১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিক্ষকের মারে দলিত কিশোরের মৃত্যু! রণক্ষেত্র উত্তরপ্রদেশের আউরাইয়া জেলা

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার
  • / 11

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ফের অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল উত্তরপ্রদেশ। শিক্ষকের মারে আহত হয়ে টানা ১৪ দিন লড়াই করার পর মৃত্যু হল ১৫ বছরের দলিত কিশোরের। উত্তরপ্রদেশের আউরাইয়া জেলার ঘটনা।

ঘটনার পরেই ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করতে স্কুলে যায় পুলিশ। এদিকে অভিযুক্ত পলাতক শিক্ষক।

 

অভিযুক্ত শিক্ষককে আইপিসি ধারা ৩০৮ (অপরাধমূলক হত্যার চেষ্টা) ৩২৩ (স্বেচ্ছায় আঘাত করা), ৫০৪ (শান্তিভঙ্গের উদ্দেশে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমা) সেই সঙ্গে তফশিলি জাতি ও তফশিলি উপজাতি আইনের অধীণে মামলা করা হয়েছে। এদিকে দলিত বালকের মৃত্যুতে উত্তাল আউরাইয়া জেলা। সোমবার সন্ধ্যা থেকেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে এলাকা। উত্তেজিত মানুষ দুটি পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

 

পুলিশ কিশোরের দেহ হতভাগ্য পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পর থেকেই বিক্ষোভ চরমে ওঠে। মৃত্যুর প্রতিবাদের রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাতে থাকে তারা, স্কুলের সামনে স্লোগান দেয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে বিক্ষুব্ধকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ।

 

ঘটনা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত ডিজি (কানপুর জোন) ভানু ভাস্কর জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বর্ষীয়ান পুলিশ আধিকারিকরা। আপাতত সমস্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শেষকৃত্যের জন্য তারা দেহ গ্রামে নিয়ে গেছে। আউরাইয়া সার্কেল অফিসার মহেন্দ্র প্রতাপ সিং জানিয়েছেন, মৃত কিশোর ঘটনার আগে থেকেই কিডনি সমস্যার ভুগছিলেন। লখনউতে একটি হাসপাতালে চিকিৎসার ভর্তি ছিল।

 

পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৭ সেপ্টেম্বর সামাজিক শিক্ষার পরীক্ষায় খাতায় ভুল উত্তর লিখেছিল ওই কিশোর। এর পরেই অভিযুক্ত শিক্ষক তাকে বেত দিয়ে মারে। মারের চোটে অজ্ঞান হয়ে যায় ছাত্র।

 

এর পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর দলিত ছাত্রের বাবা তার নামে অভিযোগ দায়ের করে। ছাত্রের বাবা অভিযোগে জানিয়েছিলেন, প্রশ্নপত্রে তার ছেলে একটি উত্তর ভুল লিখেছিল। তার জন্য শিক্ষক তাকে নির্মমভাবে প্রহার করে। শিক্ষকের মারে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ছেলে।

দলিত কিশোরের বাবার দাবি, ওই শিক্ষক বলেন ছেলের চিকিৎসার সমস্ত খরচ তিনিই নেবেন। কিন্তু শিক্ষক চিকিৎসার জন্য শুধুমাত্র ৪০ হাজার টাকা দেন তাকে। পরে ছেলের চিকিৎসার জন্য শিক্ষকের কাছে টাকার কথা বললে তিনি নীচজাতি বলে গালিগালাজ করেন। দলিত কিশোরের বাবা জানান, তিনি শিক্ষকের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা দুই কিস্তিতে পেয়েছেন। এর পর তিনি ছেলেকে নিয়ে লখনউয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ছেলের অনেক মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছিল, তা সত্ত্বেও তার ছেলে সুস্থ হয়নি। ভুক্তভোগী পরিবারটি পুলিশকে জানিয়েছে, রবিবার রাত থেকেই ছেলের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। সোমবার সকালে মৃত্যু হয় তার।

সাইফাই হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট জানিয়েছেন, বর্তমানে আমি কিশোরে কেস হিস্ট্রি জানি না’। বর্ষীয়ান পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, সমস্ত মেডিক্যাল রিপোর্ট হাসপাতাল ও পরিবারের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

আউরিয়ার পুলিশ সুপার চারু নিগম জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত হয়েছে। তার রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

শিক্ষকের মারে দলিত কিশোরের মৃত্যু! রণক্ষেত্র উত্তরপ্রদেশের আউরাইয়া জেলা

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ফের অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল উত্তরপ্রদেশ। শিক্ষকের মারে আহত হয়ে টানা ১৪ দিন লড়াই করার পর মৃত্যু হল ১৫ বছরের দলিত কিশোরের। উত্তরপ্রদেশের আউরাইয়া জেলার ঘটনা।

ঘটনার পরেই ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করতে স্কুলে যায় পুলিশ। এদিকে অভিযুক্ত পলাতক শিক্ষক।

 

অভিযুক্ত শিক্ষককে আইপিসি ধারা ৩০৮ (অপরাধমূলক হত্যার চেষ্টা) ৩২৩ (স্বেচ্ছায় আঘাত করা), ৫০৪ (শান্তিভঙ্গের উদ্দেশে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমা) সেই সঙ্গে তফশিলি জাতি ও তফশিলি উপজাতি আইনের অধীণে মামলা করা হয়েছে। এদিকে দলিত বালকের মৃত্যুতে উত্তাল আউরাইয়া জেলা। সোমবার সন্ধ্যা থেকেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে এলাকা। উত্তেজিত মানুষ দুটি পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

 

পুলিশ কিশোরের দেহ হতভাগ্য পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পর থেকেই বিক্ষোভ চরমে ওঠে। মৃত্যুর প্রতিবাদের রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাতে থাকে তারা, স্কুলের সামনে স্লোগান দেয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে বিক্ষুব্ধকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ।

 

ঘটনা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত ডিজি (কানপুর জোন) ভানু ভাস্কর জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বর্ষীয়ান পুলিশ আধিকারিকরা। আপাতত সমস্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শেষকৃত্যের জন্য তারা দেহ গ্রামে নিয়ে গেছে। আউরাইয়া সার্কেল অফিসার মহেন্দ্র প্রতাপ সিং জানিয়েছেন, মৃত কিশোর ঘটনার আগে থেকেই কিডনি সমস্যার ভুগছিলেন। লখনউতে একটি হাসপাতালে চিকিৎসার ভর্তি ছিল।

 

পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৭ সেপ্টেম্বর সামাজিক শিক্ষার পরীক্ষায় খাতায় ভুল উত্তর লিখেছিল ওই কিশোর। এর পরেই অভিযুক্ত শিক্ষক তাকে বেত দিয়ে মারে। মারের চোটে অজ্ঞান হয়ে যায় ছাত্র।

 

এর পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর দলিত ছাত্রের বাবা তার নামে অভিযোগ দায়ের করে। ছাত্রের বাবা অভিযোগে জানিয়েছিলেন, প্রশ্নপত্রে তার ছেলে একটি উত্তর ভুল লিখেছিল। তার জন্য শিক্ষক তাকে নির্মমভাবে প্রহার করে। শিক্ষকের মারে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ছেলে।

দলিত কিশোরের বাবার দাবি, ওই শিক্ষক বলেন ছেলের চিকিৎসার সমস্ত খরচ তিনিই নেবেন। কিন্তু শিক্ষক চিকিৎসার জন্য শুধুমাত্র ৪০ হাজার টাকা দেন তাকে। পরে ছেলের চিকিৎসার জন্য শিক্ষকের কাছে টাকার কথা বললে তিনি নীচজাতি বলে গালিগালাজ করেন। দলিত কিশোরের বাবা জানান, তিনি শিক্ষকের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা দুই কিস্তিতে পেয়েছেন। এর পর তিনি ছেলেকে নিয়ে লখনউয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ছেলের অনেক মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছিল, তা সত্ত্বেও তার ছেলে সুস্থ হয়নি। ভুক্তভোগী পরিবারটি পুলিশকে জানিয়েছে, রবিবার রাত থেকেই ছেলের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। সোমবার সকালে মৃত্যু হয় তার।

সাইফাই হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট জানিয়েছেন, বর্তমানে আমি কিশোরে কেস হিস্ট্রি জানি না’। বর্ষীয়ান পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, সমস্ত মেডিক্যাল রিপোর্ট হাসপাতাল ও পরিবারের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

আউরিয়ার পুলিশ সুপার চারু নিগম জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত হয়েছে। তার রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।