২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাজ্যবাসীকে শান্তির বার্তা দিয়ে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর, বিভেদের রাজনীতিতে জড়িত আরএসএসও

আমরা একত্রে বাঁচব, লড়ব এবং জিতব: Mamata Banerjee

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার
  • / 29

রাজ্যবাসীকে শান্তির বার্তা দিয়ে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর, বিভেদের রাজনীতিতে জড়িত আরএসএসও

আবদুল ওদুদ: মুর্শিদাবাদের অশান্তির ঘটনায় রাজ্যবাসীর কাছে শান্তির আবেদন জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।শনিবার এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, বিজেপি এবং তাদের সঙ্গীরা পশ্চিমবঙ্গে হঠাৎ খুব আক্রমণাত্মক হয়েছে। এই সঙ্গীদের মধ্যে আরএসএস-ও আছে। আমি আগে আরএসএস-এর নাম নিইনি, কিন্তু এবার বাধ্য হয়েই বলতে হচ্ছে যে, রাজ্যে যে কুশ্রী মিথ্যার প্রচার চলছে তার মূলে তারাও আছে। ওই চিঠিতে তিনি আরো লিখেছেন, প্ররোচনার সূত্রে একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতটিকে এরা ব্যবহার করছে। ব্যবহার করছে বিভেদের রাজনীতি করার জন্য।

‘এরা ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’-এর খেলা খেলতে চায়। এ খেলা বিপজ্জনক।’ রাজ্যবাসীর প্রতি আবেদন জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) লিখেছেন, এইসবের প্রতিক্রিয়ায়, আমি একটি আবেদন করতে চাই। আমি জন্মেছি এবং বড় হয়েছি পশ্চিমবঙ্গে, বাংলা আমার মাতৃভূমি, দেশ আমার ইন্ডিয়া ভারতবর্ষ। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, আমার রাজ্যকে ভালবাসি, আমার তৃণমূল স্তরে আছে যে জেলা থেকে ব্লক থেকে গ্রাম আমি তাদের সব কিছু নিয়ে ভালবাসি। এই ভালবাসা থেকেই আমার এই আবেদনপত্র।

চার পাতার ওই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) লিখেছেন আমার আবেদন হল: দয়া করে ধীর ও শান্ত থাকুন। আমরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নিন্দা করি এবং তাদের রুখবই। দাঙ্গার পিছনে আছে যে দুর্বৃত্তরা, তাদের কড়া হাতে দমন করা হচ্ছে। কিন্তু, সেইসঙ্গেই, পারস্পরিক অবিশ্বাসের বাতাবরণও আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে, পরস্পরের ব্যাপারে সহমর্মী ও যত্নশীল হতে হবে।

আমরা একত্রে বাঁচব, লড়ব এবং জিতব: Mamata Banerjee

আমরা একত্রে বাঁচব, লড়ব এবং জিতব: Mamata Banerjeeআমরা একত্রে বাঁচব, লড়ব এবং জিতব: Mamata Banerjeeআমরা একত্রে বাঁচব, লড়ব এবং জিতব: Mamata Banerjee

চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) আরও লিখেছেন, আগুনের সঙ্গে খেলা করার জন্য ওরা প্রথমে রাম নবমী দিনটিকেই বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রাম নবমী উদযাপন হয় খুবই শান্তিপূর্ণভাবে। ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ওরা ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে সংঘটিত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কিছু বিষয়কে ব্যবহার করতে চায়। বিজেপি এবং তাদের সঙ্গীরা তথাকথিত রাজনৈতিক কর্মকান্ডের নামে আমাদের বিশ্বজনীন হিন্দুধর্মের অপযশ করছে। শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের হিন্দুধর্ম হল একটি বিশ্বজনীন ধর্ম। এই বিশ্বজনীন ধর্ম আমাকে শেখায় সকলকে গ্রহণ করতে, ভালবাসতে। চিঠিতে তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, হিন্দুধর্ম থেকে ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম থেকে বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম থেকে ইহুদি ধর্ম সকল পন্থাকেই শ্রদ্ধা করতে শেখায় আমাদের এই বিশ্বজনীন ধর্ম।

রাজ্যবাসীকে ওই চিঠিতে তিনি আরো লিখেছেন, বিজেপি ও তার সঙ্গীরা যা প্রচার করছে, তা মিথ্যা ও সংকীর্ণ। তারা যা বলছে তা অসত্যের ঝুড়ি, অপব্যাখ্যায় ভর্তি। দয়া করে ওদের বিশ্বাস করবেন না। ওরা দাঙ্গা বাধাতে চায়। দাঙ্গায় সকলের ক্ষতি হয়। আমরা সবাইকে ভালবাসি। আমরা সকলে মিলেমিশে থাকতে চাই। আমরা দাঙ্গার নিন্দা করি, আমরা দাঙ্গার বিরুদ্ধে। ওরা সংকীর্ণ নির্বাচনী রাজনীতির কথা ভেবে আমাদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে চায়।

ঘটনার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে চিঠিতে লিখেছেন ,আইন-শৃংখলার স্বার্থে এবং মানুষের প্রাণ ও সম্মান রাখার প্রয়োজনে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। পুলিশের দু’জন অফিসার-ইন-চার্জকে সরানো হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। আরও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দয়া করে মনে রাখবেন, দাঙ্গা যারা ঘটায়, তারা হিন্দুও নয়, তারা মুসলমানও নয় দাঙ্গা বাধায় দুর্বৃত্তরা। সব অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড়া হবে না।

মুখ্যমন্ত্রীর আর উল্লেখ,উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এসব রাজ্যে তো প্রতিবাদ-মিছিল করতেই দেওয়া হয় না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তো এমন সংবিধান-বিরোধী ব্যবস্থা কায়েম নেই। অন্যদিকে আছে মণিপুর সেখানে বহু মাস ধরে আগুন জ্বলেই চলেছে, শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন, হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া। জাতিদাঙ্গার কোনও বিরাম দেখছি না সেখানে। আসাম এবং ত্রিপুরাও গভীরভাবে অশান্ত। উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে যখন ধর্ষণ, অত্যাচার ও মনুষ্যত্বের ক্রমাগত অবমাননা দেখি, তখন লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এমন নৈরাজ্য-পরিস্থিতির থেকেও বিপরীত মেরুতে। দেশের সুশাসন ও ` উন্নয়ন মানচিত্রে আমরা অগ্রণীর স্থানে।

আরও পড়ুন: সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা: ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক যুদ্ধ

রাজ্যবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, বাস্তবিকই, বাংলা সব অর্থে দেশের অগ্রণী রাজ্য। ভারতে সাংস্কৃতিক সংস্কারসাধনে দেশের মধ্যে বাংলা ছিল প্রথম সারিতে এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামেও দেশে বাংলাই ছিল অগ্রগণ্য। এই অগ্রগণ্য ভূমিকা আজও আমাদেরই রয়েছে, সকল প্রয়াসে ও চর্চায়। সম্প্রীতির বাংলায় বিভিন্ন ধর্মের উৎসব প্রসঙ্গে রাজ্যবাসীকে লেখা চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, বাংলা এগিয়ে সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় চর্চায় বা উদ্যাপনে। দুর্গাপূজা হোক বা কালীপূজা, দোল হোক বা হোলি, গঙ্গাসাগর মেলা বা ভক্তির শোভাযাত্রা অথবা মনসা-শীতলার পূজা, ঈদ বা বড়দিনের উৎসব, বুদ্ধপূর্ণিমা বা মহাবীর জয়ন্তীর পালন সব ব্যাপারেই আমরা এগিয়ে। গুরু নানক, পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু ও ঠাকুর হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ইত্যাদি সকল সন্ত বা মনীষীর জন্মদিন আমরা উদ্যাপন করি সমান আন্তরিকতা ও উৎসাহে। সমস্ত সামাজিক উৎসব আমরা পালন করি, সকল-ধর্মীয় আচারের প্রতি আমাদের সমান শ্রদ্ধা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) চিঠিতে আরো উল্লেখ করেন, উত্তরপ্রদেশে ওরা বুলডোজার চালায় জন্ম হয় যন্ত্রণার। বিপরীতে আমাদের দেখুন যে-কেউ যখন উৎপীড়িত বোধ করেন, আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। পশ্চিমবঙ্গে এই হল আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। কোনও সম্প্রদায় বা জনগোষ্ঠী পশ্চিমবঙ্গে বিব্রত বোধ করবেন না। সকলের কাছে আমাদের আবেদন, আমাদের বিশ্বাস করুন, আমাদের উপর আস্থা রাখুন। ন্যায় সাধিত হবেই। আপনারা আমাদের সকল সহায়তা পাবেন।

বহিরাগতদের প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) লিখেছেন, যারা দাঙ্গার জন্ম দেয়, তারা বাইরে থেকে আসে এবং দাঙ্গা বাধিয়ে পালায়। ভিতর থেকে আমাদেরই লড়তে হবে তাদের খারাপ কাজের বিরুদ্ধে। আমরা একত্রে বাঁচব, লড়ব এবং জিতব। বাইরে থেকে এসে যে লোকগুলি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার জন্ম দেয় এবং সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দাঙ্গার জন্ম দেয় তাদের বিশ্বাস করবেন না।

ঈর্ষার কোনও ওষুধ নেই। হিংসুটে লোকেরা তাদের সংকীর্ণ দৃষ্টিপথের বাইরে যেতে পারে না। চাকরি, উন্নয়ন, সৃজনশীলতা, কিছুই ওই বিরোধীরা চায় না বা দিতে পারে না। ওদের একমাত্র উদ্দেশ্য মূল্যবৃদ্ধি, ওষুধের দাম বাড়ানো, হাসপাতালের খরচ এবং বিমার ব্যয় বাড়ানো, পেট্রল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে যাওয়া। জীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোই ওদের লক্ষ্য, তাই তারা বিভেদকামী প্রচারের আগুন জ্বালাতে চায়।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রাজ্যবাসীকে শান্তির বার্তা দিয়ে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর, বিভেদের রাজনীতিতে জড়িত আরএসএসও

আমরা একত্রে বাঁচব, লড়ব এবং জিতব: Mamata Banerjee

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার

রাজ্যবাসীকে শান্তির বার্তা দিয়ে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর, বিভেদের রাজনীতিতে জড়িত আরএসএসও

আবদুল ওদুদ: মুর্শিদাবাদের অশান্তির ঘটনায় রাজ্যবাসীর কাছে শান্তির আবেদন জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।শনিবার এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, বিজেপি এবং তাদের সঙ্গীরা পশ্চিমবঙ্গে হঠাৎ খুব আক্রমণাত্মক হয়েছে। এই সঙ্গীদের মধ্যে আরএসএস-ও আছে। আমি আগে আরএসএস-এর নাম নিইনি, কিন্তু এবার বাধ্য হয়েই বলতে হচ্ছে যে, রাজ্যে যে কুশ্রী মিথ্যার প্রচার চলছে তার মূলে তারাও আছে। ওই চিঠিতে তিনি আরো লিখেছেন, প্ররোচনার সূত্রে একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতটিকে এরা ব্যবহার করছে। ব্যবহার করছে বিভেদের রাজনীতি করার জন্য।

‘এরা ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’-এর খেলা খেলতে চায়। এ খেলা বিপজ্জনক।’ রাজ্যবাসীর প্রতি আবেদন জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) লিখেছেন, এইসবের প্রতিক্রিয়ায়, আমি একটি আবেদন করতে চাই। আমি জন্মেছি এবং বড় হয়েছি পশ্চিমবঙ্গে, বাংলা আমার মাতৃভূমি, দেশ আমার ইন্ডিয়া ভারতবর্ষ। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, আমার রাজ্যকে ভালবাসি, আমার তৃণমূল স্তরে আছে যে জেলা থেকে ব্লক থেকে গ্রাম আমি তাদের সব কিছু নিয়ে ভালবাসি। এই ভালবাসা থেকেই আমার এই আবেদনপত্র।

চার পাতার ওই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) লিখেছেন আমার আবেদন হল: দয়া করে ধীর ও শান্ত থাকুন। আমরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নিন্দা করি এবং তাদের রুখবই। দাঙ্গার পিছনে আছে যে দুর্বৃত্তরা, তাদের কড়া হাতে দমন করা হচ্ছে। কিন্তু, সেইসঙ্গেই, পারস্পরিক অবিশ্বাসের বাতাবরণও আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে, পরস্পরের ব্যাপারে সহমর্মী ও যত্নশীল হতে হবে।

আমরা একত্রে বাঁচব, লড়ব এবং জিতব: Mamata Banerjee

আমরা একত্রে বাঁচব, লড়ব এবং জিতব: Mamata Banerjeeআমরা একত্রে বাঁচব, লড়ব এবং জিতব: Mamata Banerjeeআমরা একত্রে বাঁচব, লড়ব এবং জিতব: Mamata Banerjee

চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) আরও লিখেছেন, আগুনের সঙ্গে খেলা করার জন্য ওরা প্রথমে রাম নবমী দিনটিকেই বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রাম নবমী উদযাপন হয় খুবই শান্তিপূর্ণভাবে। ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ওরা ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে সংঘটিত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কিছু বিষয়কে ব্যবহার করতে চায়। বিজেপি এবং তাদের সঙ্গীরা তথাকথিত রাজনৈতিক কর্মকান্ডের নামে আমাদের বিশ্বজনীন হিন্দুধর্মের অপযশ করছে। শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের হিন্দুধর্ম হল একটি বিশ্বজনীন ধর্ম। এই বিশ্বজনীন ধর্ম আমাকে শেখায় সকলকে গ্রহণ করতে, ভালবাসতে। চিঠিতে তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, হিন্দুধর্ম থেকে ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম থেকে বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম থেকে ইহুদি ধর্ম সকল পন্থাকেই শ্রদ্ধা করতে শেখায় আমাদের এই বিশ্বজনীন ধর্ম।

রাজ্যবাসীকে ওই চিঠিতে তিনি আরো লিখেছেন, বিজেপি ও তার সঙ্গীরা যা প্রচার করছে, তা মিথ্যা ও সংকীর্ণ। তারা যা বলছে তা অসত্যের ঝুড়ি, অপব্যাখ্যায় ভর্তি। দয়া করে ওদের বিশ্বাস করবেন না। ওরা দাঙ্গা বাধাতে চায়। দাঙ্গায় সকলের ক্ষতি হয়। আমরা সবাইকে ভালবাসি। আমরা সকলে মিলেমিশে থাকতে চাই। আমরা দাঙ্গার নিন্দা করি, আমরা দাঙ্গার বিরুদ্ধে। ওরা সংকীর্ণ নির্বাচনী রাজনীতির কথা ভেবে আমাদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে চায়।

ঘটনার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে চিঠিতে লিখেছেন ,আইন-শৃংখলার স্বার্থে এবং মানুষের প্রাণ ও সম্মান রাখার প্রয়োজনে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। পুলিশের দু’জন অফিসার-ইন-চার্জকে সরানো হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। আরও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দয়া করে মনে রাখবেন, দাঙ্গা যারা ঘটায়, তারা হিন্দুও নয়, তারা মুসলমানও নয় দাঙ্গা বাধায় দুর্বৃত্তরা। সব অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড়া হবে না।

মুখ্যমন্ত্রীর আর উল্লেখ,উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এসব রাজ্যে তো প্রতিবাদ-মিছিল করতেই দেওয়া হয় না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তো এমন সংবিধান-বিরোধী ব্যবস্থা কায়েম নেই। অন্যদিকে আছে মণিপুর সেখানে বহু মাস ধরে আগুন জ্বলেই চলেছে, শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন, হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া। জাতিদাঙ্গার কোনও বিরাম দেখছি না সেখানে। আসাম এবং ত্রিপুরাও গভীরভাবে অশান্ত। উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে যখন ধর্ষণ, অত্যাচার ও মনুষ্যত্বের ক্রমাগত অবমাননা দেখি, তখন লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এমন নৈরাজ্য-পরিস্থিতির থেকেও বিপরীত মেরুতে। দেশের সুশাসন ও ` উন্নয়ন মানচিত্রে আমরা অগ্রণীর স্থানে।

আরও পড়ুন: সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা: ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক যুদ্ধ

রাজ্যবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, বাস্তবিকই, বাংলা সব অর্থে দেশের অগ্রণী রাজ্য। ভারতে সাংস্কৃতিক সংস্কারসাধনে দেশের মধ্যে বাংলা ছিল প্রথম সারিতে এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামেও দেশে বাংলাই ছিল অগ্রগণ্য। এই অগ্রগণ্য ভূমিকা আজও আমাদেরই রয়েছে, সকল প্রয়াসে ও চর্চায়। সম্প্রীতির বাংলায় বিভিন্ন ধর্মের উৎসব প্রসঙ্গে রাজ্যবাসীকে লেখা চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, বাংলা এগিয়ে সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় চর্চায় বা উদ্যাপনে। দুর্গাপূজা হোক বা কালীপূজা, দোল হোক বা হোলি, গঙ্গাসাগর মেলা বা ভক্তির শোভাযাত্রা অথবা মনসা-শীতলার পূজা, ঈদ বা বড়দিনের উৎসব, বুদ্ধপূর্ণিমা বা মহাবীর জয়ন্তীর পালন সব ব্যাপারেই আমরা এগিয়ে। গুরু নানক, পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু ও ঠাকুর হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ইত্যাদি সকল সন্ত বা মনীষীর জন্মদিন আমরা উদ্যাপন করি সমান আন্তরিকতা ও উৎসাহে। সমস্ত সামাজিক উৎসব আমরা পালন করি, সকল-ধর্মীয় আচারের প্রতি আমাদের সমান শ্রদ্ধা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) চিঠিতে আরো উল্লেখ করেন, উত্তরপ্রদেশে ওরা বুলডোজার চালায় জন্ম হয় যন্ত্রণার। বিপরীতে আমাদের দেখুন যে-কেউ যখন উৎপীড়িত বোধ করেন, আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। পশ্চিমবঙ্গে এই হল আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। কোনও সম্প্রদায় বা জনগোষ্ঠী পশ্চিমবঙ্গে বিব্রত বোধ করবেন না। সকলের কাছে আমাদের আবেদন, আমাদের বিশ্বাস করুন, আমাদের উপর আস্থা রাখুন। ন্যায় সাধিত হবেই। আপনারা আমাদের সকল সহায়তা পাবেন।

বহিরাগতদের প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) লিখেছেন, যারা দাঙ্গার জন্ম দেয়, তারা বাইরে থেকে আসে এবং দাঙ্গা বাধিয়ে পালায়। ভিতর থেকে আমাদেরই লড়তে হবে তাদের খারাপ কাজের বিরুদ্ধে। আমরা একত্রে বাঁচব, লড়ব এবং জিতব। বাইরে থেকে এসে যে লোকগুলি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার জন্ম দেয় এবং সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দাঙ্গার জন্ম দেয় তাদের বিশ্বাস করবেন না।

ঈর্ষার কোনও ওষুধ নেই। হিংসুটে লোকেরা তাদের সংকীর্ণ দৃষ্টিপথের বাইরে যেতে পারে না। চাকরি, উন্নয়ন, সৃজনশীলতা, কিছুই ওই বিরোধীরা চায় না বা দিতে পারে না। ওদের একমাত্র উদ্দেশ্য মূল্যবৃদ্ধি, ওষুধের দাম বাড়ানো, হাসপাতালের খরচ এবং বিমার ব্যয় বাড়ানো, পেট্রল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে যাওয়া। জীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোই ওদের লক্ষ্য, তাই তারা বিভেদকামী প্রচারের আগুন জ্বালাতে চায়।