২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

 দলিত-নিগ্রহে শীর্ষে দুই বিজেপি-শাসিত রাজ্য, শূন্যে বাংলা

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার
  • / 8

REPRESENTATIVE IMAGE

বিশেষ প্রতিবেদনঃ তপশিলি জাতি ও দলিতদের উপর অত্যাচারের নিরিখে উত্তরপ্রদেশ আবার দেশের মধ্যে রেকর্ড স্থান দখল করেছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি সোমবার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া ২০২১’ শিরোনামে। এই সংস্থাটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন। এই রিপোর্টের দিকে যদি একটু গভীর মনোযোগ দেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে দলিত-অবদমনের আরও ভয়াবহ প্রবণতা রয়েছে।

 

এই দুই রাজ্যে গত বছর দলিতদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের চেয়েও বেশি এবং জাতীয় গড়ের দ্বিগুণ। ২০১৬-২০২০ সাল পর্যন্ত দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধের গড় হারের তুল্যমূল্য বিচার করার ২০২১সালের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, তপশিলি জাতির বিরুদ্ধে অপরাধের মাত্রা ও হার মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

এনসিআরবি শুধু সেই ঘটনাগুলিকেই নথিভুক্ত করেছে যেগুলি তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি (প্রিভেনশন অফ অ্যাট্রোসিটিজ) আইন, ১৯৮৯-এর আওতায় ফাইল করা হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) অধীনে যে মামলাগুলি দায়ের করা হয়েছে সেগুলি গণনা করা হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই মামলাগুলিতে তপশিলিরাই তপশিলিদের বিরুদ্ধে অপরাধ ঘটিয়েছে।

 

নতুন এনসিআরবি রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০২১ সালে প্রতি ঘন্টায় ছয়টি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে দলিতদের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালে এই অপরাধের সংখ্যা ছিল ৫০,২৯১টি এবং ২০২১ সালে এর সংখ্যা ৫০,৯০০টি। তবে, সন্দেহাতীত ভাবে উত্তরপ্রদেশে দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (১৩,১৪৬টি) যা ২০২১ সালের মোট দলিত-বিরোধী অপরাধের প্রায় সিকি শতাংশ। যোগীরাজ্যের পরেই রয়েছে রাজস্থান (৭,৫২৪), মধ্যপ্রদেশ (৭,২১৪), বিহার (৫,৮৪২)। এই রাজ্যগুলির মধ্যে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে ২০২০ সালের চেয়ে বেশি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, কিন্তু বিহারে এর হার হ্রাস পেয়েছে।

 

পরিসংখ্যানের চাইতে অপরাধের হারের দিকে তাকালে চিত্রটা আরও যথাযথ ভাবে পাওয়া যেতে পারে। উত্তরপ্রদেশে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দলিতরা বাস করে। ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী এই রাজ্যে দলিতদের সংখ্যা ৪ কোটিরও বেশি (এই সংখ্যা ধরেই এনসিআরবি অপরাধের হার বিচার করেছে)। গত বছর ইউপিতে অপরাধের হার ছিল ৩১.৮ অর্থাৎ প্রতি ১লাখ দলিতে প্রায় ৩১টি বর্ণভিত্তিক অপরাধ ঘটেছে ২০২১ সালে। যদিও মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের চেয়ে এই সংখ্যাটা অনেকটা কম।

 

এই দুই রাজ্যে দলিত-বিরোধী অপরাধের হার যথাক্রমে ৬৩.৬ ও ৬১.৬ শতাংশ। উভয় রাজ্যেই দলিত জনসংখ্যা ১ কোটির বেশি। এমনটাই জানিয়েছে ২০১১সালের আদমসুমারি। এই পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ্য, তপশিলি জাতির বিরুদ্ধে জাতীয় গড় অপরাধের হার এই জনগোষ্ঠীর প্রতি ১মানুষে ২৫টি। আরও বেশ কয়েকটি রাজ্য রয়েছে যেখানে এই ধরনের অপরাধের হার জাতীয় গড়ের চাইতে বেশি। এগুলি হল বিহার (৩৫.৫), তেলেঙ্গানা (৩২.৬), ওড়িশা (৩২.৪), হরিয়ানা (৩১.৮), কেরালা (৩১.১) ও গুজরাত (২৯.৫)। এই প্রসঙ্গে স্মর্তব্য যে, দেশের মধ্যে দলিত জনসংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ (২.১ কোটি প্রায়)। তবে, এই রাজ্যে দলিতবিরোধী অপরাধ ভীষণ মাত্রায় কম। ১ লাখ জনসংখ্যায় মাত্র ০.৫ শতাংশ। তামিলনাড়ুতে রয়েছে ১.৪ কোটি দলিত অধিবাসী। এখানেও তপশিলি জাতির বিরুদ্ধে অপরাধ অপেক্ষাকৃত কম (৯.৫ শতাংশ)। পঞ্জাবে প্রতি তিনজনে একজন তপশিলি জাতিভুক্ত। এখানেও দলিতবিরোধী অপরাধ কম। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, এই রাজ্যে প্রতি ১ লাখ মানুষে ২ জন এমন অপরাধের শিকার হয়েছেন। ২০২১ সালের আগের পাঁচ বছরে রাজস্থানে দলিতবিরোধী অপরাধ যে হারে হয়েছে তা নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে গত বছর। গত পাঁচ বছরে এই রাজ্যে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যা গড়ে ৪৫টি এমন অপরাধ ঘটেছে। ২০২১ সালে তা লাফিয়ে পৌঁছেছে ৬১-তে এবং প্রতি ১ লক্ষ দলিতে অতিরিক্ত অপরাধ ঘটেছে ১৬টি। একই ভাবে, মধ্যপ্রদেশে দলিতদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অপরাধ ঘটেছে ১৫টি। তবে, হরিয়ানায় এই রকম অপরাধের সবচেয়ে বেশি বাড়বৃদ্ধি হয়েছে। তপশিলি জনসংখ্যার প্রতি ১ লাখে অপরাধ বেড়েছে ১৩টিরও বেশি। বিহার বা গুজরাতের মতো রাজ্যে বর্ণভিত্তিক অপরাধের রমরমা। তবে, এখানে সামান্য হলেও দলিতবিরোধী অত্যাচার হ্রাস পেয়েছে। প্রতি এক লাখে প্রায় ৫টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এই রাজ্যগুলিতে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের চিত্রটি এমন হওয়ার অন্যতম কারণ হল, ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক পরিবর্তনের অভাব। আরও একটি দিক হল, বর্ণভিত্তিক অপরাধ ও বৈষম্যের মুখে দাঁড়িয়ে মানুষ এখন বেশি পরিমাণে মুখ খুলছে এবং পুলিশের কাছে যাচ্ছে আর তাই সেগুলি নথিভুক্ত হচ্ছে এবং সর্বসমক্ষে আসছে। সোনিপাতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্ষিভরাজ জাঙ্গিদ বলেন,’’রাজস্থানের অধিকাংশ কর্মসংস্থান পর্যটনভিত্তিক এবং পরম্পরাবাহী পেশাগুলি সামাজিক সমীকরণে আজও প্রভাব বিস্তার করে। এই রাজ্যে মেট্রোপলিটান এলাকার অভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে যাতায়াতের খরচ অনেক বেশি হওয়ায় অর্থনৈতিক গতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। মানুষ তাদের বিচ্ছিন্ন পরম্পরার ছক থেকে বেরিয়ে আসতে চান না বললেই চলে। এ থেকেই খানিকটা বোঝা যায়, এই জনগোষ্ঠীগুলি কেন প্রকৃতিগত ভাবে অপেক্ষাকৃত বর্ণবাদী।’’

 

ভানওয়ার মেঘাংশী একজন দলিত সমাজকর্মী এবং ‘আই কুড নট বি হিন্দু : দ্য স্টোরি অফ আ দলিত ইন দ্য আরএসএস’ বইয়ের প্রণেতা। তিনি বলেন, রাজস্থানের মারওয়ার এলাকা ও মধ্যপ্রদেশের মালওয়া এলাকায় একই ধরনের সাংস্কৃতিক যাপন রয়েছে। তাই, তালিকায় মধ্যপ্রদেশ শীর্ষভাগে উঠে আসছে, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তাহলে এই দুই রাজ্যে  বর্ণবাদী দ্বন্দ্বকে কেন প্রকট করে দেখানো হচ্ছে পরিসংখ্যানে? এর উত্তরে মেঘাংশী বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধি  পাচ্ছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এসে যাওয়ায় তরুণরা এই ধরনের অনাচারের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে ও আইনি সহায়তা নিতে পুলিশ ও আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে।

 

তিনি আরও বলেন,‘‘রাজস্থানে গত কয়েক বছরে দলিতদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের চেহারা বিকট আকার ধারণ করেছে। তবে, নতুন প্রজন্মের যুবকরা এই ধরনের অপমানকে আর হালকা ভাবে নিতে রাজি নয়। এখন আমাদের কাছে ফোন আছে, ভিডিয়ো দ্রুত ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসন এই মামলাগুলিকে আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বর্তমানে অপরাধের একটা ভিডিয়োই যথেষ্ট পুলিশের কাছে পৌঁছে যাওয়ার জন্য এবং চটজলদি মামলা দায়ের করা যাচ্ছে। একটা এফআইআর দায়ের করতে ৫ হাজার মানুষকে জড়ো করে থানায় হাজির হওয়ার দরকার নেই আর।’’

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

 দলিত-নিগ্রহে শীর্ষে দুই বিজেপি-শাসিত রাজ্য, শূন্যে বাংলা

আপডেট : ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার

বিশেষ প্রতিবেদনঃ তপশিলি জাতি ও দলিতদের উপর অত্যাচারের নিরিখে উত্তরপ্রদেশ আবার দেশের মধ্যে রেকর্ড স্থান দখল করেছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি সোমবার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া ২০২১’ শিরোনামে। এই সংস্থাটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন। এই রিপোর্টের দিকে যদি একটু গভীর মনোযোগ দেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে দলিত-অবদমনের আরও ভয়াবহ প্রবণতা রয়েছে।

 

এই দুই রাজ্যে গত বছর দলিতদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের চেয়েও বেশি এবং জাতীয় গড়ের দ্বিগুণ। ২০১৬-২০২০ সাল পর্যন্ত দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধের গড় হারের তুল্যমূল্য বিচার করার ২০২১সালের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, তপশিলি জাতির বিরুদ্ধে অপরাধের মাত্রা ও হার মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

এনসিআরবি শুধু সেই ঘটনাগুলিকেই নথিভুক্ত করেছে যেগুলি তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি (প্রিভেনশন অফ অ্যাট্রোসিটিজ) আইন, ১৯৮৯-এর আওতায় ফাইল করা হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) অধীনে যে মামলাগুলি দায়ের করা হয়েছে সেগুলি গণনা করা হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই মামলাগুলিতে তপশিলিরাই তপশিলিদের বিরুদ্ধে অপরাধ ঘটিয়েছে।

 

নতুন এনসিআরবি রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০২১ সালে প্রতি ঘন্টায় ছয়টি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে দলিতদের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালে এই অপরাধের সংখ্যা ছিল ৫০,২৯১টি এবং ২০২১ সালে এর সংখ্যা ৫০,৯০০টি। তবে, সন্দেহাতীত ভাবে উত্তরপ্রদেশে দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (১৩,১৪৬টি) যা ২০২১ সালের মোট দলিত-বিরোধী অপরাধের প্রায় সিকি শতাংশ। যোগীরাজ্যের পরেই রয়েছে রাজস্থান (৭,৫২৪), মধ্যপ্রদেশ (৭,২১৪), বিহার (৫,৮৪২)। এই রাজ্যগুলির মধ্যে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে ২০২০ সালের চেয়ে বেশি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, কিন্তু বিহারে এর হার হ্রাস পেয়েছে।

 

পরিসংখ্যানের চাইতে অপরাধের হারের দিকে তাকালে চিত্রটা আরও যথাযথ ভাবে পাওয়া যেতে পারে। উত্তরপ্রদেশে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দলিতরা বাস করে। ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী এই রাজ্যে দলিতদের সংখ্যা ৪ কোটিরও বেশি (এই সংখ্যা ধরেই এনসিআরবি অপরাধের হার বিচার করেছে)। গত বছর ইউপিতে অপরাধের হার ছিল ৩১.৮ অর্থাৎ প্রতি ১লাখ দলিতে প্রায় ৩১টি বর্ণভিত্তিক অপরাধ ঘটেছে ২০২১ সালে। যদিও মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের চেয়ে এই সংখ্যাটা অনেকটা কম।

 

এই দুই রাজ্যে দলিত-বিরোধী অপরাধের হার যথাক্রমে ৬৩.৬ ও ৬১.৬ শতাংশ। উভয় রাজ্যেই দলিত জনসংখ্যা ১ কোটির বেশি। এমনটাই জানিয়েছে ২০১১সালের আদমসুমারি। এই পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ্য, তপশিলি জাতির বিরুদ্ধে জাতীয় গড় অপরাধের হার এই জনগোষ্ঠীর প্রতি ১মানুষে ২৫টি। আরও বেশ কয়েকটি রাজ্য রয়েছে যেখানে এই ধরনের অপরাধের হার জাতীয় গড়ের চাইতে বেশি। এগুলি হল বিহার (৩৫.৫), তেলেঙ্গানা (৩২.৬), ওড়িশা (৩২.৪), হরিয়ানা (৩১.৮), কেরালা (৩১.১) ও গুজরাত (২৯.৫)। এই প্রসঙ্গে স্মর্তব্য যে, দেশের মধ্যে দলিত জনসংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ (২.১ কোটি প্রায়)। তবে, এই রাজ্যে দলিতবিরোধী অপরাধ ভীষণ মাত্রায় কম। ১ লাখ জনসংখ্যায় মাত্র ০.৫ শতাংশ। তামিলনাড়ুতে রয়েছে ১.৪ কোটি দলিত অধিবাসী। এখানেও তপশিলি জাতির বিরুদ্ধে অপরাধ অপেক্ষাকৃত কম (৯.৫ শতাংশ)। পঞ্জাবে প্রতি তিনজনে একজন তপশিলি জাতিভুক্ত। এখানেও দলিতবিরোধী অপরাধ কম। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, এই রাজ্যে প্রতি ১ লাখ মানুষে ২ জন এমন অপরাধের শিকার হয়েছেন। ২০২১ সালের আগের পাঁচ বছরে রাজস্থানে দলিতবিরোধী অপরাধ যে হারে হয়েছে তা নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে গত বছর। গত পাঁচ বছরে এই রাজ্যে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যা গড়ে ৪৫টি এমন অপরাধ ঘটেছে। ২০২১ সালে তা লাফিয়ে পৌঁছেছে ৬১-তে এবং প্রতি ১ লক্ষ দলিতে অতিরিক্ত অপরাধ ঘটেছে ১৬টি। একই ভাবে, মধ্যপ্রদেশে দলিতদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অপরাধ ঘটেছে ১৫টি। তবে, হরিয়ানায় এই রকম অপরাধের সবচেয়ে বেশি বাড়বৃদ্ধি হয়েছে। তপশিলি জনসংখ্যার প্রতি ১ লাখে অপরাধ বেড়েছে ১৩টিরও বেশি। বিহার বা গুজরাতের মতো রাজ্যে বর্ণভিত্তিক অপরাধের রমরমা। তবে, এখানে সামান্য হলেও দলিতবিরোধী অত্যাচার হ্রাস পেয়েছে। প্রতি এক লাখে প্রায় ৫টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এই রাজ্যগুলিতে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের চিত্রটি এমন হওয়ার অন্যতম কারণ হল, ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক পরিবর্তনের অভাব। আরও একটি দিক হল, বর্ণভিত্তিক অপরাধ ও বৈষম্যের মুখে দাঁড়িয়ে মানুষ এখন বেশি পরিমাণে মুখ খুলছে এবং পুলিশের কাছে যাচ্ছে আর তাই সেগুলি নথিভুক্ত হচ্ছে এবং সর্বসমক্ষে আসছে। সোনিপাতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্ষিভরাজ জাঙ্গিদ বলেন,’’রাজস্থানের অধিকাংশ কর্মসংস্থান পর্যটনভিত্তিক এবং পরম্পরাবাহী পেশাগুলি সামাজিক সমীকরণে আজও প্রভাব বিস্তার করে। এই রাজ্যে মেট্রোপলিটান এলাকার অভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে যাতায়াতের খরচ অনেক বেশি হওয়ায় অর্থনৈতিক গতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। মানুষ তাদের বিচ্ছিন্ন পরম্পরার ছক থেকে বেরিয়ে আসতে চান না বললেই চলে। এ থেকেই খানিকটা বোঝা যায়, এই জনগোষ্ঠীগুলি কেন প্রকৃতিগত ভাবে অপেক্ষাকৃত বর্ণবাদী।’’

 

ভানওয়ার মেঘাংশী একজন দলিত সমাজকর্মী এবং ‘আই কুড নট বি হিন্দু : দ্য স্টোরি অফ আ দলিত ইন দ্য আরএসএস’ বইয়ের প্রণেতা। তিনি বলেন, রাজস্থানের মারওয়ার এলাকা ও মধ্যপ্রদেশের মালওয়া এলাকায় একই ধরনের সাংস্কৃতিক যাপন রয়েছে। তাই, তালিকায় মধ্যপ্রদেশ শীর্ষভাগে উঠে আসছে, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তাহলে এই দুই রাজ্যে  বর্ণবাদী দ্বন্দ্বকে কেন প্রকট করে দেখানো হচ্ছে পরিসংখ্যানে? এর উত্তরে মেঘাংশী বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধি  পাচ্ছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এসে যাওয়ায় তরুণরা এই ধরনের অনাচারের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে ও আইনি সহায়তা নিতে পুলিশ ও আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে।

 

তিনি আরও বলেন,‘‘রাজস্থানে গত কয়েক বছরে দলিতদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের চেহারা বিকট আকার ধারণ করেছে। তবে, নতুন প্রজন্মের যুবকরা এই ধরনের অপমানকে আর হালকা ভাবে নিতে রাজি নয়। এখন আমাদের কাছে ফোন আছে, ভিডিয়ো দ্রুত ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসন এই মামলাগুলিকে আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বর্তমানে অপরাধের একটা ভিডিয়োই যথেষ্ট পুলিশের কাছে পৌঁছে যাওয়ার জন্য এবং চটজলদি মামলা দায়ের করা যাচ্ছে। একটা এফআইআর দায়ের করতে ৫ হাজার মানুষকে জড়ো করে থানায় হাজির হওয়ার দরকার নেই আর।’’