কাশ্মীরের ফল বিক্রেতার ছেলে উমরান এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম
- আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২২, শনিবার
- / 9
পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ কাশ্মীরি ক্রিকেটার উমরান মালিক। গত বছর আইপিএল থেকেই তিনি তাঁর জোরে বোলিংয়ের জন্য সকলের নজর কাড়তে শুরু করেছিলেন। গতবার করোনার কারণে নটরাজন দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সানরাইজার্সের হয়ে পুরো সময়ের জন্য আত্মপ্রকাশ ঘটে উমরান মালিকের। প্রথম ম্যাচেই ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগে বল করে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন কাশ্মীরের এই জোরে বোলারটি। কিন্তু গতবার যিনি নেট বোলার থেকে পরিবর্তিত বোলার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদে, এবার সেই উমরান মালিক চলতি আইপিএলের সবচেয়ে আলোচিত নাম। ১৫৪ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিবেগে বল করে চমক দিয়েছেন উমরান। শুধু তাই নয়, গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে উমরান বল হাতে আগুন জ্বালিয়েছেন। তাঁর দল সানরাইজার্স হেরে গেলেও উমরান একাই পাঁচটি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন গুজরাতের। বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভারতীয় ক্রিকেটের দিকপালরা। গাভাসকর যেমন তাঁকে ভারতীয় দলে দেখতে চলেছেন, কপিলদেবও তাঁকে ভারতীয় দলের যোগ্য বলে মনে করছেন। আর তাঁকে নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন অধিনায়ক মুহাম্মদ আজহারউদ্দিন। তিনি বলেছেন. ‘পাঁচ উইকেট নিয়ে আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছেন উমরান মালিক, এটি সানরাজিার্সের কাছে খুব ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ তাঁদের দল থেকে এমন একজন ক্রিকেটার ভারতীয় দলের নতুন তারকা হয়ে উঠেছেন, এটা দেখার মতো বিষয়।’ তাঁর বোলিং দেখে মুগ্ধ প্রাক্তন ক্রিকেটার ইরফান পাঠান বলছেন, ‘উমরান তো এখন পেসের মালিক।’ নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন ড্যানিয়েল ভেত্তোরি উমরানকে নিয়ে বলতে গিয়ে জানালেন, ‘এরকম বোলার সবসময়ই ব্যাটসম্যানের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। ব্রেট লি, শোয়েব আখতার, শন টেটের পর এমন বোলার খুব কমই এসেছে বিশ্ব ক্রিকেটে।
কাশ্মীরের গুজ্জার নগরে ১৯৯৯ সালে জন্ম উমরানের। বাবা আবদুল রশিদের ফলের দোকান। মা সামান্য গৃহবধু, দিদি ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে উমরানের সাদামাটা পরিবার। ছোট থেকেই ক্রিকেটের প্রতি উমরানের ছিল দারুণ প্যাসন। বাবা রশিদ তাঁকে সবসময়ই উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন। পাশাপাশি উমরান যাতে লেখাপড়াটাও ঠিকমতো করতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতেন তাঁর পিতা। টেনিস বলে খেলা শুরু করেছিলেন তিনি। কারণ ডিউস বল কেনা তাঁর পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ১৭ বছর বয়সে শ্রীনগরের জম্মু ও কাশ্মীরের স্পোর্টস কাউন্সিলে পেশাদার ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। কেরিয়ারের প্রথম দিকে শুধুই গতিতে নজর দিয়েছিলেন উমরান। কিন্তু তাঁর কোচ রনধীর সিং মিনহাস যাঁকে সবাই ‘রঞ্জন স্যার বলেই জানেন, তাঁর অধীনেই তৈরি হতে থাকেন উমরান। কিন্তু খুব একটা সিরিয়াস ছিলেন না উমরান। ধমকও খান কোচের কাছে।
এরপরই জম্মু ও কাশ্মীরের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ পেলেন উমরান। কিন্তু একটা ম্যাচেও প্রথম একাদশে তাঁকে রাখা হয়নি। যা দেখে তাঁর কোচও খুব হতাশ হয়েছিলেন।
এরপর তিনি নেটে বল করার সময় নজরে পড়েন অসমের কোচ ও প্রাক্তন উইকেট কিপার অজয় রাত্রার চোখে। এরপর ইরফান পাঠান মেন্টর থাকাকালীন উমরান কাশ্মীরের রাজ্য দলে অন্তর্ভূক্ত হলেন। ইরফান ও কোচ মিলাপ মেওয়াদার প্রশিক্ষণে নিজেকে তৈরি করলেন উমরান। এরপর ২০২১ সালে মুস্তাক আলি টি-২০ ট্রফিতে জম্মু ও কাশ্মীরের দলের হয়ে আত্মপ্রকাশ হল রেলওয়েজের বিরুদ্ধে। এর কিছুদিন পরেই বাংলার বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ তাঁর। আর সেখান থেকেই আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি সানরাইজার্স হায়দরাবাদ টিমের নজরে পড়েন তিনি। প্রথমে তাঁকে নেট বোলার হিসেবে নেওয়া হলেও বর্তমানে তিনি দক্ষিণ ভারতের এই ফ্র্যাঞ্চাইজির মূল বোলার। আর মূল বোলার হিসেবে রীতিমতো চমক দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত হরভজন সিংও। তিনি বলছেন, ‘উমরান অসাধারণ, প্রতি ম্যাচে নিজেকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।’ পরিসংখ্যানও বলছে, শুরুতে ওবার প্রতি ১০ রান দিয়ে থাকলেও এবার তিনি মাত্র ২৪ রানে পাঁচটি উইকেট নিয়ে অনেক কিছু বোঝাতে চাইছেন। নিজের ইকোনোমি রেট নামিয়ে এনেছেন ছয় থেকে সাতের মধ্যে।