১১ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোমবার সংসদে ওয়াকফ বিল পেশ

সুস্মিতা
  • আপডেট : ৯ মার্চ ২০২৫, রবিবার
  • / 19

নয়াদিল্লি: সোমবার থেকে সংসদে শুরু হচ্ছে বাজেট পর্বের দ্বিতীয় অধিবেশন। আর এদিনই লোকসভায় পেশ হতে পারে ওয়াকফ বিল। এমনটাই সংসদ ভবন সূত্রে খবর। লোকসভায় বিল পাস হওয়ার পর তা যাবে রাজ্যসভায়। সেখানে পাস হয়ে গেলে বিলটি যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে স্বাক্ষরের জন্য। রাষ্ট্রপতি সই করলেই তা আইনে পরিণত হয়ে যাবে। যদিও কংগ্রেস জানিয়েছে, তারা এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করবে। আর গোটা বিষয়টি দেখছেন খোদ কংগ্রেস সুপ্রিমো সোনিয়া গান্ধি। ওয়াকফ বিল ছাড়াও ইনকাম ট্যাক্স সংশোধী বিলেও তাঁর আপত্তি রয়েছে। কংগ্রেস জানিয়েছে, ইন্ডিয়া জোটের দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে একজোট হয়ে তারা প্রতিবাদ জানাবে। সেজন্যে জোটের দলগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে তারা। এবার অবশ্য লোকসভায় বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। দুই শরিক দল টিডিপি ও জেডিইউয়ের কাঁধে ভর করে সরকার চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। এখন দেখার এই দুই শরিক ওয়াকফ বিলকে সমর্থন করেন কিনা। যদিও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জয়রাম রমেশ বলেন, এই ওয়াকফ বিলকে সমর্থন করা নিয়ে এবার দুই শরিক দলের নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমারের আসল চেহারা প্রকাশ পাবে। এই দুই শরিক নেতা মুসলিমদের জন্য অনেক কথা বলেন, নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেন। এখন সত্যিই তাঁরা মুসলিম তথা সংখ্যালঘুদের কল্যাণ চান কিনা সেটা সংসদে ভোটাভুটির সময় স্পষ্ট হয়ে যাবে। যদিও কেন্দ্রীয়মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু একাধিকবার দাবি করেছেন, নীতীশ ও চন্দ্রবাবু ওয়াকফ বিলকে সমর্থন করবেন। যদিও এই দুই নেতা এখনও এই বিলকে সমর্থন করা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। বরং তাঁরা বলেছিলেন, মুসলিম স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনও পদক্ষেপে তাঁরা শামিল হবেন না।
এদিকে, ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিম সংগঠনগুলি এই বিলের বিরোধিতা শুরু করে দিয়েছে। একাধিক জায়গায় তারা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। জামায়াত-ই-ইসলামি হিন্দের সভাপতি তথা অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সহ-সভাপতি সৈয়দ সাদাতুল্লাহ হুসাইনি ইতিমধ্যেই দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার মুসলিমদের ওয়াকফ বিলের বিরোধিতায় ১৩ এপ্রিল যন্তর মন্তরে শামিল হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের ডাক দিয়েছেন। এক ভিডিয়ো বার্তায় তিনি বলেছেন, এটি ভারতের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে একটি দমনমূলক পদক্ষেপ। কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াকফ আইনে সংশোধনী এনে মুসলিমদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়। বিলটি প্রত্যাহারের জন্য সরকারকে বোঝানোর সমস্ত চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে বিসর্জন দিয়েছে এবং এখন বিলটি সংসদে পাস করানোর জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা করছে। ফলে মুসলিমদের সামনে এখন এই বিলের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতিবাদ সংগঠিত করা ছাড়া বিকল্প আর কোনও উপায় নেই। আমি বিশ্বাস করি ওয়াকফ, মসজিদ সমস্তই আল্লাহর সম্পত্তি। সেগুলি রক্ষা করা মুসলিমদের কর্তব্য।
কেন্দ্রের এই ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে শিয়ারাও। তারাও আন্দোলনে শামিল হয়েছে। শিয়া ধর্মগুরু মাওলানা কালবে জাওয়াদ নাকভি বিলের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। শুক্রবার লখনউতে তাঁর নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখান শিয়ারা। বিজেপি সরকারের ওয়াকফ-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভকারীরা বিতর্কিত বিলটি প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে মাওলানা নাকভি বলেন, মুসলিমরা কখনও ওয়াকফ সংশোধনী বিল মেনে নেবে না। তাঁর অভিযোগ, ওয়াকফ নিয়ে জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি (জেপিসি)-র কাছে পেশ করা বিরোধীদের সমস্ত পরামর্শ উপেক্ষা করে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তাঁর সাফ ঘোষণা, শিয়ারা নির্দিধায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি) এবং অন্যান্য মুসলিম সংগঠনগুলির ডাকা যে কোনও বিক্ষোভে পুরোপুরি অংশগ্রহণ করবেন। বিলটি ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানগুলি ভেঙে দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই বিলের বিরুদ্ধে তাই প্রতিবাদ চলবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

সোমবার সংসদে ওয়াকফ বিল পেশ

আপডেট : ৯ মার্চ ২০২৫, রবিবার

নয়াদিল্লি: সোমবার থেকে সংসদে শুরু হচ্ছে বাজেট পর্বের দ্বিতীয় অধিবেশন। আর এদিনই লোকসভায় পেশ হতে পারে ওয়াকফ বিল। এমনটাই সংসদ ভবন সূত্রে খবর। লোকসভায় বিল পাস হওয়ার পর তা যাবে রাজ্যসভায়। সেখানে পাস হয়ে গেলে বিলটি যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে স্বাক্ষরের জন্য। রাষ্ট্রপতি সই করলেই তা আইনে পরিণত হয়ে যাবে। যদিও কংগ্রেস জানিয়েছে, তারা এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করবে। আর গোটা বিষয়টি দেখছেন খোদ কংগ্রেস সুপ্রিমো সোনিয়া গান্ধি। ওয়াকফ বিল ছাড়াও ইনকাম ট্যাক্স সংশোধী বিলেও তাঁর আপত্তি রয়েছে। কংগ্রেস জানিয়েছে, ইন্ডিয়া জোটের দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে একজোট হয়ে তারা প্রতিবাদ জানাবে। সেজন্যে জোটের দলগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে তারা। এবার অবশ্য লোকসভায় বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। দুই শরিক দল টিডিপি ও জেডিইউয়ের কাঁধে ভর করে সরকার চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। এখন দেখার এই দুই শরিক ওয়াকফ বিলকে সমর্থন করেন কিনা। যদিও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জয়রাম রমেশ বলেন, এই ওয়াকফ বিলকে সমর্থন করা নিয়ে এবার দুই শরিক দলের নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমারের আসল চেহারা প্রকাশ পাবে। এই দুই শরিক নেতা মুসলিমদের জন্য অনেক কথা বলেন, নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেন। এখন সত্যিই তাঁরা মুসলিম তথা সংখ্যালঘুদের কল্যাণ চান কিনা সেটা সংসদে ভোটাভুটির সময় স্পষ্ট হয়ে যাবে। যদিও কেন্দ্রীয়মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু একাধিকবার দাবি করেছেন, নীতীশ ও চন্দ্রবাবু ওয়াকফ বিলকে সমর্থন করবেন। যদিও এই দুই নেতা এখনও এই বিলকে সমর্থন করা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। বরং তাঁরা বলেছিলেন, মুসলিম স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনও পদক্ষেপে তাঁরা শামিল হবেন না।
এদিকে, ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিম সংগঠনগুলি এই বিলের বিরোধিতা শুরু করে দিয়েছে। একাধিক জায়গায় তারা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। জামায়াত-ই-ইসলামি হিন্দের সভাপতি তথা অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সহ-সভাপতি সৈয়দ সাদাতুল্লাহ হুসাইনি ইতিমধ্যেই দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার মুসলিমদের ওয়াকফ বিলের বিরোধিতায় ১৩ এপ্রিল যন্তর মন্তরে শামিল হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের ডাক দিয়েছেন। এক ভিডিয়ো বার্তায় তিনি বলেছেন, এটি ভারতের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে একটি দমনমূলক পদক্ষেপ। কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াকফ আইনে সংশোধনী এনে মুসলিমদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়। বিলটি প্রত্যাহারের জন্য সরকারকে বোঝানোর সমস্ত চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে বিসর্জন দিয়েছে এবং এখন বিলটি সংসদে পাস করানোর জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা করছে। ফলে মুসলিমদের সামনে এখন এই বিলের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতিবাদ সংগঠিত করা ছাড়া বিকল্প আর কোনও উপায় নেই। আমি বিশ্বাস করি ওয়াকফ, মসজিদ সমস্তই আল্লাহর সম্পত্তি। সেগুলি রক্ষা করা মুসলিমদের কর্তব্য।
কেন্দ্রের এই ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে শিয়ারাও। তারাও আন্দোলনে শামিল হয়েছে। শিয়া ধর্মগুরু মাওলানা কালবে জাওয়াদ নাকভি বিলের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। শুক্রবার লখনউতে তাঁর নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখান শিয়ারা। বিজেপি সরকারের ওয়াকফ-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভকারীরা বিতর্কিত বিলটি প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে মাওলানা নাকভি বলেন, মুসলিমরা কখনও ওয়াকফ সংশোধনী বিল মেনে নেবে না। তাঁর অভিযোগ, ওয়াকফ নিয়ে জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি (জেপিসি)-র কাছে পেশ করা বিরোধীদের সমস্ত পরামর্শ উপেক্ষা করে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তাঁর সাফ ঘোষণা, শিয়ারা নির্দিধায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি) এবং অন্যান্য মুসলিম সংগঠনগুলির ডাকা যে কোনও বিক্ষোভে পুরোপুরি অংশগ্রহণ করবেন। বিলটি ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানগুলি ভেঙে দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই বিলের বিরুদ্ধে তাই প্রতিবাদ চলবে।