১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আনিস কে ? কি তাঁর পরিচয় !

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২, বৃহস্পতিবার
  • / 6

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : আনিস কে ? কি তাঁর পরিচয় ? এখনও বেশিরভাগ মানুষের কাছেই তা অজানা। আনিস কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন? আদৌ কি তিনি কোনও রাজনৈতিক দল করতেন? স্পষ্ট করে এক কথায় কোনও উত্তর নেই । আসলে আনিস ছিলেন এক বর্ণময় চরিত্র । এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর । ইনসাফের পক্ষে জুলুমের বিরুদ্ধে সর্বদা সরব হয়েছেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়েছেন মজলুমের। কেউ মনে করেছে আনিস বামপন্থী আবার কেউ মনে করেছেন তিনি ডানপন্থী। তবে একথা ঠিক যে আনিস ছিলেন নিজের ভিতরেই এক বিপরীত চরিত্র। স্বল্প সময়ের মধ্যে সোশ্যাল সাইটে ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিলেন এই প্রতিবাদী ছেলেটি।

 

এনআরসি আন্দোলন হোক কিংবা সিএএ প্রতিবাদীদের সামনের সারিতে দেখা গিয়েছিল আনিসকে। জেলবন্দি উমর খালিদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন আনিস। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বলেছেন আনিস তাদের আন্দোলনের পাশে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আনিসের সম্পর্ক ছিল। বাম ডান সকলেই দাবি করছেন আনিস তাদের দলের লোক। শোনা গিয়েছিল আনিস নাকি আইএসএফ করতেন। যদিও আনিস যেমন বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তেমনই এক সময় ঘাস ফুল ও সংযুক্ত মোর্চার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন। আবার তিনি সংযুক্ত মোর্চার হয়ে প্রচারও করেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন এনআরসি’র বিরুদ্ধে জোড়াল গলায় আওয়াজ তুলেছিলেন আনিস তখন তৃণমূলের পাশে ছিলেন। আসলে এক কথায় বলতে গেলে আনিস সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তিনি দল বা সংগঠন দেখেননি। সেই কারণেই তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে এত ধোঁয়াশা।

 

আমতা থানার সারদা দক্ষিণ খান পাড়ায় আনিসের বাড়ি। এখনও প্লাস্টার হয়নি। বের হয়ে আছে ইট। এই কলকাতার শহুরেরা সেই অর্থে কেউই আনিসকে চিনতেন না। গ্রামের স্কুলে তাঁর পড়াশোনা। পরে ভর্তি হন বাগনান কলেজে। সেখান থেকেই স্নাতক হওয়ার পর আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়তে আসেন তিনি। পরে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় জার্নালিজম ও মাসকমিনিকেশন পড়ার কথা ছিল আনিসের এমনটাই জানা গিয়েছে।

 

ঘাস ফুলের অনেকেই দাবি করেছেন, আনিস আসলে তৃণমূল মনোস্ক ছিল। তবে এটাও ঠিক যে তৃণমূলের কিছু লোকের সঙ্গে আনিসের সুসম্পর্ক ছিল না। বছর চারেক আগে ঝামেলায় জড়িয়ে ছিলেন তিনি। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে পকসো আইনে দায়ের হয়েছিল মামলা। কিন্তু থেমে থাকার বান্দা ছিলেন না তিনি।

 

২০১৭-১৮ সাল নাগাদ প্রথম অনেকের দৃষ্টি পড়ে আনিসের উপর। তিনি সমাজ ও অধিকার কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এক সময় ছাত্র পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি। পরে এক সময় এসএফআইও করেছেন। ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট মহাজাতি সদনে ছাত্র পরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তবে ওই একই সময় অন্য নানা সংগঠনের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাকে। সেই ছবি ঘুরেছিল সোশ্যাল সাইটে। ‘নো ভোট টু বিজেপি’ প্রচারে প্ল্যাকার্ড হাতে বিজেপির বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।আসলে তাঁর ভিতরে একটা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ছিল। যে কারণে তিনি মাঝে মাঝেই বিজেপির মতোই বাংলার সরকারের বিরুদ্ধেও সরব হতেন।

 

২০১৭-১৮ সালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আন্দোলনে দানা বাঁধে তখন আনিস ছিলেন অন্যতম প্রধান কণ্ঠস্বর। আমতা একেবারে কলকাতার কাছে নয়। তাও শহুরে যেকোনও আন্দোলনে আনিস খানকে পাওয়া যেত। কেরলে যখন ব্যাপক বন্যা হয় তখনও আনিস ত্রাণের জন্য দৌড়-ঝাঁপ করেছিলেন।আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি শেখ সাহেব আলি বলেন ‘আমি তাকে ২০১৫ সাল থেকে চিনি। আমি আরবীতে এমএ করছিলাম এবং সে এমবিএ করছিল। ও একাই একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিল । কারো রক্তের প্রয়োজন হলে ও ঝাঁপিয়ে পড়ত । কারো হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হলেও সঙ্গে থাকত আনিস।’

 

গত বিধানসভা নির্বাচনে আনিসের আইএসএফএ যোগদানের সিদ্ধান্তটি বাম কর্মীদের একটি বড় অংশ ভালোভাবে নেননি । তাদের বক্তব্য ছিল আইএসএফ গঠন করেছেন একজন মুসলিম ধর্মগুরু। ভোট পেতে সিপিএম আইএসএফকে সমর্থন করলেও তারা এই দলটিকে পছন্দ করে না। কিন্তু আনিস সিপিএমের কথা না শুনে অবশ্য আএসএফে যোগ দিয়েছিলেন।এই বিপ্লব কিংবা আন্দোলন ছাড়া আনিসের জীবনের আর কি কিছু ছিল না। তাঁর জীবনে কি প্রেম ভালোবাসার কোনও জায়গা ছিল না ? তাঁর বন্ধু সাহেব জানান আসলে মেয়েদের থেকে আনিস শত হাত দূরে থাকতেন।

 

আনিসের পড়ার অভ্যাস একসময় ছিল মার্কস এবং লেনিন। পরে তা সুভাষ চন্দ্র বসুতে স্থানান্তিরত হয়ে যায় । চলচ্চিত্র সাহিত্য বা থিয়েটার কোনো বিশেষ আনিসের আলাদা করে আগ্রহ ছিল না । তিনি একটি বিকল্প খুঁজছিলেন । প্রান্তিক ও মেহনতি মানুষদের জন্য একটি সুদর পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখতেন এই তরুণ । সে কারণেই তো তিনি সব সময় বিপ্লবের স্লোগান দিতেন। তিনি আলাদা করে তাই কোনও দলের প্রতি তীব্র আনুগত্য প্রকাশ করতে পারেননি। রাজনীতির চোরাগলি সম্ভবত তাঁর পছন্দ ছিল না । সে কারণেই তাঁর এমন হত্যার পর বাংলার অনেক দল ও সংগঠন বলতে শুরু করেছে তিনি তাদের লোক।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

আনিস কে ? কি তাঁর পরিচয় !

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : আনিস কে ? কি তাঁর পরিচয় ? এখনও বেশিরভাগ মানুষের কাছেই তা অজানা। আনিস কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন? আদৌ কি তিনি কোনও রাজনৈতিক দল করতেন? স্পষ্ট করে এক কথায় কোনও উত্তর নেই । আসলে আনিস ছিলেন এক বর্ণময় চরিত্র । এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর । ইনসাফের পক্ষে জুলুমের বিরুদ্ধে সর্বদা সরব হয়েছেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়েছেন মজলুমের। কেউ মনে করেছে আনিস বামপন্থী আবার কেউ মনে করেছেন তিনি ডানপন্থী। তবে একথা ঠিক যে আনিস ছিলেন নিজের ভিতরেই এক বিপরীত চরিত্র। স্বল্প সময়ের মধ্যে সোশ্যাল সাইটে ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিলেন এই প্রতিবাদী ছেলেটি।

 

এনআরসি আন্দোলন হোক কিংবা সিএএ প্রতিবাদীদের সামনের সারিতে দেখা গিয়েছিল আনিসকে। জেলবন্দি উমর খালিদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন আনিস। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বলেছেন আনিস তাদের আন্দোলনের পাশে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আনিসের সম্পর্ক ছিল। বাম ডান সকলেই দাবি করছেন আনিস তাদের দলের লোক। শোনা গিয়েছিল আনিস নাকি আইএসএফ করতেন। যদিও আনিস যেমন বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তেমনই এক সময় ঘাস ফুল ও সংযুক্ত মোর্চার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন। আবার তিনি সংযুক্ত মোর্চার হয়ে প্রচারও করেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন এনআরসি’র বিরুদ্ধে জোড়াল গলায় আওয়াজ তুলেছিলেন আনিস তখন তৃণমূলের পাশে ছিলেন। আসলে এক কথায় বলতে গেলে আনিস সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তিনি দল বা সংগঠন দেখেননি। সেই কারণেই তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে এত ধোঁয়াশা।

 

আমতা থানার সারদা দক্ষিণ খান পাড়ায় আনিসের বাড়ি। এখনও প্লাস্টার হয়নি। বের হয়ে আছে ইট। এই কলকাতার শহুরেরা সেই অর্থে কেউই আনিসকে চিনতেন না। গ্রামের স্কুলে তাঁর পড়াশোনা। পরে ভর্তি হন বাগনান কলেজে। সেখান থেকেই স্নাতক হওয়ার পর আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়তে আসেন তিনি। পরে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় জার্নালিজম ও মাসকমিনিকেশন পড়ার কথা ছিল আনিসের এমনটাই জানা গিয়েছে।

 

ঘাস ফুলের অনেকেই দাবি করেছেন, আনিস আসলে তৃণমূল মনোস্ক ছিল। তবে এটাও ঠিক যে তৃণমূলের কিছু লোকের সঙ্গে আনিসের সুসম্পর্ক ছিল না। বছর চারেক আগে ঝামেলায় জড়িয়ে ছিলেন তিনি। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে পকসো আইনে দায়ের হয়েছিল মামলা। কিন্তু থেমে থাকার বান্দা ছিলেন না তিনি।

 

২০১৭-১৮ সাল নাগাদ প্রথম অনেকের দৃষ্টি পড়ে আনিসের উপর। তিনি সমাজ ও অধিকার কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এক সময় ছাত্র পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি। পরে এক সময় এসএফআইও করেছেন। ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট মহাজাতি সদনে ছাত্র পরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তবে ওই একই সময় অন্য নানা সংগঠনের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাকে। সেই ছবি ঘুরেছিল সোশ্যাল সাইটে। ‘নো ভোট টু বিজেপি’ প্রচারে প্ল্যাকার্ড হাতে বিজেপির বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।আসলে তাঁর ভিতরে একটা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ছিল। যে কারণে তিনি মাঝে মাঝেই বিজেপির মতোই বাংলার সরকারের বিরুদ্ধেও সরব হতেন।

 

২০১৭-১৮ সালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আন্দোলনে দানা বাঁধে তখন আনিস ছিলেন অন্যতম প্রধান কণ্ঠস্বর। আমতা একেবারে কলকাতার কাছে নয়। তাও শহুরে যেকোনও আন্দোলনে আনিস খানকে পাওয়া যেত। কেরলে যখন ব্যাপক বন্যা হয় তখনও আনিস ত্রাণের জন্য দৌড়-ঝাঁপ করেছিলেন।আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি শেখ সাহেব আলি বলেন ‘আমি তাকে ২০১৫ সাল থেকে চিনি। আমি আরবীতে এমএ করছিলাম এবং সে এমবিএ করছিল। ও একাই একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিল । কারো রক্তের প্রয়োজন হলে ও ঝাঁপিয়ে পড়ত । কারো হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হলেও সঙ্গে থাকত আনিস।’

 

গত বিধানসভা নির্বাচনে আনিসের আইএসএফএ যোগদানের সিদ্ধান্তটি বাম কর্মীদের একটি বড় অংশ ভালোভাবে নেননি । তাদের বক্তব্য ছিল আইএসএফ গঠন করেছেন একজন মুসলিম ধর্মগুরু। ভোট পেতে সিপিএম আইএসএফকে সমর্থন করলেও তারা এই দলটিকে পছন্দ করে না। কিন্তু আনিস সিপিএমের কথা না শুনে অবশ্য আএসএফে যোগ দিয়েছিলেন।এই বিপ্লব কিংবা আন্দোলন ছাড়া আনিসের জীবনের আর কি কিছু ছিল না। তাঁর জীবনে কি প্রেম ভালোবাসার কোনও জায়গা ছিল না ? তাঁর বন্ধু সাহেব জানান আসলে মেয়েদের থেকে আনিস শত হাত দূরে থাকতেন।

 

আনিসের পড়ার অভ্যাস একসময় ছিল মার্কস এবং লেনিন। পরে তা সুভাষ চন্দ্র বসুতে স্থানান্তিরত হয়ে যায় । চলচ্চিত্র সাহিত্য বা থিয়েটার কোনো বিশেষ আনিসের আলাদা করে আগ্রহ ছিল না । তিনি একটি বিকল্প খুঁজছিলেন । প্রান্তিক ও মেহনতি মানুষদের জন্য একটি সুদর পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখতেন এই তরুণ । সে কারণেই তো তিনি সব সময় বিপ্লবের স্লোগান দিতেন। তিনি আলাদা করে তাই কোনও দলের প্রতি তীব্র আনুগত্য প্রকাশ করতে পারেননি। রাজনীতির চোরাগলি সম্ভবত তাঁর পছন্দ ছিল না । সে কারণেই তাঁর এমন হত্যার পর বাংলার অনেক দল ও সংগঠন বলতে শুরু করেছে তিনি তাদের লোক।