১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পশ্চিমবঙ্গের পয়লা বৈশাখে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’

সুস্মিতা
  • আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
  • / 40

আহমদ হাসান

ওপার বাংলায় পহেলা বৈশাখে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বাদ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের কোথাও ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ হয়নি। এমনকি সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচিও বাঙালি সংস্কৃতির দাবি তুলে পুরনো সেই মাঙ্গলিক কিংবা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ করেনি। কিংবা মঙ্গলে অভিষিক্ত করে কোনও অনুষ্ঠান করেনি। উদীচির রয়েছে দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রামের ইতিহাস। তারাই যদি মঙ্গল শোভাযাত্রা বা মাঙ্গলিক কোনও অনুষ্ঠান না করে, তবে অন্যদের কাছে আর কি প্রত্যাশা থাকতে পারে।
শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর প্রথম বৈশাখেই অল্প কিছু আপত্তি উপেক্ষা করে বাংলাদেশের বর্তমান শাসক-জান্তার প্ররোচনায় ‘মঙ্গল’ বাদ গেল। বিষয়টি এপার বাংলা এবং আমাদের দেশ ভারতের জন্য অবশ্যই দুঃখের।
কিন্তু বাংলাদেশীরা সংখ্যায় আমাদের থেকে বেশি হতে পারে। কিন্তু বাঙালিয়ানার সব আধিপত্য ও ঐতিহ্য তারা পেতে পারে না। আমাদের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অসমের বরাক উপত্যকা, গোয়ালপারা, ধুবড়ী, ঝাড়খন্ড প্রভৃতি অঞ্চলে প্রচুর বাঙালি রয়েছে। রয়েছে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি-সাহিত্যের চর্চা। আমাদের মনে পড়ে যায়, রবীন্দ্রনাথের সেই গান, ‘এসো হে পতিত করো অপনীত,/ সব অপমানভার।/ মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা/ মঙ্গলঘট হয়নি যে ভরা,/ সবার পরশে পবিত্র-করা তীর্থনীরে।’
মঙ্গলঘট তো সবার জন্য। বাংলাদেশী ইউনূস-ফারুকীরা যদি মঙ্গলঘটকে মর্যদা না দেন, তাহলেও মঙ্গল বাঙালির জীবন থেকে হারিয়ে যাবে না। তাই আমরা দেখতে পাচ্ছি, মঙ্গল শোভাযাত্রা অখন্ড বাংলা থেকে উবে যাচ্ছে না। বরং সেই মঙ্গল শোভাযাত্রার ঐতিহ্য পরিমন্ডলকে পহেলা বৈশাখে কাঁধে তুলে নিয়েছে বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদ। সংস্থাটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত। আর সে জন্যই তা ‘বঙ্গীয়’ হলেও উগ্র হিন্দুয়ানীর গন্ধ থেকে মুক্ত নয়। আর এই সংগঠনকে দোষ দিয়ে কোনও লাভ নেই। কারণ, আরএসএস-এর সাংস্কৃতিক ধ্যানধারণা ও চেতনাকেই এই বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদ এপার বাংলা তো বটেই, ভারতীয় সব বাঙালির কাঁধে চাপিয়ে দিতে চায়। তাই তারা মঙ্গলের দায়দায়িত্ব ঢাকার কবল থেকে আজাদ করে কলকাতায় নিয়ে এসেছেন। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকার তাদের সহায়তা না করলেও সহায়তা এসেছে মোদি-অমিত শাহের দিল্লি থেকে। এই বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদ যেহেতু ‘সনাতন ধ্যানধারণা’কে বাঙালি-চেতনার উপর চাপিয়ে দিতে চায়, তাই কেন্দ্রের সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনস্থ পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র এবার কলকাতায় আয়োজিত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’কে সফল করতে বড় ধরনের আর্থিক সাহায্য দিয়েছে। তবে আরএসএস অনুসারি আয়োজকরা জানাচ্ছেন, তাঁরা সাহায্য পেয়েছেন কিন্তু কারও কাছে সহায়তা চাননি। কারণ, সংঘ ঘনিষ্ঠ মানুষজন ও স্বয়ং সেবকরা দেশের নানা প্রান্ত থেকে বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদকে আর্থিক অনুদান পাঠিয়ে থাকে। তাই মোদিজি-অমিত শাহজিদের সহায়তা না পেলেও তাঁরা মূল সংগঠন আরএসএস থেকে নানাভাবে আর্থিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহায়তা পেয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন: পহেলা বৈশাখে এপারে ‘মঙ্গল’ আর ওপারে ‘আনন্দ’

এই বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদ মঙ্গলবার রবীন্দ্র সদনের বিপরীতে মোহর কুঞ্জ থেকে এই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বের করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরএসএস-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনুসারিবর্গ এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবকরা। এই শোভাযাত্রার সঙ্গে ছিল গৈরিক পতাকা, গেরুয়া কাপড়ে আচ্ছাদিত ঢোল এবং কীর্তনের করতার প্রভৃতি। শোভাযাত্রীরা যে পতাকা বহন করছিলেন সেই সব গেরুয়া-হলুদ পতাকার সঙ্গে আরএসএস-এর পতাকার দারুন মিল।
এছাড়া হিন্দুত্ববাদী মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা মারাঠারা যেভাবে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজকে আইকন বানিয়ে নিয়েছেন, বাঙালির সেই ধরনের আইকন কোথায়? নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে অবশ্যই বাঙালির আইকন বানানো যেত। কিন্তু তাঁকে আবার আরএসএস-এর ঘোরতর নাপস্ন্দ। তবে আরএসএস অনেক খুঁজে বাংলায় পেয়েছে রাজাধিরাজ মহারাজ বীর শশাঙ্ককে। তাই আরএসএস-এর সাংস্কৃতির সংগঠন বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদ মঙ্গলবার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’য় ছোট ছোট বালক-বালিকাদের হাতে একটি করে প্লাকার্ড তুলে দিয়েছে। আর তাতে এক ব্যক্তির ছবির নিচে লেখা আছে ‘জয় বঙ্গ, জয় শশাঙ্ক’। তবে শশাঙ্কের এই ছবিটি আগে আমরা দেখতে পাইনি। একজন ইতিহাসবিদ বললেন, এই ছবিটি যে শশাঙ্কের তার কোনও প্রমাণ নেই। আর ছবিটির সঙ্গে বাঙালিদের অবয়ব ও মুখচ্ছবির কোনও মিল নেই। কিন্তু বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’য় এই ছবিটিকেই বিশেষ মর্যাদা সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া এই সংগঠনটি দাবি করেছে, শশাঙ্ক নাকি ছিলেন বঙ্গাধে প্রবর্তক। বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদের ফেসবুকে লেখা হয়েছে, ‘বঙ্গাধের প্রবর্তক মহারাজা শশাঙ্কের রাজধানীর নামে মুর্শিদাবাদের নাম করতে হবে কর্ণসুবর্ণ’। এসব নিয়েই ছিল কলকাতার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। ছত্রে ছত্রে ছিল হিন্দুয়ানির রূপ-রস-গন্ধ। বাঙালি খ্রিস্টান বা বাঙালি মুসলিমরা এই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’য় যোগ দিতে পারবেন কি না, সেই সম্পর্কে অবশ্য বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদ বা তাদের নেতা প্রবীর ভট্টাচার্য কোনও কথা বলেননি। তবে ঢাকার পরিবর্তে কলকাতার শোভাযাত্রার মধ্যে ছিল মিলের থেকে বেশি গরমিল।
কিন্তু এখানেও আমরা রবীন্দ্রনাথেরই শরণ নিতে পারি। দুই দেশেরই জাতীয় সংগীত কবিগুরুরই লেখা। তাঁর একটি গান রয়েছে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর..’। দেখা যাচ্ছে, এখানে বাংলাদেশের ‘আনন্দের’ কথা আছে আর পশ্চিমবঙ্গের ‘মঙ্গলের’ও কথা আছে। তাই রবীন্দ্রনাথকে অনুসরণ করে বলি, থাক না আনন্দলোক সেইসঙ্গে না হয় থাকুক মঙ্গলালোক। এভাবেই কিন্তু রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে বাঙালি এগিয়ে চলবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

পশ্চিমবঙ্গের পয়লা বৈশাখে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’

আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার

আহমদ হাসান

ওপার বাংলায় পহেলা বৈশাখে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বাদ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের কোথাও ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ হয়নি। এমনকি সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচিও বাঙালি সংস্কৃতির দাবি তুলে পুরনো সেই মাঙ্গলিক কিংবা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ করেনি। কিংবা মঙ্গলে অভিষিক্ত করে কোনও অনুষ্ঠান করেনি। উদীচির রয়েছে দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রামের ইতিহাস। তারাই যদি মঙ্গল শোভাযাত্রা বা মাঙ্গলিক কোনও অনুষ্ঠান না করে, তবে অন্যদের কাছে আর কি প্রত্যাশা থাকতে পারে।
শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর প্রথম বৈশাখেই অল্প কিছু আপত্তি উপেক্ষা করে বাংলাদেশের বর্তমান শাসক-জান্তার প্ররোচনায় ‘মঙ্গল’ বাদ গেল। বিষয়টি এপার বাংলা এবং আমাদের দেশ ভারতের জন্য অবশ্যই দুঃখের।
কিন্তু বাংলাদেশীরা সংখ্যায় আমাদের থেকে বেশি হতে পারে। কিন্তু বাঙালিয়ানার সব আধিপত্য ও ঐতিহ্য তারা পেতে পারে না। আমাদের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অসমের বরাক উপত্যকা, গোয়ালপারা, ধুবড়ী, ঝাড়খন্ড প্রভৃতি অঞ্চলে প্রচুর বাঙালি রয়েছে। রয়েছে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি-সাহিত্যের চর্চা। আমাদের মনে পড়ে যায়, রবীন্দ্রনাথের সেই গান, ‘এসো হে পতিত করো অপনীত,/ সব অপমানভার।/ মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা/ মঙ্গলঘট হয়নি যে ভরা,/ সবার পরশে পবিত্র-করা তীর্থনীরে।’
মঙ্গলঘট তো সবার জন্য। বাংলাদেশী ইউনূস-ফারুকীরা যদি মঙ্গলঘটকে মর্যদা না দেন, তাহলেও মঙ্গল বাঙালির জীবন থেকে হারিয়ে যাবে না। তাই আমরা দেখতে পাচ্ছি, মঙ্গল শোভাযাত্রা অখন্ড বাংলা থেকে উবে যাচ্ছে না। বরং সেই মঙ্গল শোভাযাত্রার ঐতিহ্য পরিমন্ডলকে পহেলা বৈশাখে কাঁধে তুলে নিয়েছে বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদ। সংস্থাটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত। আর সে জন্যই তা ‘বঙ্গীয়’ হলেও উগ্র হিন্দুয়ানীর গন্ধ থেকে মুক্ত নয়। আর এই সংগঠনকে দোষ দিয়ে কোনও লাভ নেই। কারণ, আরএসএস-এর সাংস্কৃতিক ধ্যানধারণা ও চেতনাকেই এই বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদ এপার বাংলা তো বটেই, ভারতীয় সব বাঙালির কাঁধে চাপিয়ে দিতে চায়। তাই তারা মঙ্গলের দায়দায়িত্ব ঢাকার কবল থেকে আজাদ করে কলকাতায় নিয়ে এসেছেন। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকার তাদের সহায়তা না করলেও সহায়তা এসেছে মোদি-অমিত শাহের দিল্লি থেকে। এই বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদ যেহেতু ‘সনাতন ধ্যানধারণা’কে বাঙালি-চেতনার উপর চাপিয়ে দিতে চায়, তাই কেন্দ্রের সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনস্থ পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র এবার কলকাতায় আয়োজিত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’কে সফল করতে বড় ধরনের আর্থিক সাহায্য দিয়েছে। তবে আরএসএস অনুসারি আয়োজকরা জানাচ্ছেন, তাঁরা সাহায্য পেয়েছেন কিন্তু কারও কাছে সহায়তা চাননি। কারণ, সংঘ ঘনিষ্ঠ মানুষজন ও স্বয়ং সেবকরা দেশের নানা প্রান্ত থেকে বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদকে আর্থিক অনুদান পাঠিয়ে থাকে। তাই মোদিজি-অমিত শাহজিদের সহায়তা না পেলেও তাঁরা মূল সংগঠন আরএসএস থেকে নানাভাবে আর্থিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহায়তা পেয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন: পহেলা বৈশাখে এপারে ‘মঙ্গল’ আর ওপারে ‘আনন্দ’

এই বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদ মঙ্গলবার রবীন্দ্র সদনের বিপরীতে মোহর কুঞ্জ থেকে এই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বের করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরএসএস-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনুসারিবর্গ এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবকরা। এই শোভাযাত্রার সঙ্গে ছিল গৈরিক পতাকা, গেরুয়া কাপড়ে আচ্ছাদিত ঢোল এবং কীর্তনের করতার প্রভৃতি। শোভাযাত্রীরা যে পতাকা বহন করছিলেন সেই সব গেরুয়া-হলুদ পতাকার সঙ্গে আরএসএস-এর পতাকার দারুন মিল।
এছাড়া হিন্দুত্ববাদী মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা মারাঠারা যেভাবে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজকে আইকন বানিয়ে নিয়েছেন, বাঙালির সেই ধরনের আইকন কোথায়? নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে অবশ্যই বাঙালির আইকন বানানো যেত। কিন্তু তাঁকে আবার আরএসএস-এর ঘোরতর নাপস্ন্দ। তবে আরএসএস অনেক খুঁজে বাংলায় পেয়েছে রাজাধিরাজ মহারাজ বীর শশাঙ্ককে। তাই আরএসএস-এর সাংস্কৃতির সংগঠন বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদ মঙ্গলবার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’য় ছোট ছোট বালক-বালিকাদের হাতে একটি করে প্লাকার্ড তুলে দিয়েছে। আর তাতে এক ব্যক্তির ছবির নিচে লেখা আছে ‘জয় বঙ্গ, জয় শশাঙ্ক’। তবে শশাঙ্কের এই ছবিটি আগে আমরা দেখতে পাইনি। একজন ইতিহাসবিদ বললেন, এই ছবিটি যে শশাঙ্কের তার কোনও প্রমাণ নেই। আর ছবিটির সঙ্গে বাঙালিদের অবয়ব ও মুখচ্ছবির কোনও মিল নেই। কিন্তু বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’য় এই ছবিটিকেই বিশেষ মর্যাদা সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া এই সংগঠনটি দাবি করেছে, শশাঙ্ক নাকি ছিলেন বঙ্গাধে প্রবর্তক। বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদের ফেসবুকে লেখা হয়েছে, ‘বঙ্গাধের প্রবর্তক মহারাজা শশাঙ্কের রাজধানীর নামে মুর্শিদাবাদের নাম করতে হবে কর্ণসুবর্ণ’। এসব নিয়েই ছিল কলকাতার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। ছত্রে ছত্রে ছিল হিন্দুয়ানির রূপ-রস-গন্ধ। বাঙালি খ্রিস্টান বা বাঙালি মুসলিমরা এই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’য় যোগ দিতে পারবেন কি না, সেই সম্পর্কে অবশ্য বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদ বা তাদের নেতা প্রবীর ভট্টাচার্য কোনও কথা বলেননি। তবে ঢাকার পরিবর্তে কলকাতার শোভাযাত্রার মধ্যে ছিল মিলের থেকে বেশি গরমিল।
কিন্তু এখানেও আমরা রবীন্দ্রনাথেরই শরণ নিতে পারি। দুই দেশেরই জাতীয় সংগীত কবিগুরুরই লেখা। তাঁর একটি গান রয়েছে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর..’। দেখা যাচ্ছে, এখানে বাংলাদেশের ‘আনন্দের’ কথা আছে আর পশ্চিমবঙ্গের ‘মঙ্গলের’ও কথা আছে। তাই রবীন্দ্রনাথকে অনুসরণ করে বলি, থাক না আনন্দলোক সেইসঙ্গে না হয় থাকুক মঙ্গলালোক। এভাবেই কিন্তু রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে বাঙালি এগিয়ে চলবে।