একটা গর্জন হল, ভেঙে পড়ল ঘরের ছাদ…

- আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, শুক্রবার
- / 14
পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের রাজধানী শারানে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাঁদছিলেন বিবি হাওয়া। ভূমিকম্পে পরিবারের ১২ সদস্যকে হারিয়েছেন তিনি। ডুকরে কেঁদে বলে উঠলেন, ‘আমি কোথায় যাব? আমি কোথায় যাব?’ হাসপাতালের একজন সেবিকা বিবি হাওয়াকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমার মন ভেঙে গেছে।
’ ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের চিত্র এখন এমনই। হাসপাতালের যে ঘরটিতে বিবি হাওয়াকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল, তার আশপাশের বিছানায় আরও অনেক নারীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। তাঁদের মধ্যে একজন শাহমিরা। ভূমিকম্পে খুব বেশি আহত হননি তিনি। তার এক বছরের নাতি কোলে শুয়েছিল। ভূমিকম্পে আহত হওয়ায় তার কপালে বড় ব্যান্ডেজ বাঁধা।
শাহমিরার পাশের বিছানায় ঘুমিয়ে আছে তার আরেক নাতনি। তিনিও ভূমিকম্পে আহত। আরেক ছেলেকে আলাদা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শাহমিরা জানাচ্ছেন, ভূমিকম্পের বিকট শধের সময় আমরা সবাই ঘুমিয়েছিলাম। ভূমিকম্পের শব্দ শুনে আমি চিৎকার করে উঠি। ভেবেছিলাম, আমার পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। আমিই হয়তো একমাত্র বেঁচে আছি।
হাসপাতালটির পাশের ওয়ার্ডে পুরুষদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। সেখানে এক বাবা তার ছেলেকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন। ছেলেটির পায়ে প্লাস্টার করা। কাছেই নীল কম্বলের নিচে শুয়েছিল আরেকটি শিশু। তার কপালে সাদা ব্যান্ডেজ বাঁধা। সেখানে কালো কালি দিয়ে লেখা ‘জরুরি’। এক হাত ভাঙা। ভূমিকম্পের সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে ২২ বছরের আরাপ খান বলেন, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ।
সব জায়গায় চিৎকার আর কান্নার শব্দ।’ সারান হাসপাতালের পরিচালক মুহাম্মদ ইয়াহিয়া উইয়ার বলেন, ভূমিকম্পে হতাহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যখন হতাহত ব্যক্তিরা এসে পৌঁছাল, তখন চারপাশে কেবল কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। হাসপাতালের পরিচালক ইয়াহিয়া আরও বলেন, স্থানীয় লোকজন সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। হাসপাতালের সামনে শতাধিক মানুষ রক্ত দেওয়ার জন্য লাইনে অপেক্ষা করছেন। তালিবান সরকারের এক সদস্য বলেন, প্রায় ৩০০ জন সকাল থেকে রক্ত দিয়েছেন।
ভূমিকম্প থেকে বেঁচে ফেরা আরেকজন হাসপাতালে শুয়ে জানাচ্ছেন, একটা গর্জনের মতো আওয়াজ হল এবং আমার বিছানা ঝাঁকি দিতে থাকল। ঘরের ছাদ ভেঙ্গে পড়ল। আমি আটকা পড়ে গেলাম। কিন্তু আমি আকাশ দেখতে পাচ্ছিলাম। তিনি আরও বলেন, আমার ঘাড়ের কাছে হাড় সরে গেছে, আমার মাথায় আঘাত লেগেছে। কিন্তু আমি বের হয়ে আসতে পারি। আমি নিশ্চিত, আমার পরিবারের সাত থেকে নয়জন যারা আমরা একই ছাদের নিচে ঘুমাচ্ছিলাম তারা মারা গেছেন।