ্রম কোর্ট আগামী ৬ ডিসেম্বর। বেঞ্চ অসম এবং ত্রিপুরা সরকারকে এই মামলায় তাদের জবাব হলফনামা মারফত আদালতে জমা দিতে বলেছে দু’সপ্তাহের মধ্যে। রবিবার রাতে কেন্দ্রীয় সরকার এই মামলায় তাদের হলফনামা পেশ করেছে। এই হলফনামা পেশ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে। এ দিন সুপ্রিম কোর্ট দু’জন আইনীজীবীকে এই মামলায় ‘নোডাল অফিসার’ নিযুক্ত করেছে এই মামলাগুলি সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করে আদালতের সামনে পেশ করতে। এই দু’জন নোডাল অফিসার হলেন ইন্ডিয়ান মুসলিম লিগের আইনজীবী পল্লবী প্রতাপ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী কানু আগরওয়াল।

 

প্রসঙ্গত, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ সংসদে পাস হয়েছিল ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর। এই আইন পাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে সিএএ-র বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি সিএএকে কার্যকর করা হয়। ২০০-র বেশি মামলাকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র, কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ, অল ইন্ডিয়া মজলিশ-এ-ইস্তেহাদুল মুসলেমুন নেতা আসাউদ্দিন ওয়েসি, কংগ্রেস নেতা দেবব্রত সাইকিয়া, এনজিও রিহাই মঞ্চ, সিটিজেনস এগেইস্ট হেইট, অসম অ্যাডভোকেটস অ্যাসোসিয়েশন প্রমুখ।

২০২০ সালে কেরল সরকারও সিএএ’র বিরুদ্ধে মামলা করে সুপ্রিম কোর্টে। এভাবে কেরল প্রথম রাজ্য হিসেবে এই মামলায় বাদী পক্ষ হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্ট সিএএ মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত কোনও অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিতে অস্বীকার করে।

আইনটির উপর কোনও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশও জারি করা হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার গত রবিবার তাদের জবাব হলফনামার আকারে পেশ করে আদালতে। তাতে তারা বলে, এই আইন একটি নিরীহ আইন। এর ফলে কারওর অনিষ্ট হবে না। এর ফলে ভারতীয় নাগরিকদের আইনি, গণতান্ত্রিক এবং ধর্ম নিরপেক্ষ অধিকার ‘র্ব হবে না।

সিএএ কোনও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে না, এমন কী সাংবিধানিক নৈতিকতাও এই আইনের ফলে প্রভাবিত হচ্ছে না। দু’শত বেশির আর্জির মধ্যে আদালত মূল আবেদন হিসেবে বেছে নিয়েছে ইন্ডিয়ান মুসলিম লিগের আর্জিটি। সিএএ বিরোধী আর্জিগুলির মূল বক্তব্য হল এই আইন পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে অমুসলিম অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলে। এই আইনে মুসলিমদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। কারণ ধর্মের ভিত্তিতে সিএএতে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে যা অসাংবিধানিক। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএকে অন্যান্য কারণেও চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে, যেমন নাগরিকত্ব আইনে এই সংশোধনের ফলে আহত হয়েছে ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শ। সিএএ সংবিধানের ২১ (জীবনের অধিকার) ১৫ (ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য না করা) এবং ১৯নং ধারার (স্বাধীনতার অধিকার) পরিপন্থী। তাছাড়া এই আইন নাগরিকত্বের বিধি এবং সাংবিধানিক নৈতিকতার বিরোধিতা করছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ তাঁর আর্জিতে বলেছেন, এই আইন সংবিধানের মৌলিক অধিকার যেমন আইনের চোখে সবাই সমান, এই আপ্ত বাক্যের সরাসরি বিরোধিতা করছে।

প্রসঙ্গত, আইনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে আগত অবৈধ অনুপ্রবেশকারী যদি হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের হয় এবং তারা যদি ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর অথবা তার আগে ভারতে প্রবেশ করে থাকে তাহলে তাকে কিংবা তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

উত্তর-পূর্বের কিছু এলাকা আইনের পরিধি থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। তেমনি অনুপ্রবেশকারী এবং শরণার্থীর তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়কে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

৬ ডিসেম্বর সিএএ-বিরোধী মামলাগুলির শুনানি করবে সুপ্রিম কোর্ট

আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২২, সোমবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ-র সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০০-রও বেশি আবেদনের শুনানি সোমবার স্থগিত করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভাট এবং বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর বেঞ্চ।

 

এই মামলাগুলির পরবর্তী শুনানি করবে সুপ্রম কোর্ট আগামী ৬ ডিসেম্বর। বেঞ্চ অসম এবং ত্রিপুরা সরকারকে এই মামলায় তাদের জবাব হলফনামা মারফত আদালতে জমা দিতে বলেছে দু’সপ্তাহের মধ্যে। রবিবার রাতে কেন্দ্রীয় সরকার এই মামলায় তাদের হলফনামা পেশ করেছে। এই হলফনামা পেশ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে। এ দিন সুপ্রিম কোর্ট দু’জন আইনীজীবীকে এই মামলায় ‘নোডাল অফিসার’ নিযুক্ত করেছে এই মামলাগুলি সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করে আদালতের সামনে পেশ করতে। এই দু’জন নোডাল অফিসার হলেন ইন্ডিয়ান মুসলিম লিগের আইনজীবী পল্লবী প্রতাপ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী কানু আগরওয়াল।

 

প্রসঙ্গত, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ সংসদে পাস হয়েছিল ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর। এই আইন পাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে সিএএ-র বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি সিএএকে কার্যকর করা হয়। ২০০-র বেশি মামলাকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র, কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ, অল ইন্ডিয়া মজলিশ-এ-ইস্তেহাদুল মুসলেমুন নেতা আসাউদ্দিন ওয়েসি, কংগ্রেস নেতা দেবব্রত সাইকিয়া, এনজিও রিহাই মঞ্চ, সিটিজেনস এগেইস্ট হেইট, অসম অ্যাডভোকেটস অ্যাসোসিয়েশন প্রমুখ।

২০২০ সালে কেরল সরকারও সিএএ’র বিরুদ্ধে মামলা করে সুপ্রিম কোর্টে। এভাবে কেরল প্রথম রাজ্য হিসেবে এই মামলায় বাদী পক্ষ হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্ট সিএএ মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত কোনও অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিতে অস্বীকার করে।

আইনটির উপর কোনও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশও জারি করা হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার গত রবিবার তাদের জবাব হলফনামার আকারে পেশ করে আদালতে। তাতে তারা বলে, এই আইন একটি নিরীহ আইন। এর ফলে কারওর অনিষ্ট হবে না। এর ফলে ভারতীয় নাগরিকদের আইনি, গণতান্ত্রিক এবং ধর্ম নিরপেক্ষ অধিকার ‘র্ব হবে না।

সিএএ কোনও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে না, এমন কী সাংবিধানিক নৈতিকতাও এই আইনের ফলে প্রভাবিত হচ্ছে না। দু’শত বেশির আর্জির মধ্যে আদালত মূল আবেদন হিসেবে বেছে নিয়েছে ইন্ডিয়ান মুসলিম লিগের আর্জিটি। সিএএ বিরোধী আর্জিগুলির মূল বক্তব্য হল এই আইন পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে অমুসলিম অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলে। এই আইনে মুসলিমদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। কারণ ধর্মের ভিত্তিতে সিএএতে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে যা অসাংবিধানিক। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএকে অন্যান্য কারণেও চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে, যেমন নাগরিকত্ব আইনে এই সংশোধনের ফলে আহত হয়েছে ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শ। সিএএ সংবিধানের ২১ (জীবনের অধিকার) ১৫ (ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য না করা) এবং ১৯নং ধারার (স্বাধীনতার অধিকার) পরিপন্থী। তাছাড়া এই আইন নাগরিকত্বের বিধি এবং সাংবিধানিক নৈতিকতার বিরোধিতা করছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ তাঁর আর্জিতে বলেছেন, এই আইন সংবিধানের মৌলিক অধিকার যেমন আইনের চোখে সবাই সমান, এই আপ্ত বাক্যের সরাসরি বিরোধিতা করছে।

প্রসঙ্গত, আইনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে আগত অবৈধ অনুপ্রবেশকারী যদি হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের হয় এবং তারা যদি ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর অথবা তার আগে ভারতে প্রবেশ করে থাকে তাহলে তাকে কিংবা তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

উত্তর-পূর্বের কিছু এলাকা আইনের পরিধি থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। তেমনি অনুপ্রবেশকারী এবং শরণার্থীর তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়কে।