‘ভারতের তো অনেক টাকা। তারা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ কর আদায়কারী দেশ। আমরা কেন ভারতকে এত টাকা দিতে যাব? ওরা তো আমাদের থেকে অনেক টাকা কর নেয়।’—ভারতের ভোটারদের বুথমুখী করতে ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলার (১৮২ কোটি) অনুদান দিত আমেরিকা প্রশাসন। সেই অনুদান বাতিলের সিদ্ধান্ত শোনালেন ট্রাম্প। দিন পাঁচেক হল বন্ধু-দেশ থেকে ফিরে এসেছেন আপন দেশে। দেশে ফিরতে না ফিরতেই অনুদান বাতিলের খবর এলো বন্ধুবর ট্রাম্পের দেশ থেকে।
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর অনুদানে কোপ পড়েছে। ইলন মাস্কের ভারতের ভোটারদের টার্নআউট বাড়াতে ২১ মিলিয়ন ডলারের সহায্য বাতিল করার সিদ্ধান্তে এবার সমর্থন জানিয়ে মুখ খুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইলন মাস্কের নেতৃত্বে গঠিত ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ সম্প্রতি ভারতকে দেওয়া এই অনুদান বাতিল করেছে। ট্রাম্পের মতে, ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থার পাশাপাশি শুল্ক হারও এত বেশি যে, এই ধরনের সাহায্য করার প্রয়োজন ছিল না। আমরা কেন ভারতকে এত টাকা দিতে যাব? আমেরিকান করদাতাদের অর্থ এই উদ্দেশ্যে কেন বরাদ্দ করব?
ভারত এবং তাদের প্রধানমন্ত্রীকে আমি যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তাই বলে ভারতের ভোটের হার বাড়ানোর জন্য ২ কোটি ১০ লক্ষ ডলার কেন? অনুদান বাতিলের নথিতে স্বাক্ষরের পর এই মন্তব্য করেন ট্রাম্প। ১৩ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রী মোদি ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পারস্পরিক শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন। ট্রাম্পের দাবি, অতিরিক্ত ভারতীয় শুল্কের কারণে আমেরিকা সেখানে ব্যবসা করতে পারে না। তাহলে কেন এতগুলো টাকা ওদের দেব? এখন থেকে সেই অনুদান বন্ধ করা হবে। এবার মাস্কের সেই সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দিলেন ট্রাম্প। মঙ্গলবারই অনুদান বাতিলের নির্দেশে স্বাক্ষর করেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
গত রবিবার ভারতকে এই অনুদান বন্ধের কথা ঘোষণা করেছিল মাস্কের দফতর। শুধু ভারত নয়, সারাবিশ্বে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বাতিল করা হচ্ছে। যেগুলি বাড়তি মনে হয়েছে, সেগুলি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোপ পড়েছে মোট ৭২ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার অনুদানে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন খাতে ২ কোটি ৯০ লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুoায় ২৫১ কোটি টাকারও বেশি) অনুদান দিত আমেরিকা। তা-ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ভারতে ভোটের হার বৃদ্ধির জন্য বিপুল পরিমাণ মার্কিন অনুদানের কথা জানাজানি হতেই বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। দেশে শাসক-বিরোধী কোমর বেঁধেছে। বিজেপি মুখপাত্র অমিত মালব্য এই অনুদানকে ভোট প্রক্রিয়ায় বহিরাগত হস্তক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, বিভিন্ন বিদেশি এনজিও-র থেকে টাকা নেওয়ায় জড়িত। তবে শাসকদলের অভিযোগ নস্যাৎ করে কংগ্রেস বিজেপির ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল দাবি করেছেন, কাকে কাকে আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে মার্কিন প্রশাসন তা নয়াদিল্লিকে জানাক।
যদিও মাস্কের অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছে ভারতের প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসওয়াই কুরেইশি। কুরেইশি জানান, ‘২০১০-১২ সালে আমি যখন নির্বাচন কমিশনের প্রধান ছিলাম তখন ভারতে ভোটারদের আরও বেশি করে বুথমুখী করতে অর্থ দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে তার কোনও সত্যতা নেই। কোনও টাকা-পয়সার লেনদেন হয়নি। তবে তিনি জানান, অন্যান্য অনেক সংস্থার মতো প্রশিক্ষণ সুবিধার জন্য ২০১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্টোরাল সিস্টেমের সঙ্গে মউ চুক্তি হয়েছিল। তবে তাতে কোনও টাকা-পয়সা লেনদেনের কথা উল্লেখ ছিল না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও প্রশ্ন তুলেছে মোদি-১, ২ ও ৩ সরকার গঠনেও কি তাহলে বহিরাগত হস্তক্ষেপ হয়েছে।