১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
BRAKING :
হিজরি নববর্ষ ও মুহাররম মাসের ফজিলত

ইমামা খাতুন
- আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার
- / 4
পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ২০ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে নতুন হিজরি সন ১৪৪৫। মুসলিম উম্মাহর এক অনন্যোজ্জ্বল গৌরবগাথা ও ইতিহাসের দিন। হিজরি সনের প্রথম মাস মুহাররমের ফজিলত নিয়ে আলোকপাত করছেন মুহাম্মদ উসমান গণী। নববর্ষ ১৪৪৫ হিজরি সমাগত। ধর্মীয় বিধি-বিধান চান্দ্র তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইসলামি আচার,অনুষ্ঠান, আনন্দ, উৎসব-সহ সব ক্ষেত্রেই মুসলিম উম্মাহ্ চান্দ্র তারিখের ওপর নির্ভরশীল। হিজরি সনের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর তাহ্জিব-তমাদ্দুনও ঐতিহ্যগতভাবে সম্পৃক্ত। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কৃষ্টি-কালচারে ও মুসলিম জীবনে হিজরি সনের গুরুত্ব অপরিসীম।
জীবন বা আয়ু সময়ের সমষ্টি। বয়স যত বাড়ে– নির্ধারিত আয়ু তত কমে। সময়ের চাকা ঘুরে মানুষ তার জীবনের পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। সময়ের হিসাব দিতে হবে। আল্লাহ্তায়ালা মানুষ সৃষ্টির সময় তার আয়ু নির্ধারিত করে দেন। তিনি আয়ু বাড়াতে ও কমাতে পারেন। নেক আমল, দান,খয়রাত, মাতাপিতার খেদমত, গুরুভক্তি এবং আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর সেবা আয়ু বৃদ্ধির কারণ হয়।
সময়কে মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহারোপযোগী করে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন, দিন-রাত, সপ্তাহ, পক্ষ, মাস, বছর ইত্যাদি। বছরকে আমরা ‘সাল’ বা ‘সন’ বলি। বছর শব্দটি মূল হল উর্দু বরস, সাল শব্দটি ফারসি এবং সন শব্দটি আরবি, বাংলায় বর্ষ, বছর ও অব্দ।
সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর আবর্তনের সময়কালকে সৌরবর্ষ এবং পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের আবর্তনের সময়কালকে ‘চান্দ্রবর্ষ’ বলা হয়। আল্লাহ্তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদে বলেছেনঃ ‘সূর্য ও চন্দ্র আবর্তন করে নির্ধারিত কক্ষপথে।’ (সূরা আর রহমান, আয়াত ৫)।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর হিজরতের বছরকে ইসলামি সন গণনার প্রথম বছর ধরা হয়েছে বলে এটি ‘হিজরি সন’ নামে পরিচিত। হিজরি সন চান্দ্রবর্ষ হিসেবে গণনা করা হয়।
সৌরবর্ষে ৩৬৫ ও ৩৬৬ দিনে বছর হয়। চান্দ্রবর্ষ ৩৫৪ ও ৩৫৫ দিনে বছর হয়। ইসলামি শরিয়তের ফিকহি বিধানগুলোতে বছর বলতে চান্দ্রবর্ষকেই বোঝানো হয়।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমার রা.-এর খেলাফতের সময় বিস্তৃত ভূখণ্ড ইসলামি খেলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ঐতিহাসিক আলবেরুনির বর্ণনায়, বসরার গভর্নর হযরত আবু মুসা আশআরি রা. একটি পত্রে হযরত উমার রা.কে জানান, ‘আপনি আমাদের কাছে যেসব চিঠি পাঠাচ্ছেন, সেগুলোতে সন-তারিখের উল্লেখ নেই, এতে আমাদের অসুবিধা হয়।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে খলিফা হযরত উমার রা. একটি সন চালুর ব্যাপারে সচেষ্ট হন।
আল্লামা শিবলী নোমানী রহ. সুপ্রসিদ্ধ ‘আল্ ফারুক’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত উমার রা.-এর শাসনামলে ১৬ হিজরি সনের শাবান মাসে খলিফার কাছে একটি দাফতরিক পত্রের খসড়া পেশ করা হয়, পত্রটিতে মাসের উল্লেখ ছিল, সনের উল্লেখ ছিল না। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন খলিফা বললেন, ‘পরবর্তী কোনও সময়ে তা কীভাবে বোঝা যাবে যে এটি কোন সনে পেশ করা হয়েছি? অতঃপর তিনি সাহাবায়ে কেরাম ও অন্যান্য শীর্ষ পর্যায়ের জ্ঞানী-গুণীদের পরামর্শে হিজরতের ১৬ বছর পর ১০ জমাদিউল আওয়াল মোতাবেক ৬৩৮ খ্রিস্টাধে হিজরি সন প্রবর্তনের এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। হিজরতের বছর থেকে সন গণনার পরামর্শ দেন হযরত আলী রা.। পবিত্র মুর্হারম মাস থেকে ইসলামি বর্ষ শুরু করার পরামর্শ প্রদান করেন হযরত উসমান রা.।’ (বুখারী,আবুদাউদ)
ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস ‘মুহাররম’। ‘মুহাররম’ শব্দের অর্থ ‘সম্মানিত’। ইসলামের ইতিহাসে এই মাস এমন কতগুলো উল্লেখযোগ্য স্মৃতিবিজড়িত, যে স্মৃতিসমূহের সম্মানার্থেই এই মাসকে মুহাররম বা সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এই সম্পর্কে পবিত্র কালামে রয়েছেঃ ‘আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২, তার মধ্যে ৪টি মাস (মুহাররম,রজব, যিলকদ,যিলহজ) সম্মানিত।’ (সূরা:তাওবা, আয়াত:৩৬)
হাদিস শরিফে চান্দ্রবর্ষের ১২ মাসের মধ্যে মুহাররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর মাস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি)।চান্দ্রবর্ষের প্রথম মাসটির পুরো নাম হল ‘মুহাররামুল হারাম’।এই মাসের করণীয় আমলসমূহ হল চাঁদের প্রথম রাতে ও দিনে নফল নামায। প্রথম ১০ দিন নফল রোযা। বিশেষত ৯ ও ১০ মুহাররম আশুরার সুন্নাত রোযা। আশুরার দিনে ও রাতে নফল ইবাদাত। (তরিকত শিক্ষা, খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা রহ. পৃষ্ঠা ৩০ ও ৯৬, রাহাতুল কুলুব,ইমাম রাযীন রহ.)
আসুন, তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে পুরোনো বছরকে বিদায় দিয়ে ইবাদাতের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানাই। বিশ্বাস, আশা ও ভালবাসা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাই। জীবনের অনন্ত যাত্রায় একে অন্যের সহযোগী ও কল্যাণকামী হই।
Tag :